Views Bangladesh Logo

ব্যাংক সংস্কার নিয়ে আর নয় ‘নয়ছয়’

দেশের কিছু ব্যাংক জন্মলগ্ন থেকে তার আমানতের টাকা নিয়ে ‘নয়ছয়’ করে যাচ্ছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক অবশ্য পুরো ব্যাংক খাতের যে ‘নয়ছয়’ হয়ে গেছে, তা নিয়ে খুব দুশ্চিন্তাগ্রস্ত মনে হচ্ছে না। যদিও গণঅভ্যুত্থানের পরে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর এ খাতে অনেক আশার কথা বললেও সেই আশানুরূপ ফল এখনো দৃশ্যমান হয়নি। গত সপ্তাহে তিনি একটি সংবাদ মাধ্যমকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ব্যাংক সংস্কারে ২০ হাজার কোটি টাকা ঢালবে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, বাংলাদেশ ব্যাংক যেসব ব্যাংক সংস্কারে ২০ হাজার কোটি টাকা ঢালবে, সেসব ব্যাংক থেকে যে বা যারা বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ করেছেন তাদের কি করা হলো?


গত বছর, ২০২৪ সালের আগস্ট মাসে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেয়ার সময় বাংলাদেশের ব্যাংক খাত সংকট গভীরতার শিখরে পৌঁছে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিল। ব্যাংক খাতের নানা দুর্বলতা ও ঋণসংকট দেশের অর্থনীতির ওপর গুরুতর প্রভাব ফেলছিল এবং এটি দ্রুত সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা সামনে নিয়ে এসেছিল। সে সময়ে ব্যাংক খাত সংকট যেন কঙ্কালের মতো মাথার ওপর দাঁড়িয়ে থেকে দেশের আর্থিক স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তাই ব্যাংক খাতে ব্যাপক সংস্কারের প্রয়োজন বলে মনে করেছিলেন অর্থনীতিবিদ, ব্যাংকার, বাণিজ্য-সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ ও সরকারি কর্মকর্তারা। সে ক্ষেত্রে ব্যাংক সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে। সংস্কার কার্যক্রমও শুরু হয়েছে, তবে এর ফল মূল্যায়নের সময় এখনো না এলেও সংস্কারের সময় তো বয়ে যাচ্ছে।

গত মে মাসে সম্পন্ন হওয়া আন্তর্জাতিক নিরীক্ষায় ব্যাংক খাতে বড় ধরনের মূলধন ঘাটতির চিত্র উঠে আসে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত পাঁচটি ব্যাংকের- ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক এবং আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক-  সম্মিলিত মূলধন ঘাটতি ছিল প্রায় ৪৬ হাজার কোটি টাকা, যা পরবর্তীতে আরও বেড়েছে।

সে লক্ষ্যে সম্পদের মানের সমস্যার মূল কারণ খুঁজে বের করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটি ত্রিস্তরীয় প্রশাসনিক কাঠামো তৈরি করেছে, যার মধ্যে রয়েছে বাস্তবায়ন, প্রকল্প ব্যবস্থাপনা এবং স্টিয়ারিং কমিটি। পর্যবেক্ষক হিসেবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ), বিশ্বব্যাংক এবং এডিবির প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের একিউআর তদারকি কমিটিও গঠন করা হয়েছে; কিন্তু এসব কমিটির কার্মকাণ্ডও এখন পর্যন্ত আশাব্যঞ্জক নয়। কারণ বিপুল পরিমাণ টাকা যারা ব্যাংক থেকে লুট করেছেন সেই টাকা উদ্ধার কেন করা যাচ্ছে না!

ব্যাংক খাতে কিছু সংস্কার হয়েছে; দুর্বল ব্যাংকগুলোর ফরেনসিক অডিট সম্পন্ন করা হয়েছে এবং পাচার অর্থ উদ্ধারে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে; কিন্তু উদ্বেগের বিষয় বাংলাদেশ ব্যাংকের তহবিল সহায়তা সত্ত্বেও এখন পর্যন্ত কিছু দুর্বল ব্যাংক আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে পারেনি।

তাই আমরা মনে করি, ব্যাংক খাতে এ ধরনের অনিয়ম প্রমাণ করে ব্যাংকিং খাতে দুর্নীতি হচ্ছে। তাই এই নিরীক্ষা প্রতিবেদনের মাধ্যমে অনিয়মের বিষয়গুলো যথাযথভাবে আলোচনায় আনতে হবে। এরপর সেখানে দুর্নীতি ধরা পড়লে আইনি ব্যবস্থার মাধ্যমে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, দেশে অপরাধীকে বিচারের আওতায় আনার চেয়ে ছাড় দেয়ার মানসিকতাই দেখা যায় বেশি। তাই দেশের ব্যাংক ও আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে এ ধরনের প্রবণতা পরিহার করা বাঞ্ছনীয়। তাই আর্থিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে দ্রুত সংস্কার জরুরি।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ