Views Bangladesh Logo

গ্যাস উত্তোলনে বাস্তবসম্মত উদ্যোগ জরুরি

গ্যাস সংকটের কারণে পুরোনো অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে বা বন্ধ হওয়ার উপক্রম, এরকম খবর আমরা ইতোমধ্যে জেনেছি। এর মধ্যে গ্যাস সংযোগ না দেয়ার কারণে নতুন অনেক কারখানা চালু হতে পারছে না এমন খবরও আজ সংবাদমাধ্যমে এসেছে। আজ ৩ জুলাই সংবাদমাধ্যমে প্রাপ্ত খবরে জানা যায়, ময়মনসিংহের ত্রিশালে ৭০০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি সুতার কারখানা করেছে লান্তাবুর গ্রুপ। কাজ শেষ হয়েছে ছয় মাস আগে; কিন্তু গ্যাস সংযোগ না পাওয়ায় কারখানাটি এখনো চালু করা যায়নি। যদিও তারা গ্যাস সংযোগের চাহিদাপত্র (ডিমান্ড নোট) পেয়েছে ২০২২ সালের নভেম্বরে।

গ্যাস সংযোগের অভাবে উৎপাদন শুরু করতে না পারা কারখানার উদাহরণ আরও আছে। পেট্রোবাংলা ও সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, তিতাসসহ ছয়টি গ্যাস বিতরণ কোম্পানির কাছে শিল্প সংযোগের এক হাজারের বেশি আবেদন জমা আছে। এর মধ্যে চারশর বেশি গ্রাহক সব প্রক্রিয়া শেষ করে সংযোগের (প্রতিশ্রুত সংযোগ) অপেক্ষায় রয়েছে। মানে হলো তারা গ্যাস সংযোগের জন্য টাকাও জমা দিয়েছে। বাকি ৬০০ কারখানা আবেদন করেছে। তবে প্রতিশ্রুতি পায়নি। যে চারশর বেশি গ্রাহক সব প্রক্রিয়া শেষ করে সংযোগের (প্রতিশ্রুত সংযোগ) অপেক্ষায় রয়েছে তাদের কেউ নতুন কারখানা, কেউ সম্প্রসারিত কারখানা, কেউ লোড বৃদ্ধির (সরবরাহের পরিমাণ) আবেদনকারী।

গ্যাস সংযোগের জন্য টাকা দিয়ে আবেদন করে মাসের পর মাস অপেক্ষায় বসে থাকার কারণ গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলো কারখানাগুলোতে গ্যাস সরবরাহ করতে পারছে না। বিগত সরকার দেশে গ্যাস উত্তোলনে নজর না দিয়ে আমদানির পথে হেঁটেছে। ২০২২ সালের দিকে বৈদেশিক মুদ্রার মজুত কমতে থাকায় গ্যাস আমদানি কঠিন হয়ে পড়ে। বিশ্ববাজারে দামও ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। জ্বালানি খাতে আওয়ামী লীগ সরকার বিপুল দেনা তৈরি করেছিল যা এখন অন্তর্বর্তী সরকার শোধ করছে। নতুন সরকার দেশে গ্যাস উত্তোলনে জোর দিয়েছে; কিন্তু সংকট দূর করা যায়নি। সব মিলিয়ে চলমান কারখানাগুলো যেমন সংকটে রয়েছে তেমনি নতুন সংযোগ চাইলেই দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। এতে ভুগছে শিল্পকারখানাগুলো।

গ্যাস সরবরাহ বাড়ানোর একমাত্র উপায় গ্যাস উত্তোলন বাড়ানো। গ্যাস উত্তোলনের কথা মুখে বললেও বাস্তবে তা জটিল একটি কাজ। গ্যাস উত্তোলনের সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, বছরে সর্বোচ্চ দুই থেকে তিনটি কূপ খননের অভিজ্ঞতা আছে বাংলাদেশের। চাইলেই কম সময়ে বেশি কূপ খনন করা সম্ভব নয়। ফলে ২০২৫ সালের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্ভব হবে না।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা আরও বলছেন, কূপ খননে একটি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) অনুমোদন করতেই লাগে এক বছরের বেশি। এরপর জমি অধিগ্রহণ ও যন্ত্রপাতি কিনতে লাগে কয়েক মাস। খনন শুরুর পর একটি অনুসন্ধান বা উন্নয়ন কূপ শেষ করতে লাগে অন্তত সাড়ে তিন মাস। আর সংস্কার কূপ খননে লাগে দুই মাস। কর্মকর্তারা বলছেন, মুখে অনেক কথা বলা যায়, পরিকল্পনা করা যায়। তবে বাস্তবায়ন করা কঠিন। একই সময়ে একাধিক বিদেশি কোম্পানিকে দিয়ে কাজ করাতে পারলে বেশি কূপ খনন করা সম্ভব।

আমরা বুঝতে পারছি গ্যাস উত্তোলনের বিষয়টি বাস্তবে বেশ কঠিন। তারপরও গ্যাস সরবরাহ বাড়ানো না গেলে প্রস্তুতকৃত কারখানাগুলো চালু করা যাবে না, চালু অনেক কারখানাও বন্ধ হয়ে যাবে। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে সামগ্রিক অর্থনৈতিক খাতে।

এ প্রসঙ্গে বলা যায়, দেশে নতুন যেসব গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়েছে কিন্তু উত্তোলন শুরু হয়নি সেগুলো থেকে উত্তোলনের উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। তা ছাড়া বন্ধ হয়ে যাওয়া খনি ও কূপগুলোর আরও গভীরে অনুসন্ধান করা যেতে পারে। আবার গ্যাস খাতের চুরি ও অপচয় কমিয়ে এনে রাজস্ব বাড়ানো সম্ভব। এটি যত দ্রুত করা সম্ভব হবে দেশের জন্য ততই মঙ্গল। এতে অর্থনীতির ওপর যে মূল্যস্ফীতির চাপ রয়েছে তা অনেকাংশে কমে আসবে। আর এটি করা সম্ভব না হলে বারবার আইএমএফের মতো প্রতিষ্ঠানের দ্বারস্থ হতে হবে, সেটি কোনোভাবেই দেশের জন্য মঙ্গলজনক হবে না। তাই অর্থনৈতিক অবস্থা বিচার করে বাস্তবসম্মত উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ