Views Bangladesh Logo

টানা ঝড়-বন্যায় এশিয়ার ৪ দেশে প্রাণহানি ১ হাজার ছাড়াল

ক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চল কয়েক সপ্তাহের টানা ঝড়, ভারী বর্ষণ ও ধারাবাহিক ভূমিধসে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় এ ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে এখন পর্যন্ত প্রাণহানি দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১৪০ জনের বেশি। বহু মানুষ এখনও নিখোঁজ, আর বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া অসংখ্য এলাকায় উদ্ধারকারী দল পৌঁছাতে না পারায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠছে।

সোমবার (১ ডিসেম্বর) ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট প্রাবোও সুবিয়ান্তো উত্তর সুমাত্রার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করে জানান, অনেক গ্রাম এখনো যোগাযোগের বাইরে রয়েছে। হেলিকপ্টার ও বিমানযোগে জরুরি সহায়তা পাঠানো হচ্ছে। দেশটিতে বন্যা ও ভূমিধসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে কমপক্ষে ৬০৪; নিখোঁজ রয়েছেন আরও ৪৬৪ জন। পরিস্থিতি সামাল দিতে জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণার দাবি জোরালো হলেও, প্রেসিডেন্ট আশা প্রকাশ করেছেন যে সবচেয়ে কঠিন সময় পেরিয়ে এসেছে দেশ। তবে আবহাওয়া দপ্তর জাকার্তা ও আশপাশে আরও ভারী বর্ষণের সতর্কবার্তা দিয়েছে।

দেশজুড়ে সড়ক নষ্ট হয়ে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত। ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় সরকার দুইটি হাসপাতাল জাহাজ ও তিনটি যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করেছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী টিটো কারনাভিয়ান স্বীকার করেছেন, এমন বিপর্যয় মোকাবিলায় তাদের প্রস্তুতি যথেষ্ট ছিল না।

সাইক্লোন ‘ডিটওয়াহ’-এর কারণে শ্রীলঙ্কায় বন্যা–ভূমিধসে প্রাণহানি বেড়ে দাঁড়িয়েছে অন্তত ৩৬৬ জনে, আর নিখোঁজ ৩৬৭ জন। আটকে পড়াদের উদ্ধারে হেলিকপ্টার পরিচালনা করা হচ্ছে এবং আন্তর্জাতিক সহায়তা চেয়েছে দেশটি। উত্তর কলম্বোর লুনুভিলায় ত্রাণবাহী হেলিকপ্টার জরুরি অবতরণের সময় একজন পাইলট নিহত হন। প্রেসিডেন্ট অনুরা কুমারা দিশানায়েকে জরুরি অবস্থা জারি করে জানিয়েছেন—এটি শ্রীলঙ্কার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় দুর্যোগগুলোর একটি। ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও জাপান সহায়তা পাঠিয়েছে।

থাইল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চলে বন্যায় এখন পর্যন্ত অন্তত ১৭৬ জন প্রাণ হারিয়েছেন। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় ব্যর্থতার অভিযোগে দুই স্থানীয় কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। সেভ দ্য চিলড্রেন জানিয়েছে, ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ৭৬ হাজার শিশু স্কুলে ফিরতে পারছে না। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত সঙখলা প্রদেশে মারা গেছেন ১৩১ জন।

মালয়েশিয়ার পার্লিসে ভারী বর্ষণে সৃষ্ট বন্যায় আরও তিনজনের মৃত্যুর খবর মিলেছে।

নভেম্বরজুড়ে ফিলিপাইনে আঘাত হানা দুই দফা টাইফুনে মারা যান ২৪২ জন। পাশাপাশি সুমাত্রায় সংঘটিত অস্বাভাবিক ট্রপিক্যাল ঝড়ের প্রভাব ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার বন্যাকে আরও তীব্র করেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঝড়–বৃষ্টি ও তীব্র আবহাওয়ার ঘটনা দ্রুত বাড়ছে। আন্তর্জাতিক রেড ক্রস–রেড ক্রিসেন্টের এশিয়া–প্যাসিফিক পরিচালক আলেকজান্ডার মেথিও জানিয়েছেন—এখনই দেশগুলোকে উন্নত পূর্বাভাস ব্যবস্থা, নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্র, প্রকৃতিনির্ভর সুরক্ষা ব্যবস্থা এবং দুর্যোগ–সামাজিক নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে।

দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার এই বিস্তৃত মানবিক বিপর্যয় মোকাবিলায় সমন্বিত আন্তর্জাতিক সহায়তা জরুরি হয়ে উঠেছে—এমন মত বিশেষজ্ঞদের।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ