Views Bangladesh Logo

বিমান বিধ্বস্তে এখনো আতঙ্ক কাটেনি উত্তরাবাসীর

Manik Miazee

মানিক মিয়াজী

ত্তরার দিয়াবাড়ী এলাকায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ঘটে গেছে এক হৃদয়বিদারক বিমান দুর্ঘটনা। সোমবার দুপুর ১টার পর বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সরাসরি কলেজ ভবনের ওপর বিধ্বস্ত হয়। আইএসপিআর জানায়, এ ঘটনায় ২০ জন নিহত ও আহত হয়েছে শতাধিক, যাদের অধিকাংশই শিক্ষার্থী।

এ ছাড়া নিহত হয়েছেন বিমানের পাইলট লেফটেন্যান্ট তৌকির। আহত ১৭১ জন বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তবে, দুর্ঘটনার পরপরই এলাকাজুড়ে নেমে আসে শোক আর আতঙ্ক। চারপাশে ধোঁয়ার গন্ধে ভারী বাতাস, পোড়া ভবনের ধ্বংসাবশেষে ছড়িয়ে রয়েছে পোড়া পোশাক ও স্কুলব্যাগ। ঘটনার কয়েক ঘণ্টা কেটে গেলেও এখনো আতঙ্ক কাটেনি রাজধানীর উত্তরাবাসীর।

প্রত্যক্ষদর্শী ও নিরাপত্তাকর্মী আকবর হোসেন ভিউজ বাংলাদেশকে জানান, দুর্ঘটনার সময় স্কুল ছুটি হচ্ছিল। হঠাৎ বিকট শব্দ শুনে তিনি দেখেন, একটি বিমান নারকেল গাছ ভেঙে ভবনের ওপর আছড়ে পড়ে এবং সঙ্গে সঙ্গে আগুন ধরে যায়। নিচতলার অংশটি মাটির নিচে হওয়ায়, সেখানে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং অনেকে আটকা পড়ে যায়।

পাশের হোস্টেলের শিক্ষার্থী তানভির জানায়, সে দুর্ঘটনার পুরো দৃশ্য চোখের সামনে দেখেছে। তার ভাষায়, ‘সিনেমার সুটিংয়ের মতো মনে হচ্ছিল।’ বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ফুয়েল ট্যাংক বিস্ফোরিত হয়ে আগুন ছড়িয়ে পড়ে পুরো ক্লাসজুড়ে। কিছুক্ষণের মধ্যে সে ও তার বন্ধুরা ছুটে এসে উদ্ধারকাজে অংশ নেয়। তানভির ভিউজ বাংলাদেশকে বলে, সে বহু মরদেহ পড়ে থাকতে দেখেছে, কারও হাত নেই, কারও পা নেই, কেউ কেউ পুরোপুরি পুড়ে চেনার অযোগ্য হয়ে গেছে।

এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ বিমানবাহিনী থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়নি। তবে জানা গেছে, এটি ছিল একটি FT-7 BGI (701) মডেলের প্রশিক্ষণ বিমান, যা নিয়মিত মহড়ার অংশ হিসেবে উড়ছিল। কাছাকাছি এক্সক্যাভেটর গ্যারেজে কাজ করছিলেন চালক আপন আহমেদ। তিনি জানান, বিমানটিকে অস্বাভাবিকভাবে নিচু দিয়ে উড়তে দেখেছিলেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই বিকট শব্দ শুনে ছুটে গিয়ে দেখেন স্কুল ভবন থেকে ধোঁয়া আর আগুন বের হচ্ছে।

শিক্ষার্থী নাফিসা তাবাসসুম জানায়, ক্লাস চলাকালীন হঠাৎ একটি বিস্ফোরণের শব্দ হয়। পরে শিক্ষকরা জানান, ভবনে আগুন লেগেছে। আতঙ্কিত হয়ে সবাই দৌড়াতে শুরু করে। আগুন কিছুক্ষণের মধ্যেই নিয়ন্ত্রণে এলেও নিচতলায় আটকে পড়া অনেক শিক্ষার্থীকে বের করতে সময় লাগে। পঞ্চম ও ষষ্ঠ শ্রেণির বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী সে সময় ভেতরে আটকা পড়েছিল।

ফায়ার সার্ভিসের ৮টি ইউনিট, সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী ও পুলিশ ঘটনাস্থলে তাৎক্ষণিক উপস্থিত হয়ে উদ্ধারকাজ শুরু করে, যা চলে প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে। ঢাকা মহানগর পুলিশের এক সিনিয়র কর্মকর্তা ভিউজ বাংলাদেশকে জানান, শতাধিক শিক্ষার্থীকে নিরাপদে সরিয়ে নেয়া সম্ভব হয়েছে- যাদের প্রায় সবাই শিশু-কিশোর।

এদিকে ঘটনার পর দিয়াবাড়ী এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে ব্যাপক উত্তেজনা। অভিভাবকরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিমানবাহিনীর মহড়া ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলোর ওপর দিয়ে চালানোর বিষয় নিয়ে। এক অভিভাবক বলেন, ‘আমরা সন্তানদের নিরাপদে রাখার জন্য স্কুলে পাঠাই; কিন্তু যদি স্কুলই মৃত্যুফাঁদ হয়ে যায়, তাহলে যাব কোথায়?’

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ