নিউইয়র্কে নিহত পুলিশ কর্মকর্তা দিদারুল ইসলাম বীর হিসেবে সম্মানিত
যুক্তরাষ্ট্রের ম্যানহাটনে বন্দুকধারীর গুলিতে নিহত বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত পুলিশ কর্মকর্তা দিদারুল ইসলামকে মরণোত্তর বীর হিসেবে সম্মানিত করছেন নিউইয়র্কের নগর কর্মকর্তা ও নাগরিকরা। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে নিজের দায়িত্ব পালনে ৩৬ বছর বয়সী দিদারুলের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন নিউইয়র্কের রাজধানী নিউইয়র্ক সিটির মেয়র এরিক অ্যাডামসও।
সোমবার (২৮ জুলাই) স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ছয়টার দিকে ম্যানহাটনের মিডটাউন এলাকার ৩৪৫ পার্ক অ্যাভিনিউয়ের একটি বাণিজ্যিক ভবনে ঢুকে এলোপাতাড়ি গুলি চালান লাসভেগাসের যুবক শেন ডেভন তামুরা। তাকে বাধা দিতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগের (এনওয়াইপিডি) কর্মকর্তা দিদারুল ইসলাম। পরে আরও তিনজনকে হত্যার পর আত্মহত্যা করেন ২৭ বছর বয়সী আততায়ী তামুরা।
এনওয়াইপিডি জানিয়েছে, আক্রান্ত ভবনটিতে ব্ল্যাকস্টোন ও এনএফএলসহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা রয়েছে। হামলাকারী বুলেটপ্রুফ ভেস্ট পরে ও একটি সাইলেন্সার ও স্কোপযুক্ত আধুনিক এম৪ রাইফেল দিয়ে হামলা চালান। তিনি মানসিক রোগে ভুগছিলেন বলেও ধারণা পুলিশের।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) সংবাদ সম্মেলনে মেয়র এরিক অ্যাডামস বলেন, ‘দিদারুল সত্যিকার অর্থেই এই শহরের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। তিনি ছিলেন একজন সত্যিকারের নিউইয়র্কার। এমন একজন নিউইয়র্কার, যিনি সততা ও দায়িত্বের সঙ্গে নিজের পেশাগত কর্তব্য পালনের পাশাপাশি হৃদয় দিয়ে এই শহরকে ভালোবাসতেন। আমরা জানতে পেরেছি, তিনি বিশ্বাসী ও ঈশ্বরের প্রতি অনুগত ছিলেন এবং ধর্মনিষ্ঠ জীবনযাপন করতেন’।
মেয়র বলেন, ‘আমি তার পরিবারের সঙ্গে সোমবার রাতেই দেখা করেছি। বলেছি, তিনি একজন বীর ছিলেন এবং আমরা তাকে নিয়ে গর্বিত’।
মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া পৌরসভার উত্তর মাগুরা এলাকার সন্তান দিদারুল তার স্ত্রী এবং দুই ছোট ছেলে রেখে গেছেন। এনওয়াইপিডি’র কমিশনার জেসিকা টিশ জানান, পরিবারটি তৃতীয় সন্তানের প্রত্যাশা করছিল। দিদারুলের স্ত্রী বর্তমানে আট মাসের গর্ভবতী।আগামী কয়েকদিনের মধ্যে শেষকৃত্যের ব্যবস্থা ঘোষণা করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
পুলিশ কর্মকর্তা দিদারুল ইসলাম ২০২১ সাল থেকে ব্রঙ্কসের ৪৭তম প্রিসিঙ্কটে কর্মরত ছিলেন। নিষ্ঠা, সাহসিকতা এবং জনসেবার প্রতি গভীর অঙ্গীকারের জন্য তাকে স্মরণ করেছে নিউইয়র্ক পুলিশও। অফ-ডিউটি থাকলেও ইউনিফর্ম পরিহিত অবস্থায় বন্দুকধারীকে সাহসের সঙ্গে মোকাবিলা করায় দিদারুলের প্রশংসা করে বিবৃতিতে তারা বলেছে, ‘পুলিশ বিভাগকে তিনি তার সেরা পারফরম্যান্স দিয়েছেন। নিউইয়র্কের বাসিন্দাদের বাঁচাতে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন। তার মৃত্যু আমাদেরকে শোকস্তব্ধ করে দিয়েছে। তার এই আত্মত্যাগ কখনো ভোলা যাবে না। তার আত্মার শান্তি কামনা করছি এবং তার উত্তরাধিকারকে সব সময় সম্মান জানাব’।
এনওয়াইপিডি’র কমিশনার জেসিকা টিশ বলেন, ‘তিনি চরম আত্মত্যাগ করেছেন। ঠান্ডা মাথায় গুলি করে তাকে হত্যা করা হয়েছে, সেই ইউনিফর্মে যা এই শহরের জন্য তার অঙ্গীকারের প্রতীক। তিনি একজন বীর হিসেবে মৃত্যুবরণ করেছেন’।
কুইন্সের স্বেচ্ছাসেবী নিরাপত্তা সংস্থা শোমরিমসহ নানা কমিউনিটি ও সংগঠনও দিদারুলের পরিবার ও এনওয়াইপিডিকে সমবেদনা জানিয়েছে। বিবৃতিতে ইএমএস ফার্স্ট বলেছে, ‘কর্তব্য পালনের সময় এক বীর আত্মত্যাগ করেছেন’।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে