আইএসপিএবি’র সংবাদ সম্মেলন
নতুন নীতিমালায় ইন্টারনেট ব্যবসা জিম্মি হবে মোবাইল অপারেটর ও স্টারলিংকের কাছে: আইএসপিএবি
দেশের টেলিযোগাযোগ খাতের প্রস্তাবিত নতুন নীতিমালা বাস্তবায়িত হলে ইন্টারনেট সেবা খাত মোবাইল অপারেটর ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান স্টারলিংকের নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে বলে আশঙ্কা জানিয়েছে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি)। সংগঠনটির দাবি, এ নীতিমালা কার্যকর হলে গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেটের দাম অন্তত ২০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়বে এবং দেশীয় আইএসপি প্রতিষ্ঠানগুলো টিকে থাকতে পারবে না।
সোমবার (৩ নভেম্বর) রাজধানীর রাওয়া ক্লাব কমপ্লেক্সের এক রেস্টুরেন্টে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান আইএসপিএবি সভাপতি আমিনুল হাকিম। এ সময় সংগঠনের মহাসচিব নাজমুল করিম ভূঁইয়া এবং অন্যান্য কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
আমিনুল হাকিম বলেন, ‘খসড়া নীতিমালায় মনে হচ্ছে ‘দেশের চেয়ে মোবাইল অপারেটর বড়’। এ নীতিমালা তৈরি করা হয়েছে মোবাইল অপারেটরদের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে। এতে তাদের জন্য নতুন ব্যবসার সুযোগ তৈরি করা হয়েছে, অথচ দেশীয় আইএসপি প্রতিষ্ঠানগুলোকে নানা আর্থিক চাপে ফেলে দেওয়া হচ্ছে।’
তিনি জানান, নতুন খসড়া অনুযায়ী আইএসপিগুলোর লাইসেন্স অধিগ্রহণ ও নবায়ন ফি প্রায় পাঁচগুণ বাড়ানো হয়েছে। সরকারের সঙ্গে রাজস্ব ভাগাভাগির হারও দ্বিগুণের বেশি বৃদ্ধি পেয়ে ২১ শতাংশ থেকে বেড়ে ৪০ শতাংশে উন্নীত হচ্ছে। সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিলে (CSR) অবদান বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এর ফলে ক্ষুদ্র ও মাঝারি আইএসপি প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষে ব্যবসা চালিয়ে যাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়বে।
আইএসপিএবি সভাপতি বলেন, মোবাইল অপারেটরদের সরাসরি ফাইবার অপটিক কেবলের মাধ্যমে ফিক্সড ব্রডব্যান্ড সেবা দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে, যা তাদের লাইসেন্সের শর্তের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। কারণ তাদের লাইসেন্সে ‘সেলুলার সেবা’ প্রদানের অনুমতি থাকলেও কেবলনির্ভর ব্রডব্যান্ড সেবা দেওয়ার সুযোগ নেই। এই অনুমতি পেলে তিনটি মোবাইল অপারেটরের দখলে ইন্টারনেট বাজার চলে যাবে, ফলে প্রায় ২ হাজার ৪০০ দেশীয় আইএসপি প্রতিষ্ঠান অস্তিত্ব সংকটে পড়বে।
এ সময় তিনি স্টারলিংকের লাইসেন্স ফি নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, ‘ইলন মাস্কের স্টারলিংকের লাইসেন্স ফি নির্ধারণ করা হয়েছে মাত্র ১০ হাজার মার্কিন ডলার (প্রায় ১২ লাখ টাকা), অথচ দেশীয় আইএসপিদের জন্য এই ফি ধরা হয়েছে ২৫ লাখ টাকা। এতে দেশীয় উদ্যোক্তাদের প্রতি বৈষম্য তৈরি হচ্ছে এবং তাদের ব্যবসা বন্ধের পথে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।’
আমিনুল হাকিম দাবি করেন, স্টারলিংকের মাস্টার সেলার হিসেবে বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি ইতিমধ্যে কয়েকটি স্থানীয় আইএসপিকে রিসেলার হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘এভাবে দেশীয় আইএসপিদের ব্যবসা ধ্বংস করে স্টারলিংকের রিসেলার বানানোর চেষ্টা চলছে।’
তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘যদি এখনই এই খসড়া নীতিমালার বিরুদ্ধে অবস্থান না নেওয়া হয়, তবে ভবিষ্যতে দেশে ডিজিটাল শাটডাউনের মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।’
সংবাদ সম্মেলন থেকে দেশের সব রাজনৈতিক দলের প্রতি আহ্বান জানানো হয়, যেন তারা নতুন নীতিমালার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ অবস্থান নেয়।
আইএসপিএবি সভাপতি আরও জানান, তারা ইতিমধ্যে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির সঙ্গে যোগাযোগ করেছে এবং শিগগির আলোচনায় বসবে। তবে অতীত অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘এর আগেও আমাদের প্রস্তাব, দাবি ও সুপারিশগুলো গুরুত্ব পায়নি। এবারও যদি বিটিআরসি দেশীয় আইএসপিদের স্বার্থ রক্ষায় পদক্ষেপ না নেয়, তবে আমরা কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হব।’
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে