দুনিয়ার সবচেয়ে ভুখা মানুষের স্থান গাজা
গাজা এই মুহূর্তে পৃথিবীর সবচেয়ে ভুখা মানুষের স্থান। গাজার প্রতিটি মানুষ দুর্ভিক্ষে ভুগছেন। গাজাকে সম্পূর্ণ বিনাশ করে দেয়ার উন্মুত্ততায় মেতেছে ইসরায়েলি বাহিনী। তাদের শুধু ঘরবাড়ি থেকে বিতাড়িত করে খ্যান্ত হয়নি, তাদের এখন মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা চলছে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘ। গাজার এখন এমন অবস্থা যে সেখানে খাদ্য-সহায়তাও পৌঁছানো যাচ্ছে না। গত শুক্রবার জাতিসংঘ জানিয়েছে, খাদ্য পৌঁছাতে গিয়েও তারা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সাম্প্রতিক ইতিহাসে ফিলিস্তিনিদের সাহায্য করতে গিয়ে তাদের এতটা বেগ পেতে হয়নি।
জাতিসংঘের মানবিকবিষয়ক সমন্বয় অফিসের মুখপাত্র জেন্স লারকে বলেছেন, ‘আমাদের পর্যাপ্ত খাদ্য মজুত আছে গাজায় পৌঁছে দেয়ার জন্য; কিন্তু পদে পদে বাধা-বিপত্তি। তাদের ধারাবাহিক তীব্র আক্রমণের ফলে খাদ্য-সহায়তা পৌঁছানো যাচ্ছে না। এটা শুধু বর্তমান বিশ্বেই নয়, সাম্প্রতিক ইতিহাসেই এমন ঘটনা বিরল। যে কোনো যুদ্ধবিধ্বস্ত শহরে জাতিসংঘ খাদ্য-সহায়তা পৌঁছে দিতে পারে, গাজায় এখন সেটাও পারছে না।’
তিনি বলেন, ‘ইসরায়েলের কারিম আবু সারেম ক্রসিংয়ে যা ইসরায়েল অঞ্চলে কেরেম সালোম নামে পরিচিত, সেখানে ৯০০টি ত্রাণবাহী ট্রাক অপেক্ষা করছিল, প্রথমে ইসরায়েল ৯০০টি ট্রাক প্রবেশের অনুমতি দিলেও পরে ৬০০টিরও কম ট্রাক প্রবেশ করতে দেয় এবং বিতরণের জন্য খুব কম ত্রাণ সংগ্রহ করেছে।’
এক সপ্তাহ পরেই মুসলিম বিশ্ব উদযাপন করবে ঈদুল আজহা। গাজাবাসীর অবশ্য ঈদ নেই। গত রোজার ঈদও যেমন তারা পালন করতে পারেনি, কোরবানির ঈদও পারবে না। গত রোজার ঈদে সাহরির সময় গাজাবাসীর ওপর বোমা নিক্ষেপ করা হয়েছে। এবার কোরবানির ঈদে হয়তো তারা নিজেরাই কোরবানি হয়ে যাবে। শিশুদের মুখের দিকে তাকিয়ে পিতা-মাতা প্রতি মুহূর্তে আর্তনাদ করছে, ‘ঘরে আটা নেই, তেল নেই, কোনো খাবার নেই। বাচ্চাদের আমরা শুধু পানি খাওয়াচ্ছি।’
আল জাজিরার সাংবাদিক হানি মাহমুদ গাজা শহরে গিয়ে সরেজমিন তদন্ত করে দেখেছেন গত কয়েকদিন গাজায় একটুও সাহায্য পৌঁছায়নি। অনুমোদিত সাহায্যও না। মানুষগুলো কী খেয়ে বাঁচবে তা নিয়ে ইসরায়েলি বাহিনীর কোনো চিন্তাই নেই। তারা এবার গাজাবাসীকে না খাইয়েই মারতে চায়।
গাজায় খাদ্য ও জরুরি সহায়তা পৌঁছে দেয়ার জন্য তিন-চারটি পয়েন্ট আছে। বিশ্ববাসীর ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে ইসরায়েল জাতিসংঘকে অনুমতি দেয় এই পয়েন্টগুলোতে খাদ্য ও জরুরি সেবা পৌঁছে দিতে পারবে; কিন্তু তাও এখন অপ্রতুল। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এবারই সবচেয়ে করুণ পরিস্থিতি গাজাবাসীর।
গণমাধ্যমের বরাতে গাজাবাসীর মৃত্যু বিভীষিকা দেখছে বিশ্ববাসী। মাঝে মাঝে বিশ্ব বিবেক জেগে ওঠে, বিভিন্ন দেশে গাজাবাসীর পক্ষে কিছু আন্দোলন-সংগ্রাম হয়, মাস দুয়েক আগে যেমন হয়েছিল অনেক দেশে, এখন কিন্তু আবার সব চুপচাপ। ব্যাপারটা যেন এমন- আচ্ছা, একবার তো আন্দোলন করেছি, আর কত! ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে এখন সবাই প্রায় নিশ্চুপ। এই সুযোগে গাজাবাসীর ওপর ইসরায়েল চূড়ান্ত মরণকামড় বসিয়েছে। সূত্র: আল জাজিরা
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে