অর্থ অনর্থের মূল নয়, সকল জাগতিক ক্ষমতার উৎস
আমরা কথায় কথায় বলে থাকি, ‘অর্থই সকল অনর্থের মূল’ অথবা ‘টাকা-পয়সা হাতের ময়লা।’ এভাবে নানা প্রক্রিয়ায় আমরা অর্থকে অবমূল্যায়ন করে থাকি; কিন্তু বাস্তবতার আলোকে বিবেচনা করলে এটা স্বীকার করতেই হবে যে, অর্থ কোনোভাবেই অনর্থের মূল নয়। বরং অর্থ হচ্ছে সকল জাগতিক ক্ষমতার উৎস। বর্তমান যুগে অর্থ ছাড়া এক মুহূর্তও চলা যায় না। যারা বাস্তুববাদী তারা বলেন, ‘মানি ইজ সেকেন্ড গড।’ এ কথায় অতিরঞ্জন থাকলেও একেবারে মিথ্যে বলা যাবে না। কোনো কিছু পেতে হলে অর্থের প্রয়োজন। কাউকে কিছু দিতে হলেও অর্থের প্রয়োজন। মার্সিডিস গাড়ি অথবা বিএমডব্লিউ গাড়ির দাম কয়েক কোটি টাকা; কিন্তু সেই গাড়ি যতই মূল্যবান হোক না কেন স্বল্প মূল্যের জ্বালানি তেল ছাড়া সেই গাড়ি অচল।
ঠিক তেমনি মানুষ যতই গুরুত্বপূর্ণ অথবা প্রতিভাবান হোন না কেন তিনি যদি চলার মতো অর্থ রোজগার করতে না পারেন তাহলে তার কোনো মূল্য নেই। এ ধরনের মানুষ সমাজে উপেক্ষিত হন আর সংসারে হন অবহেলিত। অনেক প্রতিভাবান এমন মানুষও সমাজে প্রত্যক্ষ করা গেছে যারা শুধু সংসার চালানোর মতো অর্থ উপার্জন করতে না পারার কারণে পারিবারিক বন্ধন ছিন্ন করে আত্মহত্যার রাস্তা বেছে নিয়েছেন।
আমরা যে অর্থ নিয়ে এত উৎকণ্ঠিত সেই অর্থের কিন্তু নিজস্ব কোনো শক্তি নেই। অর্থ বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হয় বলেই তার এতটা গুরুত্ব। অতি প্রাচীনকালে পৃথিবীতে অর্থের কোনো প্রচলন ছিল না। মানুষ পণ্য বিনিময় প্রথায় বিশ্বাসী ছিল। তারা বাজারে গিয়ে একটি পণ্যের বিনিময়ে অন্য একটি পণ্য নিত। যেমন, কোনো ব্যক্তির হয়তো গরু আছে। তিনি সেই গরু বিনিময়ে চাল ক্রয় করতে চান। তাহলে বাজারে গিয়ে ঐ ব্যক্তিকে এমন এক ব্যক্তিকে খুঁজে বের করতে হবে যিনি চালের বিনিময়ে গরু ক্রয় করতে চান। দুই ব্যক্তির চাহিদা বা প্রয়োজন যখন মিলে যেত তখনই তারা পণ্য বিনিময় করতে পারতেন; কিন্তু এ ধরনের পণ্য বিনিময় প্রথায় সবচেয়ে বড় অসুবিধা ছিল দুজন ব্যক্তি চাহিদার মধ্যে সমন্বয় ঘটানো।
অনেক সময় বাজারে ঘোরাঘুরি এবং প্রচুর সময় ব্যয় করেও চাহিদাকৃত পণ্যের মিল খুঁজে পাওয়া যেত না। ফলে পণ্য বিনিময় সম্ভব হতো না। এই সমস্যা চলছিল অনেক দিন ধরেই; কিন্তু এক সময় মানুষ সমস্যা সমাধানে একটি পদ্ধতি উদ্ভাবন করে। তারা স্বর্ণ বা রৌপ্যকে বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করে। স্বর্ণ বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে ব্যবহৃত এবং চাহিদাকৃত ধাতু। স্বর্ণের চাহিদা নেই এমন দেশ বিশ্বে খুঁজে পাওয়া যাবে না। স্বর্ণ, রৌপ্য এবং ব্রঞ্চকে এক সময় বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হতো; কিন্তু স্বর্ণ বা এসব ধাতু সরাসরি পণ্যের বিনিময় মাধ্যম হিসেবে ব্যবহারের ক্ষেত্রে অসুবিধা ছিল। ব্যাপক ব্যবহার বা হাতবদলের ফলে এসব ধাতু ক্ষয়ে যেত। এতে স্বর্ণের মূল্য কমে যেত। এছাড়া স্বর্ণ বহনের ক্ষেত্রেও সমস্যা ছিল। স্বর্ণ চুরি হয়ে যাবার ভয় ছিল। এসব অসুবিধা বিবেচনায় বিকল্প ধাতু ব্যবহারের প্রবণতা প্রত্যক্ষ করা যায়। এক সময় উপমহাদেশে কড়ির বিনিময়ে পণ্য লেনদেন হতো।
যতদূর জানা যায়, উপমহাদেশে প্রতীকী কাগজি মুদ্রা চালু করা হয় মধ্যযুগের প্রতিভাবান সম্রাট মোহাম্মদ বিন তুঘলকের (তুঘলক) আমলে। সম্রাট মোহাম্মদ বিন তুঘলকের না উচ্চারিত হলেই আমাদের মনে একজন পাগল রাজার প্রতিচ্ছবি ভেসে ওঠে। যেমন, সেনাপতি মীরজাফরের নাম উচ্চারিত হলে বিশ্বাসঘাতক শব্দ ব্যবহারের প্রয়োজন হয় না। অর্থাৎ মীরজাফর হচ্ছেন বিশ্বাসঘাতকতার বিকল্প প্রতিশব্দ। ঠিক একইভাবে পাগলামির বিকল্প হিসেবে আমরা ‘তুঘলক’ শব্দটি ব্যবহার করে থাকি; কিন্তু আমরা যদি ভালোভাবে বিশ্লেষণ করি তাহলে বুঝতে পারব, মোহাম্মদ বিন তুঘলক কোনোভাবেই পাগল বা অস্থির মস্তিষ্ক মানুষ ছিলেন না। তুঘলক ছিলেন মধ্যযুগে ভারতীয় উপমহাদেশের সবচেয়ে প্রতিভাবান এবং দূরদর্শী একজন শাসক। তিনি সাম্রাজ্য পরিচালনাকালে যেসব পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন তা ছিল যুগের চেয়ে অগ্রগামী এবং বিস্ময়কর; কিন্তু আমলাদের অসহযোগিতার কারণে তার পরিকল্পনাগুলো ব্যর্থ হয়।
মধ্যযুগে একজন মানুষ কীভাবে স্বর্ণের পরিবর্তে কাগজি মুদ্রা চালুর কথা ভাবতে পারলেন? বারবার হস্তান্তরের কারণে স্বর্ণ ক্ষয়ে যেতে পারে এই ভয়ে মোহাম্মদ বিন তুঘলক রাষ্ট্রীয় কোষাগারে স্বর্ণ জমা রেখে তৎপরিমাণ কাগজি মুদ্রা বাজারে ছাড়েন। এতে আর্থিক লেনদেন বেশ সহজীকরণ হয়ে যায়; কিন্তু দেখা গেল, একটি দুষ্টচক্র নানাভাবে কাগজি মুদ্রা জাল করতে থাকে। বাজারে জাল টাকার উপস্থিতি এত বেড়ে যায় যে, পণ্য বিক্রেতারা কাগজি মুদ্রা গ্রহণে অস্বীকৃতি জানাতে থাকে। ফলে কাগজি মুদ্রার বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়ে যায়। আর সাধারণ মানুষকে বোঝানো হয় সম্রাট তাদের স্বর্ণের পরিবর্তে কাগজি নোট দিয়ে ঠকাচ্ছে; কিন্তু মোহাম্মদ বিন তুঘলক কখনো ভাবতে পারেননি মুদ্রা জালকারীরা এভাবে তার একটি চমৎকার উদ্যোগ ব্যর্থ করে দেবে। বর্তমানে আমরা উপমহাদেশে যে কাগজি মুদ্রা প্রত্যক্ষ করি তার প্রথম উদ্ভাবক ছিলেন মোহাম্মদ বিন তুঘলক। কাজেই তাকে পাগল বলা নির্বুদ্ধিতা ছাড়া আর কিছু নয়।
বর্তমানে বিশ্বব্যাপী প্রতীকী মুদ্রা হিসেবে কাগজি মুদ্রা চালু আছে। বিভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন নামে মুদ্রা চালু আছে। এসব মুদ্রার মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ বিনিময় কার্যক্রম সম্পাদিত হয়। তবে অন্য দেশের সঙ্গে বাণিজ্য বা বিনিয়োগ লেনদেনের ক্ষেত্রে অনেক সময়ই আলাদা মুদ্রার প্রয়োজন হয়। বিশ্বে আন্তর্জাতিক মুদ্রা বলে কোনো বিশেষ মুদ্রা নেই। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা মার্কিন ডলার তার ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতার কারণে অনেকটাই আন্তর্জাতিক মুদ্রার রূপ পরিগ্রহ করেছে। অধিকাংশ দেশেই মার্কিন ডলার গ্রহণ করা হয়। বিশ্বের মোট বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের প্রায় ৬০ শতাংশ মার্কিন ডলারে সংরক্ষিত হয়। আরও বিভিন্ন ধরনের মুদ্রা আছে অন্য দেশে কিন্তু কোনো মুদ্রাই মার্কিন ডলারের আধিপত্য খর্ব করতে পারেনি। মার্কিন ডলারের চেয়ে বিনিময় হার বেশি এমন মুদ্রাও আছে; কিন্তু তা সত্ত্বেও মার্কিন ডলারের গ্রহণযোগ্যতা একটুও হ্রাস পায়নি।
মুদ্রার বিনিময় হার দিয়ে একটি মুদ্রার গ্রহণযোগ্যতা বা শক্তিমত্তা নির্ধারিত হয় না। সংশ্লিষ্ট দেশটির অর্থনৈতিক শক্তি, মুদ্রার বিনিময় হারের স্থিতিশীলতা, গ্রহণযোগ্যতা ইত্যাদি নানা বিষয় বিবেচনায় একটি মুদ্রার গ্রহণযোগ্যতা বিরূপিত হয়। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত ২৭টি দেশের উদ্যোগে ২০০০ সালে যখন একক মুদ্রা ‘ইউরো’ চালু করা হয় তখন অনেকেই বলেছিলেন, এবার মার্কিন ডলারের আধিপত্য নিশ্চিতভাবেই ক্ষুণ্ন হতে চলেছে; কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। আগামীতেও মার্কিন ডলারের আধিপত্য খর্ব হবার আশঙ্কা নেই বললেই চলে।
এখন প্রশ্ন হলো, মুদ্রা একটি দেশের মানুষের যাপিত জীবনে কীভাবে প্রভাব বিস্তার করে থাকে? বা মানুষের জীবনে মুদ্রার গুরুত্ব কতটুকু? যেহেতু মুদ্রা হচ্ছে একটি দেশের বিনিময়ের সরকার স্বীকৃত মাধ্যম তাই এর গুরুত্ব কোনোভাবেই অস্বীকার করা যাবে না। বিভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন নামে মুদ্রা চালু রয়েছে। এসব মুদ্রা একটি দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে প্রশ্নাতীতভাবে বিনিময় কার্যক্রম সম্পাদনে সহায়তা করে। এমনকি বিদেশি মুদ্রার সঙ্গে অভ্যন্তরীণ মুদ্রা এক্সচেঞ্জ করে মানুষ তাদের অর্থের চাহিদা মেটাতে পারে। অর্থাৎ কারও কাছে মুদ্রা থাকলে তা বিকল্প পন্থায় বিশ্বব্যাপী ব্যবহার করা যায়। বাংলাদেশ স্বাধীনতার পর নিজস্ব মুদ্রা টাকা চালু করা হয়। কিছুদিন বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ সংরক্ষণ করা হয়েছিল ব্রিটিশ পাউন্ড দিয়ে। পরবর্তীতে মার্কিন ডলারের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ সংরক্ষণ করা হচ্ছে। বাংলাদেশে যেসব মুদ্রা আছে তার গুণগতমান বেশ ভালো। বাংলাদেশের এক টাকার ধাতব মুদ্রা ও কাগজি মুদ্রা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ এক হাজার টাকার কাগজি মুদ্রা চালু রয়েছে।
এক সময় দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে এক টাকা মূল্যমানের ধাবত মুদ্রা চালু ছিল। সাদা রংয়ের এই মুদ্রা বেশ জনপ্রিয় ছিল; কিন্তু এক সময় দেখা গেল, এই মুদ্রা ব্যাপকভাবে দেশের বাইরে পাচার হচ্ছে। তখন একটি নিউজ এজেন্সির মাধ্যমে সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিলাম। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছিল, মুদ্রার অভ্যন্তরীণ মূল্য যদি প্রদর্শিত মূল্যের চেয়ে বেশি হয় তাহলে মুদ্রা পাচার হবে; কিন্তু মুদ্রার অভ্যন্তরীণ মূল্য যদি প্রদর্শিত মূল্যের চেয়ে কম হয় তাহলে মুদ্রা পাচারের আশঙ্কা কম থাকবে। বাংলাদেশ সেই সময় রুপালি মুদ্রার পরিবর্তে ব্রঞ্চের লাল রংয়ের এক টাকার মুদ্রা চালু করে। অর্থ পাচার এখনো দেশের একটি জটিল সমস্যা হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে। কোনোভাবেই অর্থ পাচার ঠেকানো যাচ্ছে না। যারা অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন করেন তারা অভ্যন্তরীণ সেই অর্থ ব্যবহারের ক্ষেত্রে নানা অসুবিধায় পড়তে পারেন এই ভয়ে অর্থ বিদেশে পাচার করে থাকেন। অর্থ পাচার একটি দেশের অর্থনীতির জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এতে দেশের মানুষের দুর্ভোগ বৃদ্ধি পায়।
অর্থকে যতই অবজ্ঞা করা হোক না কেন, যতই তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা হোক না কেন অর্থ ছাড়া আমাদের এক মুহূর্তও চলে না। বর্তমান বাস্তবতা এটাই যে, অর্থের মাপকাঠিতে একজন মানুষের সামাজিক মূল্যায়ন হয়। যার অর্থ নেই তিনি যতই প্রতিভাবান হোন না কেন সমাজে তার তেমন কোনো মূল্য নেই। অর্থহীন দরিদ্র মানুষকে প্রতিনিয়ত সামান্য কিছু অর্থের জন্য বিত্তবানদের দুয়ারে ধর্ণা দিতে হয়। সামাজিক এবং পারিবারিক ক্ষেত্রে অর্থবিত্তহীন শুধু অবহেলার শিকার হয়ে থাকেন।
একটি বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সম্প্রতি তাদের গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, দেশে দারিদ্র্য মানুষের হার এখন ২৯ শতাংশ। ৮০ শতাংশ পরিবারের আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি। ফলে পরিবারগুলো ক্রমশ আর্থিক দুর্দশার মধ্যে পতিত হচ্ছে। কোনো পরিবারের মাসিক আয় যদি ব্যয়ের চেয়ে বেশি হয় তাহলে সেই পরিবারের আর্থিক সামর্থ্য বা প্রকৃত আয় বৃদ্ধি পায়। যতই মূল্যস্ফীতি ঘটুক না কেন পরিবারটিকে সমস্যায় পড়তে হবে না; কিন্তু পারিবারিক আয় যদি ব্যয়ের চেয়ে কম হয় তাহলে নিশ্চিতভাবেই পরিবারটি আর্থিক সংকটে পড়বে। তাই উন্নত দেশগুলোতে মজুরি কাঠামো এমনভাবে নির্ধারণ করা হয় যাতে মূল্যস্ফীতির চেয়ে মজুরির হার সবসময় বেশি থাকে।
একটি পরিবারের মার্কিন আয় যদি ২০০ মার্কিন ডলার হয় এবং ব্যয় যদি ১০০ মার্কিন ডলার হয় তাহলে পরিবারটি নিশ্চিন্তে দিন যাপন করতে পারবে। মূল্যস্ফীতি যদি ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পায় তাহলেও পরিবারটির কোনো অসুবিধা হবে না যদি তাদের মজুরির হার ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পায়; কিন্তু বাংলাদেশে এর উল্টোটিই ঘটছে। যেমন, ২০২৪ সালের নভেম্বর মাসে বাংলাদেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার ছিল ১১ দশমিক ৩৮ শতাংশ। একই সময়ে মজুরি বৃদ্ধির হার ছিল ৮ দশমিক ১০ শতাংশ। অর্থাৎ একটি পরিবারের আয় যদি হয় ৮ টাকা ১০ পয়সা তাহলে সেই সময় মূল্যস্ফীতির হার ছিল ১১ দশমিক ৩৮ শতাংশ। অর্থাৎ আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি ছিল ৩ দশমিক ২৮ শতাংশ। এই পরিস্থিতিতে পরিবারটি নিশ্চিতভাবেই আর্থিক সংকটের মধ্যে পতিত হবে। একই বছর ডিসেম্বর মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার ছিল ১০ দশমিক ৮৯ শতাংশ। আর মজুরি বৃদ্ধির হার ছিল ৮ দশমিক ১৪ শতাংশ। অর্থাৎ মজুরি বৃদ্ধির হার কোনোভাবেই মূল্যস্ফীতিকে অতিক্রম করতে পারছে না। এটাই মানুষের দুর্ভোগের কারণ।
আমরা মাঝে মাঝেই পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পারি, ব্যাংকিং সেক্টরের বাইরে মানুষের হাতে টাকার পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটা আসলে সত্যি নয়। মানুষ তাদের নিত্যদিনের অর্থের চাহিদা পূরণের জন্য ব্যাংকে সঞ্চিত অর্থ উত্তোলন করছে। এ কারণেই ব্যাংকে আমানতের পরিমাণ হ্রাস পাচ্ছে। কিছু মানুষ আছে যারা উচ্চ মূল্যস্ফীতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তাদের আয় বৃদ্ধি করতে পারেন; কিন্তু নির্দিষ্ট আয়ের মানুষগুলো এটা করতে পারে না। ফলে তারা বিপাকে পড়ছেন।
বাংলাদেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এখন বড়ই অসহায় অবস্থার মধ্যে রয়েছেন। তারা উচ্চ মূল্যস্ফীতির কষাঘাতে জর্জরিত হয়ে পড়েছেন। অনেকেই তাদের সাংসারিক ব্যয় কমানোর জন্য প্রয়োজনীয় পণ্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে কাটছাঁট করছেন। এই অবস্থা দীর্ঘদিন চলতে থাকলে আর্থিক বিপর্যয় নেমে আসতে বাধ্য। আমাদের এ ব্যাপারে সতর্ক হতে হবে।
এম এ খালেক: অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল ম্যানেজার, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক পিএলসি ও অর্থনীতি বিষয়ক লেখক।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে