প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য দক্ষ শিক্ষক নিয়োগের বিকল্প নেই
শিক্ষার ভিত্তি প্রাথমিক শিক্ষা। আর দেশের প্রাথমিক শিক্ষার অবস্থা কী তা একটি মাত্র তথ্যেই জানা যায়- দেশে অর্ধেক প্রাথমিক স্কুলেই প্রধান শিক্ষক নেই। আজ ১৬ জুলাই (বুধবার) সংবাদমাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের ৬৫ হাজারের বেশি অনুমোদিত পদের মধ্যে ৩৪ হাজারের বেশি পদই শূন্য। অর্থাৎ প্রায় ৫২ শতাংশ বিদ্যালয়ে নেই প্রধান শিক্ষক। একই সঙ্গে সাড়ে ২৪ হাজারের মতো সহকারী শিক্ষকের পদও ফাঁকা।
এর কারণ হিসেবে জানা যায়, প্রধান শিক্ষকের পদ ও জ্যেষ্ঠতা নিয়ে পুরোনো মামলা, প্রশাসনিক জটিলতা, নিয়োগ পরীক্ষায় বিলম্ব, পদোন্নতিতে ধীরগতির কারণে এ সংকট দীর্ঘ হচ্ছে। এর প্রভাব পড়ছে বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও শিক্ষা কার্যক্রমে। প্রান্তিক অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা বেশি ক্ষতির মুখে পড়ছে। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোয় প্রধান শিক্ষকের শূন্য পদে দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিয়োগের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। প্রধান শিক্ষক পদে পদায়নের পাশাপাশি নতুন নিয়োগেরও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
আমরা অনেক দিন ধরেই জানি, দেশের প্রাথমিক শিক্ষার অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। দিন দিন তা অবনতির দিকে যাচ্ছে। অথচ প্রাথমিক শিক্ষাই শিক্ষার মূলভিত্তি গড়ে দেয়। তাও আমাদের দেশের প্রাথমিক শিক্ষা অবহেলার শিকার হয়েছে মূলত সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্তের অভাবে। প্রাথমিক শিক্ষার মূল সংকট শুধু যে শিক্ষক স্বল্পতা তা-ই নয়, সবচেয়ে বড় সংকট আসলে দক্ষ শিক্ষকের অভাব এবং এর কারণ প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন এখনো খুব কম। যার কারণে মেধাবীরা প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক হতে চায় না।
সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ১৩তম গ্রেডে বেতন-ভাতা পান। তাদের মূল বেতন ১১ হাজার টাকা। এর সঙ্গে তারা অবস্থানভেদে বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা মিলিয়ে সর্বমোট ১৯ হাজার টাকা পেয়ে থাকেন। বেতনের হিসাবে বিশ্বের দেশগুলোর চেয়ে বহু পিছিয়ে বাংলাদেশের প্রাথমিকের শিক্ষকরা। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ৪৫তম। আর দক্ষিণ এশিয়ায় সপ্তম অবস্থানে রয়েছে।
শিক্ষকদের এরকম বেতন কাঠামো দিয়ে কোনোভাবেই প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন সম্ভব নয়। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর নাজুক অবস্থা দেখে মোটামুটি অবস্থা সম্পন্ন পরিবার এখনো সন্তানদের কিন্ডারগার্টেন বা বেসরকারি স্কুলগুলোতে পড়াতে আগ্রহী। তাতে পরিবারের খরচ বেড়ে যায় অনেক। এই বৈষম্য শিক্ষাক্ষেত্রে বিরাট এক নৈরাজ্য সৃষ্টি করেছে।
শুধু যদি দেশের প্রাথমিক শিক্ষার মান একটু বাড়ানো যেত, তাহলে দেশের উন্নয়ন অনেক দিকেই আরও ত্বরান্বিত হতো। কারণ দক্ষ জনশক্তি গড়ে ওঠার বিষয়টি শিক্ষার সঙ্গে সংযুক্ত। ১৯৯৩ সাল থেকে বাংলাদেশে প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়; কিন্তু তা কেবল অক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন মানুষ গড়ে তোলার জন্যই এখনো পর্যন্ত নিয়োজিত। শিক্ষার মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার বিষয়টির দিকে এখনো সরকারের ততটা মনোযোগ নেই।
সরকারি প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য দক্ষ শিক্ষক নিয়োগের বিকল্প নেই। তাই দেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দ্রুত প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার পাশাপাশি অন্যসব পদেও দক্ষ শিক্ষক নিয়োগদানের মাধ্যমে দ্রুত দেশের প্রাথমিক শিক্ষাকে উন্নত করুন।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে