Views Bangladesh Logo

টেলিযোগাযোগ খাতের দেশীয় বিনিয়োগকারীদের পর্যবেক্ষণ

নতুন লাইসেন্সিং নীতিমালায় বিদেশে মালিকানাধীন কোম্পানির অর্থ পাচারের সুযোগ বাড়বে

টেলিযোগাযোগ খাতে নতুন গৃহীত লাইসেন্সিং নীতিমালা বিদেশি মালিকানাধীন কোম্পানিকে টাকা পাচারের বড় সুযোগ করে দেবে—এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন এ খাতের দেশীয় বিনিয়োগকারীরা। তারা নতুন নীতিমালা পর্যবেক্ষণ করে বলেছেন, এ নীতিমালা বাস্তবায়িত হলে টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি খাতে দেশীয় উদ্যোক্তাদের কোম্পানিগুলো অস্তিত্বহীন হয়ে যাবে এবং তিনটি মোবাইল অপারেটরের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হবে। এর ফলে গ্রাহক পর্যায়ে মোবাইল ইন্টারনেট সেবাসহ অন্যান্য সেবার দামও বেড়ে যাবে।

রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর একটি কনভেনশন হলে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় দেশীয় খাতের আইএসপি, আইআইজি, আইজিডব্লিউ এবং আইসিএক্স কোম্পানির উদ্যোক্তারা এ পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন।

টেলিকম অ্যান্ড টেকনোলজি রিপোর্টার্স নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ (টিআরএনবি) আয়োজিত এ মতবিনিময় সভায় ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন আইএসপিএবি, আইসিএক্স, আইজিডব্লিউ এবং আইআইজি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠনের পক্ষ থেকে পৃথক তিনটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়।

মতবিনিময় সভায় আইএসপিএবি সভাপতি আমিনুল হাকিম বলেন, এ নীতিমালা টেলিযোগাযোগ খাতে দেশীয় উদ্যোক্তাদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচিত হচ্ছে। এরই মধ্যে এ বিষয়ে পর্যবেক্ষণ সরকারের সংশ্লিষ্টদের জানানো হয়েছে। দ্রুতই বিষয়টি নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার কাছেও যাওয়া হবে। এরপরও সমাধান না হলে দেশীয় উদ্যোক্তাদের রক্ষায় আইনি পদক্ষেপেও যাওয়া হবে।

আইজিডব্লিউ অপারেটরস ফোরামের সভাপতি আসিফ রব্বানি বলেন, দায়িত্বশীল জায়গা থেকে দেশীয় উদ্যোক্তাদের মধ্যস্বত্বভোগী বলা হচ্ছে, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। প্রকৃতপক্ষে দেশীয় উদ্যোক্তা আইজিডব্লিউ অপারেটররা ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ রাজস্ব ভাগাভাগি করত সরকারের সঙ্গে। বিটিআরসি, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং সরকারের অন্যান্য সংস্থার কঠোর নজরদারির মধ্য দিয়ে দেশীয় উদ্যোক্তারা বিদেশ থেকে কল আনে এবং এর প্রতিটি পয়সার হিসাব দেয়। কিন্তু নতুন লাইসেন্সিং নীতিমালায় টেলিযোগাযোগ খাতে সব স্তরেই মোবাইল অপারেটরদের এককভাবে ব্যবসার সুযোগ রাখা হয়েছে, এর ফলে টেলিযোগাযোগ খাত থেকে বিদেশী মালিকানাধীন কোম্পানিগুলোর টাকা পাচারের আশঙ্কা বাড়বে। কারণ তাদের সামনে জবাবদিহিতা ও নজরদারির জায়গাগুলো কমবে এবং সহজ সুযোগ সৃষ্টি হবে।

আইজিডব্লিউ অপারেটরস ফোরামের চিফ অপারেটিং অফিসার মুশফিক মনজুর বলেন, লাইসেন্সিং পলিসি পুরো প্রক্রিয়াটি অস্বচ্ছ ও প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। প্রথমে যে বিশেষজ্ঞ প্যানেল গঠন করা হয়েছিল সেখানে একজন পাকিস্তানি নাগরিক ছিলেন, যিনি এর আগে গ্রামীণফোনের উচ্চপদে কর্মরত ছিলেন। প্যানেলের অন্যান্য সদস্যরাও পূর্বে কোনো না কোনোভাবে মোবাইল অপারেটরদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। পরে বিটিআরসি দুই-তিন মাস পর একটি খসড়া প্রস্তাব নিয়ে কর্মশালার আয়োজন করলে সেখানে বারবার জানতে চাওয়ার পর প্যানেলের বিশেষজ্ঞদের নাম ও পরিচয় জানানো হয়। এরপর যেসব মতামত দেশীয় উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছিল, সেগুলোও গ্রহণ করা হয়নি। ফলে পুরো নীতিমালা প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় মোবাইল অপারেটরদের নিবিড় সম্পৃক্ততা ছিল, যার কারণে নীতিমালাও মোবাইল অপারেটরদের স্বার্থই শুধু রক্ষা করেছে। আর দেশীয় তিল তিল করে গড়ে ওঠা দেশীয় উদ্যোক্তারা অস্তিত্বের সংকটে পড়েছে।

টিআরএনবি’র সাবেক সভাপতি ও ভিউজ বাংলাদেশ সম্পাদক রাশেদ মেহেদী বলেন, এ নীতিমালা শুধুমাত্র দেশীয় উদ্যোক্তাদের অস্তিত্বের প্রশ্নই প্রকট করে তোলেনি, বরং নীতিমালার প্রভাবে এরই মধ্যে মোবাইল ইন্টারনেটের দাম আগের তুলনায় অনেকখানি বেড়েছে। আগে যেখানে ৩০০ টাকার মধ্যে ৩০ দিন মেয়াদের প্যাকেজ ছিল, সেখানে এখন ৫০০ টাকার নীচে কোনো প্যাকেজ নেই। অসংখ্য প্যাকেজের নামে গ্রাহক প্রতারণার সহজ সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। নীতিমালার মাধ্যমে একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত হলে ২০০৮ সালের পূর্বের মতো আবারও ইন্টারনেটসহ টেলিযোগাযোগ খাতের সব ধরনের সেবার দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ার বড় আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন টিআরএনবি’র সভাপতি সমীর কুমার দে। স্বাগত বক্তব্য রাখেন টিআরএনবি’র সাধারণ সম্পাদক মাসুদুজ্জামান রবিন।

মতবিনিময় সভায় আরও বক্তব্য রাখেন এআইওবি প্রেসিডেন্ট ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মোস্তাফিজুর রহমান, আইআইজিবি সাধারণ সম্পাদক আহমেদ জুনায়েদ, আইএসপিএবির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি সাইফুল ইসলাম সিদ্দিক, সাধারণ সম্পাদক নাজমুল করিম ভূঁইয়া এবং এআইওবি নির্বাহী সদস্য আহমেদ উর রহমান রোমেল।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ