Views Bangladesh Logo

ধর্ষকের সঙ্গে বিয়ে আইনগতভাবে বন্ধ হওয়া জরুরি

র্ষকের সঙ্গে বিয়ে দেয়ার রীতি বাংলাদেশে এক করুণ অপসংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে। মামলা থেকে বাঁচতে ধর্ষক ও ধর্ষকের পরিবার বিয়ের সমঝোতায় আসে। ধর্ষিতার পরিবারও বিষয়টি মেনে নেয় নারীটির মান বাঁচাতে। যদিও এ-বিয়ে সুখের তো দূরের কথা, অনেক ক্ষেত্রে নির্যাতন, বিচ্ছেদ ও হত্যাকাণ্ডে পর্যন্ত গড়ায়। বহু তথ্যপ্রমাণ ঘেটে দেখা গেছে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিয়ের পর স্বামী আর ওই নারীর খোঁজখবর নেন না, আপন সন্তানকেও মেনে নেন না এবং যে কোনো সুযোগেই তার প্রথম পদক্ষেপ থাকে নারীটিকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়ার। নারীটিরও তখন আর কোনো উপায় থাকে না।

গতকাল রোববার (২২ জুন) সংবাদমাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, অভিযুক্তের সঙ্গে বিয়ে হয়েছে এমন ভুক্তভোগী নারীরা সংসার তো করতে পারেনই-নি, উপরন্তু ধর্ষণের ফলে জন্ম নেয়া সন্তানের স্বীকৃতি নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। একজন ভুক্তভোগী হত্যারও শিকার হয়েছেন। সংশ্লিষ্ট আইনবিদ ও মানবাধিকার কর্মীরা জানিয়েছেন, ধর্ষণ ফৌজদারি অপরাধ। যে ব্যক্তির মাধ্যমে মেয়েটিকে অপমানিত হতে হলো তার সঙ্গে বিয়ে মর্যাদাহানিকর। ধর্ষকের শাস্তি না দিয়ে তাকে এভাবে যে ছাড় দেয়া হচ্ছে এটা আইনগত ফাঁকি।
সম্প্রতি ধর্ষণ মামলার বাদী নারীকে বিয়ে করেছেন গায়ক মাইনুল আহসান নোবেল। ধর্ষণ মামলায় গ্রেপ্তার গায়ক মাঈনুল আহসান নোবেলকে বিয়ে করার অনুমতি দেন আদালত। কারা কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রধান ফটকে তাদের বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়। ঘটনাটি সারা দেশে বেশ আলোচিত হয়।

এরকম আরও কিছু ঘটনা জানা গেছে, ধর্ষকের সঙ্গে আদালতে বা কারাগারে বিয়ে দিয়ে আসামিকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এসব ঘটনা নিঃসন্দেহে খারাপ উদাহরণ হয়ে থাকবে। কারণ, প্রথমত, ধর্ষকের সঙ্গে বিয়ে তো কোনো সমাধান নয়; দ্বিতীয়ত, এতে করে আইনিভাবেই একজন ফৌজদারি অপরাধীকে মুক্তি দেয়া হচ্ছে।

বর্তমানে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) আইন, ২০০৩-এ যদি কোনো পুরুষ কোনো নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করেন, তাহলে তিনি মৃত্যুদণ্ডে বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন এবং এর অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত হবেন। ধর্ষণের ঘটনায় ডিএনএ টেস্ট বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

আইন অনুযায়ী, যে সন্তানের জন্ম হবে, তার মা অথবা মায়ের দিককার আত্মীয়স্বজনের তত্ত্বাবধানে রাখা যাবে। এ সন্তান বাবা বা মা অথবা উভয়ের পরিচয়ে পরিচিত হবে। সন্তানের ২১ বছর বয়স পর্যন্ত ভরণপোষণের ব্যয় রাষ্ট্র বহন করবে। কন্যাসন্তানের ক্ষেত্রে বিয়ে না হওয়া পর্যন্ত এবং প্রতিবন্ধী সন্তান হলে সে যত দিন নিজে ভরণপোষণের যোগ্যতা অর্জন করতে না পারবে তত দিন সে রাষ্ট্রের কাছ থেকে সহায়তা পাবে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনেই বলা আছে, সন্তানের ভরণপোষণের জন্য সরকার ধর্ষকের কাছ থেকে অর্থ আদায় করতে পারবে। ধর্ষকের বিদ্যমান সম্পদ থেকে সেই অর্থ আদায় করা সম্ভব না হলে, ভবিষ্যতে তিনি যে সম্পদের মালিক বা অধিকারী হবেন সেই সম্পদ থেকে তা আদায়যোগ্য হবে।

অন্তর্বর্তী সরকার গত ২৫ মার্চ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ জারি করেছে। এতে ৯(খ) ধারা সংযোজন করে ‘বিয়ের প্রলোভনের মাধ্যমে যৌনকর্ম করিবার দণ্ড’ ধারা যুক্ত করে এটাকে ধর্ষণের মূল ধারা ৯ (ধর্ষণ, ধর্ষণজনিত কারণে মৃত্যু, ইত্যাদির শাস্তি) থেকে আলাদা করা হয়েছে। সরকারের যুক্তি, এতে করে ৯ ধারায় হওয়া গুরুতর ধর্ষণের মামলার জট কমবে ও দ্রুত বিচার করা সম্ভব হবে।

একটা কথা মনে রাখতে হবে, ধর্ষণসহ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে হওয়া মামলা কোনোভাবেই আপসযোগ্য নয়। অথচ বিয়ের মাধ্যমে ধর্ষক সহজেই ফৌজদারি অপরাধ থেকে মুক্তি পেয়ে যান। তার আবার আইনি বৈধতাও দেয়া হচ্ছে; কিন্তু অসংখ্য তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে দেখা যাচ্ছে এতে হীতে-বিপরীত হচ্ছে, নির্যাতিত নারী আরও নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন, অনেক সময় মৃত্যুমুখে পতিত হচ্ছেন। তাই এখন সময় এসেছে ধর্ষকের সঙ্গে বিয়ে আইগতভাবেই বন্ধ করার।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ