Views Bangladesh Logo

প্রধানমন্ত্রীর পর নেপালের রাষ্ট্রপতিরও পদত্যাগ

দেশজুড়ে সহিংস বিক্ষোভ ও সংঘাত বাড়তে থাকায় প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি’র পদত্যাগের কিছুক্ষণ পরই পদত্যাগ করেছেন নেপালের রাষ্ট্রপতি রামচন্দ্র পাউডেলও।

একাধিক ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমগুলো জানিয়েছে, মঙ্গলবারের (৯ সেপ্টেম্বর) এই দুটি পদত্যাগ দেশটিকে রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক অনিশ্চয়তায় ফেলে দিয়েছে। ইন্ডিয়া টুডে জানায়, নেপালজুড়ে জেন-জিদের নেতৃত্বে দুদিনের টানা আন্দোলনের মুখে পর পর পদত্যাগ করতে বাধ্য হন প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি।

দ্য হিমালয়ান টাইমস জানিয়েছে, গণবিক্ষোভের মুখে দুপুরের দিকে প্রথমে ক্ষমতাসীন নেপালি কংগ্রেসের নেতা প্রধানমন্ত্রী ওলির পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেন রাষ্ট্রপতি পাউডেল। এর কিছুক্ষণ পর নিজেও পদত্যাগ করেন তৃতীয় নির্বাচিত এই রাষ্ট্রপতি।

২৬টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর নিষেধাজ্ঞা ও দুর্নীতির প্রতিবাদে সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) শুরু হওয়া বিক্ষোভ রূপ নিয়েছে সরকার পতনের আন্দোলনে। দেশজুড়ে বিক্ষোভ, সহিংসতা-সংঘাত ছড়িয়ে পড়লে সেদিনই কারফিউ জারিসহ বিক্ষোভকারীদের ওপর কাঁদানে গ্যাস, জলকামান ও গুলি ছোড়ে পুলিশ। এতে ১৯ জন নিহত ছাড়াও দেশজুড়ে আহত হন কমপক্ষে ৩৪৭ জন বিক্ষোভকারী, যাদের অনেকেই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত বল প্রয়োগের ব্যাপক সমালোচনার পর সোমবারই পদত্যাগ করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রমেশ লেখক। আর মঙ্গলবার পদত্যাগপত্র জমা দেন কৃষি ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী রাম নাথ অধিকারী এবং পানি সরবরাহমন্ত্রী প্রদীপ ইয়াদব।

মঙ্গলবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ওপর বিতর্কিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিয়েও আন্দোলন দমাতে পারছে না সরকার। সকাল থেকেই কারফিউ ভেঙে রাস্তায় নেমে আসেন সাধারণ মানুষ। তারা বিক্ষোভে ফেটে পড়েন এবং সংসদ ভবনে ঢুকে ভাঙচুর চালানোর পর মূল ভবনে আগুন ধরিয়ে দেন। মন্ত্রী এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বাড়িসহ সরকারি সম্পত্তিও ভাঙচুর ও আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন ছাত্র-তরুণ বিক্ষোভকারীরা।

ললিতপুরে বিক্ষোভকারীরা যোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তিমন্ত্রী পৃথ্বী সুব্বা গুরুংয়ের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেন। ভাইসেপতিতে উপ-প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী বিষ্ণু পাউডেলের বাসভবনেও হামলা চালানো হয়। ৬৫ বছর বয়সী পাউডেল বিক্ষোভকারীদের ধাওয়া ও হামলারও শিকার হন। প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রমেশ লেখকের পদত্যাগের একদিন পর তার বাড়িতেও হামলা চালানো হয়।

দুপুরের পর রাজনৈতিক নেতাদের বাসভবন লক্ষ্য করে ব্যাপক পাথর নিক্ষেপ এবং অগ্নিসংযোগে আন্দোলন আরও তীব্র আকার ধারণ করেছে। ক্ষমতাসীন নেপালি কংগ্রেস দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়েও আগুন ধরিয়ে দেয়া ছাড়াও পাথর ছোঁড়া হয়েছে বিরোধীদলীয় নেতা ও সিপিএন চেয়ারম্যান পুষ্প কামাল দাহালের বাসভবনেও। রাজধানী কাঠমান্ডু ছাড়াও ভাংচুর-অগ্নিসংযোগ চলছে দেশজুড়ে প্রাদেশিক মন্ত্রী এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের বাড়িতেও। কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা সত্ত্বেও বেশ কয়েকটি জেলায় মুখ্যমন্ত্রী, প্রাদেশিক মন্ত্রী এবং অন্য রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের বাড়িতে হামলা চালিয়ে যাচ্ছেন বিক্ষোভকারীরা।

শুক্রবার (৫ আগস্ট) নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে নিবন্ধনে প্রয়োজনীয় নতুন নিয়ম মেনে চলতে ব্যর্থ হওয়ার কথা বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর অ্যাক্সেস বন্ধ করে দেয় নেপাল সরকার। ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধেও ঘৃণামূলক বক্তব্য, ভুল তথ্য, জালিয়াতি এবং অন্যান্য অবৈধ কার্যকলাপ ছড়িয়ে দিতে ভুয়া অ্যাকাউন্ট তৈরিরও অভিযোগ আনেন কর্মকর্তারা।


মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ