আট মাস ধরে অকার্যকর জাতীয় মানবাধিকার কমিশন
বাংলাদেশে মানবাধিকার সুরক্ষার মূল প্রতিষ্ঠান হিসেবে ২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠিত জাতীয় মানবাধিকার কমিশন (এনএইচআরসি) কার্যত একটি নিষ্ক্রিয় এবং নেতৃত্বহীন প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। গত আট মাস ধরে অচল হয়ে আছে রাষ্ট্রীয় এই গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান।
গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, আইন কমিশনসহ বিভিন্ন কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্যরা পদত্যাগ করেন। এর মধ্যে অন্যান্য কমিশনগুলো পুনর্গঠন করা হলেও জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে (এনএইচআরসি) চেয়ারম্যান ও অন্যান্য সদস্য পদে কাউকেই নিয়োগ দেয়া হয়নি। অথচ, জাতিসংঘের বিধান অনুযায়ী এই কমিশন সব সময় সচল থাকতে হবে। পদ কখনোই শূন্য রাখা যাবে না।
এদিকে, এখন পর্যন্ত এই কমিশনে বিচারবহির্ভূত হত্যা, ধর্ষণ, সংখ্যালঘু নির্যাতনসহ নানা ধরনের পাঁচ শতাধিক অভিযোগ নিষ্পত্তিহীন অবস্থায় পড়ে আছে। এ সময়ে দেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতি দৃশ্যমান। Human Rights Support Society (HRSS)-এর তথ্যানুযায়ী, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর আগস্ট ২০২৪ থেকে ফেব্রুয়ারি ২০২৫ পর্যন্ত সময়ে দেশজুড়ে ১১৪টি মব সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটেছে, যাতে প্রাণ হারিয়েছেন ১১৯ জন এবং আহত হয়েছেন ৭৪ জন। গোপালগঞ্জে প্রশাসনের গুলিতে নিহত হয়েছেন অন্তত পাঁচজন। এ ছাড়া ধর্ষণ, খুন, অপহরণ ও ছিনতাইয়ের ঘটনা যেন প্রতিদিনের সঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ এসব ঘটনায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের পক্ষ থেকে কোনো বিবৃতি, প্রতিবেদন বা স্বতঃস্ফূর্ত তদন্ত দেখা যায়নি।
এই নেতৃত্ব শূন্যতা এবং নিষ্ক্রিয়তা এই কমিশনের কার্যকারিতা নিয়ে নতুন করে নানামুখী প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে। প্রশ্ন উঠেছে, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে সরকার জনগুরুত্বপূর্ণ মনে করছে কি না। এর আগে জানুয়ারি মাসে বিশিষ্ট আইনজীবী ড. শাহ্দীন মালিক মানবাধিকার কমিশনের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে সংবাদমাধ্যমে বলেন, 'চেয়ারম্যান-মেম্বার না থাকায় কমিশন কার্যত অচল। বস্তুত জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে সরকার জনগুরুত্বপূর্ণ মনে করছে না। জনগুরুত্বপূর্ণ মনে করলে এটাকে অনেক আগেই সক্রিয় করা যেত।'
এ প্রসঙ্গে সংবিধান সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আলী রীয়াজ ভিউজ বাংলাদেশকে বলেন, 'যে কোনো পরিস্থিতিতেই মানবাধিকার কমিশনকে কার্যকর রাখা অত্যন্ত জরুরি। তিনি বলেন, কমিশনকে অকার্যকর অবস্থায় রাখা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।' এদিকে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের পাশাপাশি দেশের অন্যান্য বেসরকারি মানবাধিকার সংস্থাগুলোর ভূমিকাও বর্তমান প্রেক্ষাপটে প্রশ্নবিদ্ধ। এক সময় যারা রাষ্ট্রীয় অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিবাদে সোচ্চার ছিলেন, তাদের অনেকেই এখন রহস্যজনকভাবে নীরব। এই নিস্পৃহতা জনগণের মাঝে হতাশা তৈরি করেছে।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করা নাগরিক সংগঠন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার ভিউজ বাংলাদেশকে বলেন, 'বেশ কয়েকমাস ধরে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ও তথ্য কমিশন কার্যত অকার্যকর হয়ে পড়েছে। এটি গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক ও অশনিসংকেত।' তবে এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম কেবল আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। মানবাধিকার ইস্যুতে তাদের কার্যক্রম আগের মতোই চলমান।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে