'১০ বছর পর যমুনায় কোনো মাছই পাওয়া যাবে না'
একটা সময় বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই যমুনা নদীতে মাছ ধরার প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যেত। বৃষ্টির দিনগুলোতে জেলেদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও মহাসমারোহে নদীতে মাছ ধরতে নৌকা নামাত; কিন্তু এসব পার্বণ এখন যমুনা পাড়ের বাসিন্দারের কাছে গল্প হয়ে রয়ে গেছে।
এক সময় যমুনা নদীতে ইলিশ, বোয়াল, রুই, কাতলা, মৃগেল, বাঘাইড়, পাংগাস, বড় বাইম, চিংড়ি, কাজলি, বাতাসি, টেংড়া, গুলশা, বাইলাসহ নানা প্রজাতির মাছ পাওয়া যেত। আশ্বিন-কার্তিকে মাঝে মধ্যে দু-চারটা বড় বাঘাইড় মাছ এখনো যমুনায় জেলেদের জালে ধরা পড়ে; কিন্তু আগের মতো নদীর সেই প্রাচুর্য আর নেই।
যমুনা পাড়ের জেলেদের অভিযোগ, সরকারের সঠিক দেখভালের অভাবে একদিকে যেমন নাব্য হারিয়েছে এই নদী অন্যদিকে নষ্ট হয়েছে এর বাস্তুসংস্থান। ফলে নষ্ট হচ্ছে মাছের প্রজনন ক্ষেত্র, কমে গেছে স্বাভাবিক উপায়ে মাছের উৎপাদন। এই সংকটের মাঝেই নদীতে কারেন্ট জাল বা ব্যাটারিচালিত নৌকা ব্যবহার করে একশ্রেণির মাছ ব্যবসায়ী মাছের বিচরণ ক্ষেত্রও বিনষ্ট করছেন।
জেলেদের দাবি, এভাবে চলতে থাকলে আগামী বছর বছরই মাছশূন্য হয়ে পড়বে যমুনা নদী।
জেলেরা বলছেন, পরিবেশ অধিদপ্তর, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর এবং নদী রক্ষা কমিশন কর্তৃপক্ষ যদি এসব অসাধু ব্যবসায়ীকে প্রতিহত করতেন বা দুর্নীতি না করতেন তাহলে এই সংকট দেখা দিত না।
এ ব্যাপারে ভূঞাপুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোসাম্মৎ রিমা আক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি ভিউজ বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমি এখানে নতুন এসেছি। এসে ইলেক্ট্রো ফিশিংয়ের তথ্য জেনেছি। তবে যেসব অসৎ ব্যক্তি এই কাজটি করছেন তারা কেউই স্থানীয় নয়।’
রাতের অন্ধকারে একশ্রেণির অসাধু বহিরাগত মাছ শিকারি ট্রলার দিয়ে ইলেকট্রিক ফিশিং ও চায়না দোয়ারি জাল দিয়ে মাছ শিকার করছেন। এ ধরনের জেলেদের ধরার চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন এই মৎস্য কর্মকর্তা।
তিনি আরও বলেন, ‘ইতোমধ্যে অভিযান চালিয়ে বেশ কিছু চায়না দোয়ারি জাল জব্দ করে তা আগুনে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। তবে কে বা কারা এই দুয়ারি জাল দিচ্ছে এখনো চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি। তাদের ধরার চেষ্টা চলছে।’
তিনি আরও বলেন, উপজেলায় নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা রয়েছে এক হাজার ৪২১ জন এবং মোট পুকুর রয়েছে দুই হাজার ৭৮৯টি আর এর মোট আয়তন ৩৪৯ দশমিক ৭৬ হেক্টর। এর মধ্যে সরকারি পুকুর ১৬টি যার আয়তন ১৩৭ দশমিক এক হেক্টর এবং বেসরকারি পুকুর রয়েছে ২৭৭৩টি যার আয়তন ২১৩ হেক্টর।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, স্থানীয়ভাবে সবমিলিয়ে মাছের চাহিদা ৫ হাজার ৬৯৯ দশমিক ৭৮ টন থাকলেও বাৎসরিক উৎপাদন হচ্ছে ৩ হাজার ৫৭৮ দশমিক ৮৯ টন আর ঘাটতি রয়েছে ১ হাজার ২২০ দশমিক ৮৯ টন। তবে চলতি বছর মাছের উৎপাদন লক্ষমাত্রা ৪ হাজার ৫০০ টন।
এসব অসাধু ব্যবসায়ীকে প্রতিহত করতে তিনি স্থানীয় সাংবাদিকসহ পেশাগত জেলে, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের সহযোগিতার আহ্বান করেছেন।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে