Views Bangladesh Logo

আগুন-ভবনধসের শঙ্কা, রাজধানীর শতাধিক বিদ্যালয় ঝুঁকিপূর্ণ

আগুন-ভবনধসের শঙ্কায় হাজারো শিক্ষার্থীর জন্য ‘মরণফাঁদ’ এখন রাজধানীর অন্তত ১০৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। পুরোনো ও জরাজীর্ণ ভবন ও অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়েই শ্রেণিকক্ষে যাচ্ছে তারা আর আতঙ্কে থাকছেন অভিভাবকরা। নিয়মিত সংস্কার ও তদারকি এবং সঠিক নকশায় ভবন নির্মাণসহ স্কুল-কলেজে ফায়ার এক্সিট, ফায়ার অ্যালার্ম, জরুরি মহড়া ও নিরাপত্তা প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করার পরামর্শ নগর পরিকল্পনাবিদ ও নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের।

সাম্প্রতিক সমীক্ষা বলছে, ঢাকা মহানগরের ৬৬৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১০৬টিই ঝুঁকিপূর্ণ। মাইলস্টোন স্কুল ও কলেজে প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তে ভয়াবহ আগুনের পর এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধ ও ব্যবস্থাপনায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজস্ব সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এর আগেও বিভিন্ন কোচিং সেন্টার ও বেসরকারি স্কুলে আগুন কিংবা ভবনধসের ঘটনায়ও ক্ষয়ক্ষতি বেড়েছে আগাম প্রস্তুতির অভাবেই।

সন্তানের নিরাপত্তাহীনতায় আতঙ্কিত অভিভাবকরা
রাজধানীর বিভিন্ন বিদ্যালয়ে গেলে অভিভাবকরা বলেন, সাম্প্রতিক মাইলস্টোন কলেজ দুর্ঘটনার পর তাদের ভয়-উদ্বেগ এখন সীমাহীন। ‘প্রতিটি দুর্ঘটনার পর কিছুদিন হইচই চলে। তারপর আবারও নীরবতা, দুর্ঘটনা রোধ বা ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতে কার্যকর কোনো উদ্যোগ দেখা যায় না’ বলেও মন্তব্য করেন তারা। আমরা প্রতিদিন সন্তানকে স্কুলে পাঠাচ্ছি বুক কাঁপিয়ে, আর কর্তৃপক্ষ ‘তদন্ত হবে, ব্যবস্থা নেয়া হবে’ ধরনের আশ্বাসে দায়িত্ব এড়িয়ে যাচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন অভিভাবকরা। তারা প্রশ্ন তোলেন, ‘আর কত মৃত্যু হলে জেগে উঠবে কর্তৃপক্ষ?’।

ক্ষোভ প্রকাশ করে অভিভাবক মেহেদী হাসান বলেন, ‘আমরা সন্তানদের সুরক্ষায় সবকিছু করি। ভালো খাবার দেই, নিরাপদ পরিবেশে বড় করি। অথচ সন্তানকে স্কুলে পাঠালেই বুক কাঁপতে থাকে, শান্তি পাই না। এক মাইলস্টোন কলেজের ঘটনাই আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তাহীনতা কতটা বেড়েছে।’

একই সুরে শঙ্কা প্রকাশ করেন অভিভাবক মোছা. আসমা। তার কণ্ঠেও তীব্র ক্ষোভ, ‘আমার সন্তানের স্কুলে একটাই এক্সিট ব্যবস্থা। অথচ ছাত্রছাত্রী হাজারেরও বেশি। কোনো দুর্ঘটনা হলে বের হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। বাচ্চারা একে অন্যের সঙ্গে গাদাগাদি ও চাপা পড়ে মারা যাওয়ার শঙ্কা রয়েই যাচ্ছে। এই ভয় নিয়েই আমরা প্রতিদিন সন্তানকে সেখানে পাঠাচ্ছি।’

এখনো আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে মাইলস্টোন কলেজের শিক্ষার্থী শ্রাবণের পরিবার। দুর্ঘটনার দিন সৌভাগ্যক্রমে শ্রাবণ কলেজে যায়নি; কিন্তু সেই দুঃসহ স্মৃতি থেকে বের হতে পারেননি তারা। পরিবারের সিদ্ধান্ত, তারা আর ছেলেকে ওই কলেজে পড়াবেন না। শ্রাবণের এক আত্মীয় বলেন, ‘শিক্ষার চেয়ে বড় জীবন। আমাদের সন্তান যদি নিরাপদ না থাকে, তবে শিক্ষারই বা কী মানে?’।

দায়সারা কর্তৃপক্ষ, ফায়ার সার্ভিসের সীমাবদ্ধতা
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘আমরা নিয়মিত ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট চালিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন সিলগালা করছি, জরিমানাও করছি। সপ্তাহে অন্তত একদিন মহানগরীর প্রতিটি থানা বা উপজেলায় অভিযান চালানো হয়।’ তবে তিনি খোলাখুলি স্বীকার করেন সীমাবদ্ধতার কথা। ভিউজ বাংলাদেশকে তিনি বলেন ‘জনবল ও ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা কাজের গতি কমিয়ে দিয়েছে। আমাদের নিজস্ব নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট না থাকায় তাৎক্ষণিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারি না। ফলে অনেক প্রতিষ্ঠান দায় এড়িয়ে যায়।’

নগর পরিকল্পনাবিদ ও নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মানেই যেখানে জ্ঞানচর্চার পাশাপাশি নিরাপত্তার নিশ্চয়তা থাকা উচিত ছিল, সেখানে এখন ভর করছে আতঙ্ক ও অনিশ্চয়তা। রাজধানী ঢাকা দেশের প্রাণকেন্দ্র। আর এখানেই যদি শিক্ষা কেন্দ্রগুলো মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়, তবে আগামী প্রজন্মের নিরাপদ ভবিষ্যৎ কোথায়?’।

তাদের মতে, ‘যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থার পাশাপাশি যতোদিন না কঠোর তদারকি ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা কার্যকর হয়, ততোদিন শিক্ষার্থীদের জীবনের ওপর ঝুঁকি রয়েই যাবে।’ মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের যুগ্ম সচিব মো. বরাদ হোসেন চৌধুরী ভিউজ বাংলাদেশকে বলেন, ‘ঝুঁকিপূর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে আমরা অবগত নই। তবে তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ