Views Bangladesh Logo

বিশ্ব নদী দিবস

রাষ্ট্র সংস্কারে ঐক্য নেই, নদী দখলে সর্বদলীয় ঐক্য আছে!

বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ- এ কথা আমরা ছোটবেলা থেকেই পাঠ্যপুস্তকে পড়ে এসেছি। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে প্রকাশিত ‘বাংলাদেশের নদনদীর খসড়া তালিকা-২০২৫’ থেকে এ তথ্য জানা যায় বর্তমানে বাংলাদেশে নদনদীর সংখ্যা ১ হাজার ২৯৪। তবে অনেক নদী শীতকালে শুকিয়ে যায় বলে বাংলাদেশের নদনদীর সঠিক সংখ্যা নির্ধারণ করা কঠিন। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)-এর গবেষণা মতে, বাংলাদেশে সারা বছর অন্তত ৪০০-৫০০ নদী সক্রিয় বা বহমান থাকে।

ঘনত্বের দিক থেকে বাংলাদেশেই নদীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি; কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত নানা অবহেলা, দখল, নদী খননের অভাবে অনেক নদী মরে যাচ্ছে। গবেষণায় বলা হয়েছে, এক সময় যেসব নদী কৃষি, জীববৈচিত্র্য ও স্থানীয় অর্থনীতির প্রাণ ছিল, আজ সেগুলোর অনেকটাই শুকিয়ে গেছে বা তাদের তলদেশে বিপুল পলি জমে পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। এই গবেষণা অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি সংকটে পড়েছে খুলনা, সাতক্ষীরা, রাজশাহী ও কুষ্টিয়া অঞ্চল। এসব জায়গায় দূষণ, পলি জমা এবং দ্রুত নগরায়ণের কারণে প্রাকৃতিক পানি প্রবাহ ব্যাহত হচ্ছে। ‘এই অবনতি কৃষি, জীববৈচিত্র্য এবং মানুষের জীবিকার ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। নদীগুলোর গুরুত্ব শুধু পরিবেশগত নয়, মানবিক জীবনধারার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত’, গবেষণায় উল্লেখ করা হয়।

এর মধ্যে আজ (২৮ সেপ্টেম্বর) সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত এক খবরে জানা যায়, সর্বদলীয় ঐক্যে দখল হয়ে যাচ্ছে বাঁকখালী নদী। কক্সবাজার শহরের ওপর দিক ঘেঁষে মহেশখালী চ্যানেল হয়ে বঙ্গোপসাগরে মিশেছে খরস্রোতা নদী বাঁকখালী। এ নদীর মোহনা ঘিরে গড়ে উঠেছে পর্যটননগরী কক্সবাজারের ব্যবসা-বাণিজ্য। অথচ সেই নদী এখন দখল-দূষণে সংকুচিত হয়ে সরু খালে রূপ নিচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর স্থানীয়দের আশা ছিল, বাঁকখালী নদী দখলমুক্ত হবে। তবে দখলবাজদের চোখ রাঙানিতে বাঁকখালী এখনো যেন বাকরুদ্ধ!

দখলদাররা নদীতীর ভরাট করে, প্যারাবন কেটে পাকা স্থাপনা তুলেছেন। গণঅভ্যুত্থানের পর কক্সবাজার শহরে নুনিয়ারছড়া থেকে মাঝিরঘাট পর্যন্ত প্রায় ছয় কিলোমিটার এলাকায় দখলবাজরাই সর্বেসর্বা। কস্তরঘাট এলাকায় সম্প্রতি উচ্ছেদ করা খালি জায়গায় নতুন করে স্থাপনা নির্মাণের চেষ্টা চালাচ্ছে তারা। এরই মধ্যে কয়েকটি জায়গায় টিনের ঘেরাও দেয়া হয়েছে। প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, নদীর জমি দখল করে বহুতল ভবন নির্মাণে পুরোভাগে রয়েছেন আওয়ামী লীগ, বিএনপি, আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতারা। উচ্ছেদ অভিযানে তারা রাজনৈতিক ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন। তাদের চাপেই প্রশাসন অভিযান বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছে।

আমরা জানি, বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে তেমন ঐক্য নেই। সংস্কার কমিশন নিয়েই তারা এক হতে পারল না; কিন্তু দখলের স্বার্থে স্থানীয় নেতারা ঠিকই এক হয়ে যাচ্ছেন। এর আগেও আমরা দেখেছি ভোলাগঞ্জের সাদা পাথর উত্তোলনে বিভিন্ন দলের স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা একযোগে কাজ করেছেন। চট্টগ্রামের পাহাড় কাটায়ও তারা এক হয়ে কাজ করেছেন। স্বার্থগত প্রয়োজনে রাজনৈতিক নেতারা ভাগাভাগি করেই ফল ভোগ করেন। মাঝখানে ভুক্তভোগী হন জনগণ। দেশের সম্পদ লুটপাটে ক্ষতি হয় প্রকৃতির।

গণঅভ্যুত্থানের পর আমরা আশা করেছিলাম দেশের অনেক ক্ষেত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে। তা হলো না। অন্তর্বর্তী সরকার আর অল্প কদিন ক্ষমতায় আছে। তাও আমরা আশা করব, দখলকৃত নদীগুলো উদ্ধারে অন্তর্বর্তী সরকার কোনো জরুরি উদ্যোগ গ্রহণ করবে। তা হলে পরবর্তী সরকারও অনুসরণ করতে বাধ্য হবে। আর যদি অন্তর্বর্তী সরকার তা না করে, পরবর্তী নির্বাচিত সরকারও হয়তো এই লুণ্ঠনের কাজ চালিয়ে যাবে। আমাদের নদীগুলো হত্যা করবে। যার পরিণাম হবে আমাদের সবারই ধ্বংস ডেকে আনা।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ