Views Bangladesh Logo

বছরে ২১৮ বিলিয়ন টাকার খাদ্যের যোগান, তবু অনিশ্চয়তায় বিএমডিএ

Press Release

প্রেস রিলিজ

রেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) সরবরাহ করা পানি থেকে সারাদেশে বছরে প্রায় ২১৮ বিলিয়ন টাকার খাদ্যের চাহিদা পূরণ হয়। অথচ এ প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যৎ নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। এটি বন্ধের ব্যবস্থা হলে শুধু দেশে খাদ্য সংকটই নয়, বিশ্ব রাজনীতিতেও বড় ধরনের রাজনৈতিক দেউলিয়ায় পরিণত হবে বাংলাদেশ।

বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়।


বিজ্ঞপ্তিতে রাজশাহী মহানগর বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি মো. সোহরাব হোসেন শেখ বলেন, ৫ আগস্ট রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের পর কৃষি মন্ত্রণালয় উত্তরাঞ্চলের জনগুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান বিএমডিএর সব ধরনের প্রকল্প বরাদ্দ বন্ধ রেখেছে।

তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, প্রতিষ্ঠানটিকে ব্যর্থ করার চেষ্টা চলছে। এমনকি একে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) আওতায় একীভূত করার উদ্যোগও নেয়া হচ্ছে। এতে জনপ্রতিনিধি ছাড়াই প্রতিষ্ঠানটি পরিচালিত হবে এবং চেয়ারম্যান পদও শূন্য রাখা হবে। উত্তরাঞ্চলে বিএডিসি ও বিএমডিএর অর্জন তুলনা করলে বোঝা যাবে, আসলে কী ঘটতে পারে।

তিনি জানান, বিএমডিএর নির্বাহী পরিচালক অপসারণের বিষয়টি বর্তমানে আদালতে বিচারাধীন। একই বিষয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটির শুনানিতে প্রতিষ্ঠানটিকে অন্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে একীভূত করার সুপারিশ স্বাক্ষীদের কাছ থেকে লিখিয়ে নেয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। যদিও তদন্তে ঘটনার মূল কারণ উদঘাটন হয়নি।

সোহরাব হোসেন শেখ বলেন, ১৯৮৫ সালে বরেন্দ্র সমন্বিত এলাকা উন্নয়ন প্রকল্প (বিআইএডিপি) থেকে জনবল নিয়ে বিএমডিএর কার্যক্রম শুরু হয়। ১৯৯২ সালে এর নাম পরিবর্তন করে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ রাখা হয়। ২০১৮ সালে এ সংক্রান্ত অধ্যাদেশ সংসদে পাস হয়। তখন থেকেই দেশের খাদ্য উৎপাদনে মূখ্য ভূমিকা রাখছে প্রতিষ্ঠানটি।

তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানটির কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী অপরাধ করলে তার শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু ব্যক্তির অপরাধের দায়ে প্রতিষ্ঠান বা দেশকে শাস্তির আওতায় আনা রাষ্ট্রবিরোধী অপরাধের সমান। বিএমডিএ বন্ধের ব্যবস্থা হলে দেশে শুধু খাদ্য সংকট নয়, বরং বিশ্ব রাজনীতিতেও বাংলাদেশ বড় ধরনের রাজনৈতিক দেউলিয়ায় পড়বে।

তিনি আরও বলেন, ১৯৮৫ সালে উত্তরাঞ্চল ছিল মরুময় এলাকা। তখন বৃষ্টির ওপর নির্ভর করে বছরে একটি ফসল হতো, তাও বিঘা প্রতি ৪/৫ মণ। বৃষ্টি না হলে এক মুঠো ধানও পাওয়া যেত না। বর্তমানে একই জমিতে বছরে তিনটি ফসল হচ্ছে এবং বিঘাপ্রতি ফলন দাঁড়িয়েছে ২৫ থেকে ৩০ মণ। এই পরিবর্তনে বিএমডিএর ভূমিকা অপরিসীম। তবে বহুদিন ধরে প্রতিষ্ঠানটিতে নতুন জনবল নিয়োগ বন্ধ রাখা হয়েছে, যা বিদ্যুতের মেইন সুইচ বন্ধ করে আলো-বাতাস চাওয়ার মতো অবস্থা তৈরি করছে। তবুও প্রতিষ্ঠানটি দেশের খাদ্য উৎপাদনে নীরব ভূমিকা পালন করছে।

বিএমডিএর তথ্যমতে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সাড়ে ৩ লাখ হেক্টর জমিতে আমন, ৩ লাখ ২০ হাজার হেক্টরে বোরো, ৭৫ হাজার হেক্টরে আউশ ধান উৎপাদন হয়েছে। এগুলোতে যথাযথভাবে পানি সরবরাহ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়া সরিষা ১২ হাজার হেক্টর, গম ৮৭ হাজার ২৮৩ হেক্টর, আলু ৭৫ হেক্টর এবং ৭৮ হাজার হেক্টর মৌসুমী ফসলের জমিতে সেচ দিয়েছে বিএমডিএ।

নওগাঁ জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. ফরহাদ খন্দকার ও রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোছা. উম্মে ছালমার তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরে প্রতি হেক্টরে আমন ধানের ফলন হয়েছে ৫.৪ টন, আউশ ধান ৪.৮ টন, বোরো ধান ৭.২ টন, গম ৪.৪ টন, সরিষা ১.৫ টন এবং আলু ২৬.৭৭ টন।

সরকারি দর অনুযায়ী, সাড়ে ৩ লাখ হেক্টরে আমন ধানের উৎপাদন হয়েছে প্রায় ১৬ লাখ ৮০ হাজার মেট্রিক টন, যার বাজারমূল্য ৫৫৪৪ কোটি ৪০ লাখ টাকা। ৭৫ হাজার হেক্টরে আউশ ধানের উৎপাদন হয়েছে ৪ লাখ ৫ হাজার মেট্রিক টন, যার দাম ১৩৩৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা। ৩ লাখ ২০ হাজার হেক্টরে বোরো ধানের উৎপাদন হয়েছে ২৩ লাখ ৪ হাজার মেট্রিক টন, যার বাজারমূল্য ৮২৯৪ কোটি ৪০ লাখ টাকা। আলুর উৎপাদন হয়েছে ২০ লাখ ৭ হাজার ৭৫০ কেজি, বাজারমূল্য ৪৪১৭ কোটি ৫ লাখ টাকা। ৭৫ হেক্টরে সরিষার উৎপাদন হয়েছে ১ লাখ ২৭ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন, যার দাম ৪৮৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা। ৮৭ হাজার ২৮৩ হেক্টরে গমের উৎপাদন হয়েছে ৪ লাখ ৮৪ হাজার ৫২ মেট্রিক টন, বাজারমূল্য ১৮৭৭ কোটি ৮২ লাখ টাকা। শুধু আমন, আউশ, বোরো, আলু, গম ও সরিষার উৎপাদনের বাজারমূল্য দাঁড়িয়েছে প্রায় ২১৮ বিলিয়ন টাকা। এর বাইরে মৌসুমী ফসল রয়েছে প্রায় ৭৮ হাজার হেক্টর জমিতে, যার পরিমাণ ও মূল্য নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি।

বিএমডিএর নির্বাহী পরিচালক মো. তরিকুল আলম বলেন, মাত্র ৭৪৩ জন জনবল দিয়ে বিশাল এই প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হচ্ছে।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এ এইচ এম সাইফুল ইসলাম বলেন, বিএমডিএর পানি উত্তোলনে কার্ড ব্যবস্থাটি অত্যন্ত কার্যকর এবং তারা দেশের খাদ্য চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। তিনি মনে করেন, সরকারকে প্রতিষ্ঠানটির জন্য জনবল নিয়োগসহ সব ধরনের সহযোগিতা করতে হবে। কোথাও অনিয়ম থাকলে তা সঠিকভাবে মোকাবিলা করতে হবে। তবে বিএডিসি ও বিএমডিএ একীভূত করা সমীচীন হবে না। দুই প্রতিষ্ঠানের অর্জন গভীরভাবে বিশ্লেষণ করে তবেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

তিনি আরও বলেন, উত্তরাঞ্চলের কৃষিই প্রধান পেশা। এখানকার কৃষকরা রাজশাহীতে এসে কম সময়ে কম খরচে সেবা পান, ফলে রাজধানীর ওপর চাপও কিছুটা কমে।



মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ