টাকা না থাকা তো অপরাধ নয়: আদালতে বিচারপতি খায়রুল হক
প্লট দুর্নীতির মামলার শুনানিতে সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক আদালতকে বলেছেন, টাকা না থাকা তো কোনো অপরাধ নয়। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (রাজউক) বলেই অবসরের পর প্লটের পুরো টাকা পরিশোধ করেছি।
মিথ্যা তথ্য ব্যবহার করে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ১০ কাঠার প্লট বরাদ্দ নেয়ার অভিযোগে দুদকের করা মামলায় বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) ঢাকার সিনিয়র বিশেষ জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক ইব্রাহিম মিয়ার কাছে তিনি এ বক্তব্য রাখেন।
এদিন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পুলিশ প্রহরায় তাকে আদালতে তোলা হয়। সাবেক প্রধান বিচারপতির মাথায় হেলমেট এবং বুকে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরা ছিল। আসামির কাঠগড়ায় বসতে তাকে একটি প্লাস্টিকের চেয়ার দেওয়া হয়। ১০টা ৫০ মিনিটে বিচারক এজলাসে প্রবেশ করলে তিনি চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ান। এরপর খায়রুল হককে গ্রেপ্তার দেখানোর বিষয়ে শুনানি শুরু হয়।
শুনানির এক পর্যায়ে তিনি আদালতের অনুমতি নিয়ে কথা বলেন। খায়রুল হক বলেন, সবাই যেভাবে প্লটের জন্য রাজউকে আবেদন করে, আমিও সেইভাবে করেছি। ২২/২৩ বছর আগের কথা, কারোরই মনে থাকার কথা না। সে সময় আমি লিখেছিলাম, আমার টাকা নেই। অবসর নেয়ার পরে টাকা দেব। টাকা না থাকা তো কোনো অপরাধ নয়। আমার এত টাকা ছিল না। সেই কারণে রাজউককে জানাই, অবসরের পরে টাকাটা দেব। অবসর নেয়ার পরে বাকি থাকা সব টাকা আমি পরিশোধ করি। এরপর আমাকে প্লট রেজিস্ট্রি করে দেয়া হয়।
তিনি আরও বলেন, আমার বয়স ৮১ বছরের বেশি। দুই সপ্তাহ আগে হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। আমি অসুস্থ। এগুলো বিবেচনা করে যা করার করবেন।
খায়রুল হক রানা প্লাজা ধ্বসের প্রসঙ্গও উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, সুলতানা কামালসহ তিনজনকে নিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে কমিশন গঠন করা হয়েছিল। আমাদের প্রতিমাসে বেতন ছিল সাড়ে ৯ হাজার ডলার। আমরা ১৮ মাস কাজ করেছি, কিন্তু কোনো টাকা নিইনি। কেন নিইনি? চেয়েছিলাম এই দেড় কোটি টাকা রানা প্লাজায় যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তারা পান। আমি কখনো কোথাও কোনোভাবে সুবিধাভোগী হইনি।
এরপর তার পক্ষে আইনজীবী মোনায়েম নবী শাহিন জামিন চেয়ে শুনানি করেন। দুদকের পক্ষে প্রসিকিউটর হাফিজুর রহমান জামিনের বিরোধিতা করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত জামিন আবেদন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
খায়রুল হক ২০১০ সালের ১ অক্টোবর থেকে ২০১১ সালের ১৭ মে পর্যন্ত প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পালন করেন। তার নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ ২০১১ সালের ১০ মে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায় দেন, যা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা অবৈধ ঘোষণা করে।
অবসরের পর ২০১৩ সালের ২৩ জুলাই তাকে তিন বছরের জন্য আইন কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। ওই মেয়াদ শেষে কয়েক দফা পুনর্নিয়োগ করা হয়। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ১৩ আগস্ট তিনি পদত্যাগ করেন।
গত ২৪ জুলাই ধানমন্ডির বাসা থেকে খায়রুল হককে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। জুলাই আন্দোলনের সময় ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে যুবদল কর্মী আবদুল কাইয়ুম আহাদ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে ওই রাতে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে