পুরো গাজা দখলের সিদ্ধান্ত নেতানিয়াহুর
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজা উপত্যকা সম্পূর্ণ দখলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং সেখানে সামরিক অভিযান আরও বিস্তৃত করার পরিকল্পনা করছেন বলে সোমবার সন্ধ্যায় দেশটির শীর্ষস্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে। এই পদক্ষেপকে গাজা নীতিতে একটি মৌলিক পরিবর্তনের সূচক হিসেবে দেখছে পর্যবেক্ষকরা।
ইসরায়েলি দৈনিক ইদিয়ত আহারনোত এক শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে জানায়, ‘আর পেছনে ফেরার উপায় নেই—আমরা গাজা পুরোপুরি দখলে নিচ্ছি।’ তিনি বলেন, ‘যেসব এলাকায় জিম্মিরা রয়েছে, সেখানেও অভিযান চালানো হবে। যদি সেনাপ্রধান এতে রাজি না হন, তাহলে তাকে পদত্যাগ করতে হবে।’
সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম কেএএন জানিয়েছে, নেতানিয়াহু সম্প্রতি এক বৈঠকে কয়েকজন মন্ত্রীর কাছে স্বীকার করেন, নিরাপত্তা মহলের আপত্তি সত্ত্বেও তিনি সামরিক অভিযান জোরদার করার সিদ্ধান্তে অটল রয়েছেন। বৈঠকে তিনি সরাসরি ‘গাজা দখল’ শব্দ ব্যবহার করেন। একই সঙ্গে চ্যানেল টুয়েলভ জানায়, এবার ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা ও শরণার্থী শিবিরগুলোও অভিযানের আওতায় আনা হবে।
ইদিয়ত আহারনোত আরও দাবি করেছে, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নেতানিয়াহুকে গাজায় পূর্ণমাত্রার অভিযান চালানোর জন্য সমর্থন দিয়েছেন। নেতানিয়াহুর ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানায়, ‘আমরা গাজা পুরোপুরি দখলের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি, এমনকি যেখানে জিম্মিরা রয়েছে, সেই এলাকাতেও অভিযান হবে।’
এদিকে, চ্যানেল টুয়েলভ জানায়, ইসরায়েলের সেনাপ্রধান এয়াল জামির তার নির্ধারিত যুক্তরাষ্ট্র সফর বাতিল করেছেন। যুদ্ধবিরতির আলোচনা ভেস্তে যাওয়া এবং অভিযান জোরদার হওয়ায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
গত ২৯ জুলাই হারেৎজ জানিয়েছিল, নেতানিয়াহু যুক্তরাষ্ট্র অনুমোদিত একটি পরিকল্পনা মন্ত্রিসভায় উত্থাপন করেছিলেন, যার মাধ্যমে গাজার কিছু অংশ পুনরায় দখলের প্রস্তাব ছিল। তবে পরবর্তীতে নেতানিয়াহু নিজেই এই পরিকল্পনা আরও বিস্তৃত করে তা বাস্তবায়নের দিকে এগিয়ে যান।
একজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নিরাপত্তা কর্মকর্তা কেএএন-কে জানান, ইসরায়েল একটি প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছানো জিম্মি বিনিময় চুক্তি থেকে নিজেই সরে এসেছে। তার ভাষায়, ‘হামাস কিছু শর্ত দিলেও, তফাতগুলো মেটানো সম্ভব ছিল—ইসরায়েল সেই সুযোগ নষ্ট করেছে।’
নেতানিয়াহুর এই অবস্থানকে ঘিরে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। বিরোধীদের অভিযোগ, তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করছেন রাজনৈতিক সুবিধা নেয়ার জন্য, রাষ্ট্রের বৃহত্তর স্বার্থে নয়।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েল গাজায় আগ্রাসন চালিয়ে আসছে, যাতে এ পর্যন্ত প্রায় ৬১ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু।
২০২৪ সালের নভেম্বরে, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত গাজায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং তৎকালীন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইয়োয়াভ গ্যালান্ট-এর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। একই সঙ্গে, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে একটি গণহত্যার মামলাও এখনো চলমান রয়েছে।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে