Views Bangladesh Logo

সভা আর চিঠি চালাচালি, এয়ারপোর্টে মোবাইল নেটওয়ার্কের খবর নেই

যরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নবনির্মিত তৃতীয় টার্মিনালে মোবাইল নেটওয়ার্ক বসানোর উদ্যোগ যেন অনিশ্চয়তার ঘেরাটোপে আটকে আছে।

চলছে মাসের পর মাস সভা আর চিঠি চালাচালি; কিন্তু মোবাইল ফোন অপারেটর ও বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) ‘বিরোধ’ মিটছে না। সিদ্ধান্ত ঝুলে আছে বিটিআরসির হস্তক্ষেপের পরও।

জটিলতা বাড়ে সম্প্রতি বেবিচকের ‘অদ্ভুত’ এক সিদ্ধান্তে। বেবিচক টার্মিনালে নেটওয়ার্ক বসাতে মোবাইল ফোন অপারেটরদের টেন্ডারে অংশ নিতে বলেছে। সেখানে সর্বোচ্চ আর্থিক দরদাতা অপারেটর টার্মিনালে নেটওয়ার্ক বসাতে পারবে। ওই অপারেটর তখন অন্য অপারেটরগুলোর নেটওয়ার্কের বিষয়টি নিশ্চিত করবে। অপারেটরটিকে বড় অংকের জামানত, ভাড়া ও সেবার রেভিনিউ শেয়ারিং দিতে হবে।

মোবাইল ফোন অপারেটররা এতে বিস্ময় প্রকাশ করে বলছে, এমন হলে তৃতীয় টার্মিনালে নেটওয়ার্ক চালুর বিষয়টি অনিশ্চিত হতে পারে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অপারেটররা বিটিআরসির সহায়তা চায়।

অপারেটরদের অবস্থান:

বাংলালিংক, গ্রামীণফোন ও রবি যৌথভাবে বেবিচক চেয়ারম্যানকে লিখিত চিঠিতে স্পষ্ট মতামত দিয়েছে।

তারা বলেছে, টেলিযোগাযোগ সেবা লাইসেন্সপ্রাপ্ত অপারেটরদের অধিকার এবং এটি সরকারের ঘোষিত অপরিহার্য সেবা- যা পানি ও বিদ্যুতের মতো মৌলিক ইউটিলিটি। অপারেটররা যুক্তি দিয়েছে, আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দেশের প্রধান প্রবেশদ্বার। তাই যাত্রী, ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা ও অন্যান্য স্টেকহোল্ডারের জন্য নিরবচ্ছিন্ন মোবাইল কভারেজ ও হাইস্পিড ডেটা সেবা অপরিহার্য।

গত তিন বছর ধরে তারা আধুনিক ও ব্যয়সাশ্রয়ী নেটওয়ার্ক সমাধান নিয়ে কাজ করছে। তারা এনডাস, ডাস ( nDAS, DAS) ও ম্যাক্রো প্রযুক্তি সমন্বিত একটি হাইব্রিড সমাধানের প্রস্তাব দিয়েছে যা ভবিষ্যতের ফাইভজি প্রযুক্তির জন্য প্রস্তুত।

তাদের মতে, শুধু অ্যাকটিভ ডাস নিলে বৈদেশিক মুদ্রার অপচয় হবে। সংসদ ভবন ও সচিবালয়সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে এমন নেটওয়ার্ক বিনা খরচে স্থাপনের নজিরও তারা তুলে ধরেছে।

অপারেটরদের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, যৌথ সাইট নির্মাণে একজন অপারেটর মূল অবকাঠামো তৈরি করবে এবং অন্যরা নিজস্ব যন্ত্রপাতি স্থাপন করবে। টার্মিনাল-১ ও ২-এর সমান হারে জায়গার ভাড়া তারা দিতে রাজি হলেও রেভিনিউ শেয়ার, নিরাপত্তা জামানতের দাবি তাদের আওতার বাইরে।

দ্রুত সমাধানে বেবিচক ও বিটিআরসির উপস্থিতিতে বৈঠকেরও আহ্বানও জানিয়েছে অপারেটররা।

বাংলালিংকের চিফ কর্পোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স অফিসার তাইমুর রহমান জানান, ‘উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতে মোবাইল অপারেটররা বিটিআরসির সহায়তা চেয়েছে। আইন-বিধিবহির্ভূত এ ধরনের পদক্ষেপ নির্ধারিত সময়ের ভেতর তৃতীয় টার্মিনালে টেলিযোগাযোগ স্থাপনকে কেবল ব্যাহতই করবে না, ভবিষ্যতে এ নিয়ে অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে অনেক জটিলতার আশঙ্কা রযেছে- যা উদ্বেগজনক।’

রবির চিফ কর্পোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম জানান, ‘আইন অনুযায়ী অপারেটররা বেবিচককে রেভিনিউ শেয়ার দিতে পারে না। নিরাপত্তা জামানতও তাদের আওতার বাইরে। আমরা বাস্তবসম্মত প্রস্তাব দিয়েছে আশাকরি বেবিচক তা বিবেচনা করবে।

গ্রামীণফোনের চিফ কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার তানভীর মোহাম্মদ বলেন, ‘বিমানবন্দরই আন্তর্জাতিক যাত্রীদের কাছে দেশের প্রথম পরিচয় বহন করে। তাই টার্মিনালের ভেতরে নিরবচ্ছিন্ন মোবাইল সেবা নিশ্চিত করা কেবল বাণিজ্যিক বিষয় নয় বরং এটি একটি জাতীয় প্রয়োজন। আমরা বিশ্বাস করি, বেবিচক কর্তৃপক্ষ অন্যান্য টার্মিনালে যে ফরম্যাট বাস্তবায়ন করেছে, এখানেও সেটিই অনুসরণ করবে। আমরা নিশ্চিত, যৌথ প্রচেষ্টার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় নেটওয়ার্ক স্থাপন করতে সক্ষম হব।’

বেবিচককে বিটিআরসির চিঠি:

বিটিআরসি চলতি আগস্টের শুরুতে বেবিচককে চিঠি পাঠায়।

চিঠিতে মোবাইল অপারেটরদের উদ্ধৃতি দিয়ে জানানো হয়, টার্মিনালে নেটওয়ার্ক স্থাপনে ন্যূনতম ২১ সপ্তাহ সময় প্রয়োজন হবে। দ্রুত কাজ সম্পন্নের স্বার্থে বেবিচকের সর্বোচ্চ সহযোগিতা কামনা করেছে বিটিআরসি।

বিটিআরসির স্পেকট্রাম বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আমিনুল হক স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইনের ধারা ৫৫ মেনে কাজ করার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। একইসঙ্গে প্রয়োজনীয় সমন্বয়ের মাধ্যমে মোবাইল অপারেটরদের সহযোগিতায় টার্মিনালে নেটওয়ার্ক অবকাঠামো স্থাপন ও পরিচালনার অনুরোধ জানানো হয়েছে।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ