Views Bangladesh Logo

প্রথমবারের মতো মঙ্গলে বজ্রপাতের শব্দ রেকর্ড করল নাসা

ঙ্গল গ্রহের বুকে প্রথমবারের মতো বিদ্যুৎ চমকানোর ঘটনা রেকর্ড করেছে নাসা। তাও একবার-দুবার নয়, গত দুই বছরে অন্তত ৫৫ বার ঘটেছে এমনটি।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই গ্রহে বিদ্যুতের খেলাটা চলে ধুলোর সাহায্যে। লাল গ্রহে যখন বিশাল ধুলোঝড় বা ছোট ছোট ঘূর্ণিবাতাস তৈরি হয়, তখন ধুলোর কণাগুলো একে অপরের সঙ্গে প্রচণ্ড জোরে ঘষা খায়। এই ঘর্ষণের ফলে সেখানে স্থির তড়িৎ বা স্ট্যাটিক চার্জ তৈরি হয়। আগ্নেয়গিরির ছাইয়ের মধ্যে যেমন বিদ্যুৎ চমকায়, ব্যাপারটা ঠিক তেমন।

বিজ্ঞানীরা অনেক আগে থেকেই ধারণা করতেন মঙ্গলে এমনটা হতে পারে। কিন্তু কোনো প্রমাণ ছিল না। এবার পারসিভিয়ারেন্স রোভার সেই প্রমাণ হাতেনাতে ধরেছে।

ফ্রান্সের ইউনিভার্সিটি অব এইজ-মার্শেই এবং লস আলামস ন্যাশনাল ল্যাবরেটরির গবেষক ব্যাপটিস্ট চাইড এবং তার দল পারসিভিয়ারেন্স রোভারের সুপারক্যাম মাইক্রোফোনের প্রায় ২৮ ঘণ্টার অডিও রেকর্ড তন্ন তন্ন করে ঘেঁটে অদ্ভুত এক সংকেত পেয়েছেন। প্রথমে মাইক্রোফোনে একটা যান্ত্রিক ব্লিপ শব্দ শোনা যায়। এটা আসলে বিদ্যুতের কারণে তৈরি হওয়া বিদ্যুৎচৌম্বকীয় সংকেত। ঠিক তার পরপরই শোনা যায় খুব ক্ষীণ একটা শব্দ। যেন ছোট্ট একটা মেঘের গর্জন, বাতাসের মধ্যে বিদ্যুৎ খেলে গেলে বাতাস গরম হয়ে প্রসারিত হয়, তখনই এমন শব্দ হয়।

রেকর্ড করা ৫৫টি ঘটনার মধ্যে ৭টিতে এই শব্দ এবং সংকেত খুব স্পষ্টভাবে ধরা পড়েছে। বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত হওয়ার জন্য পৃথিবীতেও ঠিক একই রকম যন্ত্র দিয়ে পরীক্ষা করে দেখেছেন। ফলাফল বলছে, এটা মঙ্গলের বজ্রপাতই।

তবে পৃথিবীর বজ্রপাতের সঙ্গে মঙ্গলের বজ্রপাতে পার্থক্য আছে। হলিউড মুভিতে যেমন দেখায়, মঙ্গলে বিশাল বজ্রপাতে সবকিছু ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, বাস্তবে কিন্তু ব্যাপারটা তেমন নয়। পৃথিবীতে একটা বজ্রপাতে প্রায় ১০০ কোটি জুলের মতো শক্তি থাকে। আর মঙ্গলের এই ধুলোঝড়ের বিদ্যুৎ খুবই দুর্বল; মাত্র কয়েক ন্যানোজুল থেকে মিলিজুল শক্তির। এগুলো বিশাল কোনো বাজ পড়ার মতো ঘটনা নয়, বরং ছোটখাটো স্পার্ক বা স্ফুলিঙ্গের মতো।

তবে একটা ঘটনা ছিল বেশ শক্তিশালী। সেটা প্রায় ৪০ মিলিজুলের। বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, ওটা হয়তো রোভারের গা ঘেঁষে ধুলো ওড়ার কারণে রোভারের শরীরেই চার্জ জমে গিয়েছিল এবং সেখান থেকে মাটিতে ডিসচার্জ হয়েছে।

এই আবিষ্কার মঙ্গলের ভবিষ্যতের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। ভবিষ্যতে যখন মানুষ বা আরও উন্নত রোবট মঙ্গলে যাবে, তখন এই ধুলোঝড়ের বৈদ্যুতিক চার্জ যন্ত্রপাতির ক্ষতি করতে পারে। তাই এখন থেকেই বিজ্ঞানীরা সুরক্ষাব্যবস্থা নিতে পারবেন।

দ্বিতীয়ত, মঙ্গলের বায়ুমণ্ডলে এই বিদ্যুৎ কী ধরনের রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটায়, তা এখন বোঝা যাবে।

নেচার জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণা মঙ্গলের আবহাওয়ার মডেলে এক নতুন দিগন্ত খুলে দিল। লাল গ্রহটি যে একদমই মরে যাওয়া নিস্তেজ কোনো জায়গা নয়, ধুলোর ঝড়ে যে সেখানেও আগুনের ফুলকি ওড়ে—এটাই তার প্রমাণ!

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ