নেপালের ত্রিভুবন বিমানবন্দর ফের চালু
দুদিন বন্ধ থাকার পর নেপালের ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (টিআইএ) আবারও চালু হয়েছে। রাজধানী কাঠমান্ডুতে অবস্থিত দেশটির প্রধান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটি থেকে স্থগিত থাকা অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইটগুলোর উড্ডয়নও শুরু হয়েছে।
নিরাপত্তা কমিটির বৈঠকে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থায় পরিচালনার ছাড়পত্র মেলার পর বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় বিমানবন্দরটি ফের চালুর ঘোষণা দেয় বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ। আর বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) ভোর থেকে নিয়মিত ফ্লাইট পরিষেবা ফের চালুর ঘোষণা দিয়েছে নেপালের বুদ্ধ এয়ার।
২৬টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর নিষেধাজ্ঞা ও দুর্নীতির প্রতিবাদে জেন-জিদের নেতৃত্বে সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) সকালে শুরু হওয়া গণবিক্ষোভ দ্রুতই রূপ নেয় সরকার পতনের আন্দোলনে। দেশজুড়ে বিক্ষোভ, সহিংসতা-সংঘাত ছড়িয়ে পড়লে কারফিউ জারিসহ বিক্ষোভকারীদের ওপর কাঁদানে গ্যাস, জলকামান ও গুলি ছোড়ে পুলিশ। এতে ১৯ জন নিহত ছাড়াও দেশজুড়ে আহত হন কমপক্ষে ৩৪৭ জন বিক্ষোভকারী।
মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) কারফিউ ভেঙে ছাত্র-তরুণদের পাশে সাধারণ মানুষও রাস্তায় নেমে এসে সংসদ ভবনে ঢুকে ভাঙচুর চালানোর পর মূল ভবনে আগুন ধরিয়ে দেয়। রাজধানীতে মন্ত্রী এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ওপর হামলাসহ তাদের বাড়ি, গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন সরকারি ভবনসহ সরকারি সম্পত্তিতেও পাথর নিক্ষেপ, ভাঙচুর ও আগুন ধরিয়ে দেন বিক্ষোভকারীরা। বেশ কয়েকটি জেলায়ও মুখ্যমন্ত্রী, প্রাদেশিক মন্ত্রী এবং অন্য রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের বাড়িতে হামলা ও আগুন দেয়া হয়। বিক্ষোভকারীদের দেয়া আগুনে পুড়ে মারা যান নেপালের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ঝলনাথ খনালের স্ত্রী রাজ্যলক্ষ্মী চিত্রকর।
দুদিনের টানা এই আন্দোলনের মুখে মঙ্গলবার দুপুরে পদত্যাগে বাধ্য হন প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি ও রাষ্ট্রপতি রামচন্দ্র পাউডেল। তাদের পদত্যাগের পর ক্ষমতা গ্রহণ করে নেপালে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে কাজ করছে দেশটির সেনাবাহিনী। বুধবার বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত জারি করা দেশজুড়ে চলাফেরা, গণজমায়েত, র্যালি এবং সমাবেশে সাময়িকভাবে নিষেধাজ্ঞাও শেষ হয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনী বিভিন্ন স্থানে বিশেষ অভিযান চালাচ্ছে। তবে বৃহস্পতিবার ভোর ছয়টা থেকে দেশজুড়ে ফের কারফিউ জারি করেছে সেনাবাহিনী।
নিরাপত্তা বাহিনী জানায়, মঙ্গলবার রাত দশটা থেকে বুধবার সকাল দশটার মধ্যে কাঠমান্ডু এবং অন্য অঞ্চলে লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরে জড়িত থাকার অভিযোগে ২৭ জনকে গ্রেপ্তার এবং চুরি যাওয়া প্রায় ৩৭ কোটি তিন লাখ নেপালি রুপি উদ্ধার করা হয়েছে। অন্য অভিযানে, নিরাপত্তা বাহিনী কাঠমান্ডু থেকে ২৩টি এবং পোখরা থেকে ৮টিসহ মোট ৩১টি আগ্নেয়াস্ত্র, ম্যাগাজিন এবং গোলাবারুদ জব্দ করেছে।
শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে নিবন্ধনে প্রয়োজনীয় নতুন নিয়ম মেনে চলতে ব্যর্থ হওয়ার কথা বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর অ্যাক্সেস বন্ধ করে দেয় নেপাল সরকার। ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধেও ঘৃণামূলক বক্তব্য, ভুল তথ্য, জালিয়াতি এবং অন্যান্য অবৈধ কার্যকলাপ ছড়িয়ে দিতে ভুয়া অ্যাকাউন্ট তৈরিরও অভিযোগ আনেন কর্মকর্তারা।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে