যুদ্ধের কোনো বিজয় নেই : মানবতার পক্ষে একটি বৈশ্বিক আহ্বান
ইরান-ইসরায়েল সংঘাত ও সাধারণ মানুষের নীরব যন্ত্রণা নিয়ে কিছু অনুভব: ‘যুদ্ধের সিদ্ধান্ত নেন কজন নেতা; কিন্তু তার মাশুল গোনে হাজারো সাধারণ মানুষ। শেষ পর্যন্ত হার মানবতারই হয়।’ আজকের এই বিশ্বে, যেখানে প্রযুক্তি আমাদের একে অপরের কাছে এনে দিয়েছে, বিজ্ঞানে অগ্রগতি মানব জীবনকে সহজ করেছে- সেখানে যুদ্ধ এখনো আমাদের সভ্যতার কালো দাগ হয়ে আছে। সম্প্রতি ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যকার উত্তেজনাকর সংঘাত আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে, যুদ্ধ এখনো মানবতার সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা। আমি একজন সাধারণ পর্যবেক্ষক, যুদ্ধবিষয়ক বিশেষজ্ঞ নই।
কিন্তু আমি গভীরভাবে লক্ষ্য করছি- যখন এক পক্ষ আক্রমণাত্মক কৌশলে মনোযোগ দেয়, তখন অপর পক্ষ প্রতিরোধমুখী কৌশল নেয়, অনেক সময় নতুন ধরনের অস্ত্র বা উপায়ে আত্মরক্ষা করে; কিন্তু কৌশল যাই হোক না কেন, সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন সাধারণ মানুষ- দুপক্ষেই। আধুনিক যুদ্ধ মানেই পরাজয় আজকের দিনে যুদ্ধের ‘বিজয়’ বলতে কিছু নেই। শহর ধ্বংস হয়, পরিবার ছিন্নভিন্ন হয়, ভবিষ্যৎ ভস্ম হয় রাজনীতি ও ক্ষমতার নামে। কজন নেতা সিদ্ধান্ত নেন; কিন্তু যন্ত্রণা বহন করেন লাখো মানুষ ও তাদের পরিবার- শিশু, নারী ও বৃদ্ধ সবাই। সর্বাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র, ড্রোন কিংবা ক্ষেপণাস্ত্রের যুগেও নিরাপত্তা পুরোপুরি নিশ্চিত করা যায় না।
প্রতিক্রিয়া হিসেবে রক্ষণাত্মক ব্যবস্থা নেয়া হয়; কিন্তু প্রতিটি প্রতিরোধই আরও এক ধাপ উত্তেজনা বাড়ায়। ফলে হিংসা ও ঘৃণার চক্র অনিবার্য হয়ে ওঠে। বিজয় নয়, চাই দ্বিপক্ষীয় সমাধান। এখন প্রশ্ন জাগে, এর চেয়ে ভালো কোনো পথ কি নেই? আছে। অবশ্যই আছে। আমরা বিশ্বাস করি, শান্তি দুর্বলতা নয়, এটি প্রজ্ঞা। সংলাপ পরাজয় নয়, এটি শক্তি। প্রতিটি যুদ্ধ একসময় আলোচনার মাধ্যমে শেষ হয়। তাহলে সেই আলোচনার টেবিলে আগে থেকেই বসা যায় না কেন? আমাদের নতুন মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে- যেখানে সহিংসতার বদলে সহনশীলতা, প্রতিশোধের বদলে আলোচনার জায়গা পায়। তরুণ প্রজন্মকে আমরা যুদ্ধ নয়, শান্তির সৈনিক হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।
মানবতার প্রতি এক আন্তরিক আহ্বান: বিশ্বের প্রতিটি শান্তিকামী মানুষকে আমরা আহ্বান জানাই- এই যুদ্ধের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলুন। কেবল যুদ্ধ শুরু হলে নয়, যুদ্ধের আগেই, উত্তেজনা বাড়ার সময়ই কথা বলুন। আপনার দেশের নেতাদের নৈতিকতা ও মানবতাবোধের পথে আহ্বান করুন। যে কোনো উদ্যোগকে সমর্থন করুন, যা সংঘাত বন্ধ করে, নিরপরাধ মানুষকে রক্ষা করে এবং মানবিক মর্যাদা রক্ষা করে।
আমাদের ভুলে গেলে চলবে না- যুদ্ধে শত্রুকে ধ্বংস করার মধ্যেই প্রকৃত শক্তি নেই, শক্তি আছে ঘৃণাকে নিরস্ত্র করার মধ্যে। তাই এখনই সময়- পরিবর্তনের। এ মুহূর্তটি যদিও ব্যথাময়; কিন্তু হোক একটি জাগরণ। হোক একটি সেই সময়, যখন বিশ্বের মানুষ পছন্দ করে শান্তি, ঔদ্ধত্য নয়; যুক্তি, ক্রোধ নয়; মানবতা, হিংসা নয়। কারণ যুদ্ধ হয় দুদেশের মধ্যে; কিন্তু রক্ত ঝরে মানবতার। এ থেকে মুক্তি চাই।
কে এম জয়নুল আবেদীন: কলাম লেখক ও অবসরপ্রাপ্ত প্রকৌশলী।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে