Views Bangladesh Logo

রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেই পুনরায় ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী লেকর্নু

তীব্র রাজনৈতিক সংকটের মুখে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার এবং ২০২৬ সালের বাজেট পাস করানোর লক্ষ্যে ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ তার পূর্ববর্তী প্রধানমন্ত্রী সেবাস্তিয়ান লেকর্নুকে পুনরায় নিয়োগ দিয়েছেন। মাত্র কয়েক দিন আগেই পদত্যাগ করেছিলেন লেকর্নু।

শুক্রবার ঘোষিত এই সিদ্ধান্তটি এমন এক সময়ে এলো যখন ফ্রান্সে কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে তীব্র রাজনৈতিক সংকট বিরাজ করছে। ৪৭ বছর বয়সী ম্যাক্রোঁ সংসদ ভেঙে দেয়া বা তার পদত্যাগের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের পক্ষ থেকে আসা আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেন। এর বদলে তিনি তার বিশ্বস্ত মিত্রকেই পুনরায় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বেছে নেন।

পুনরায় নিয়োগের পর সেবাস্তিয়ান লেকর্নুর তাৎক্ষণিক চ্যালেঞ্জ হলো সোমবারের মধ্যে সংসদে নতুন বাজেট পেশ করা। এক্সে (টুইটার) দেয়া এক বিবৃতিতে লেকর্নু বলেন, দায়িত্ববোধ থেকেই এই মিশন গ্রহণ করেছি। সেই সঙ্গে তিনি প্রতিশ্রুতি দেন, “বছরের শেষ নাগাদ যেন ফ্রান্সের একটি বাজেট থাকে এবং নাগরিকদের দৈনন্দিন সমস্যাগুলো সমাধানে সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।

তিনি রাজনৈতিক অচলাবস্থা দূর করার আহ্বান জানান, যা ভোটারদের হতাশ করেছে এবং আন্তর্জাতিক মহলে ফ্রান্সের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করেছে।

এদিকে দিনের শুরুতে মূলধারার দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে তার সিদ্ধান্তের পক্ষে সমর্থন চান প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ। কিন্তু বামপন্থি দলগুলো তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলে, ম্যাক্রোঁ বৃহত্তর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার জন্য তাদের আহ্বানকে উপেক্ষা করেছেন। বিরোধী দলগুলোর এই প্রত্যাখ্যান ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, ম্যাক্রোঁর নতুন সরকারও তার পূর্ববর্তী সরকারগুলোর মতো একই রকম ‘অস্থিতিশীলতার’ মুখোমুখি হতে পারে।

বিশ্লেষকদের মতে, আরও একবার সরকারের পতন ঘটলে ম্যাক্রোঁকে ‘মধ্যবর্তী নির্বাচনের’ আহ্বান জানাতে হতে পারে, যা সম্ভবত কট্টর-ডানপন্থি ন্যাশনাল র‍্যালি (আরএন) দলের জন্য সুবিধাজনক হবে।

ফ্রান্সের চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে দুর্বল করেছে এবং বাজারকে অস্থির করে তুলেছে। গত বছর ম্যাক্রোঁর আইনসভা নির্বাচন আয়োজনের সিদ্ধান্তের পর সংসদ তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে হয়ে পড়ে। এতে এই অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়।

এখনও বাজেট পেশ করা হয়নি। তবে এর আগেই বামপন্থিরা বিতর্কিত পেনশন সংস্কার বাতিল করার দাবি জানাচ্ছে। অন্যদিকে রক্ষণশীলরা কর বৃদ্ধিতে আপত্তি জানাচ্ছে। জানা গেছে, ম্যাক্রোঁ অবসর গ্রহণের বয়স বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত ২০২৮ সাল পর্যন্ত স্থগিত করার প্রস্তাব দিলেও গ্রিন পার্টির নেতা মেরিন টন্ডেলিয়ার সেই ছাড়কে অপর্যাপ্ত বলে খারিজ করে দিয়েছেন।

দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক সতর্ক করে দিয়েছে যে, চলমান এই অস্থিতিশীলতা ফ্রান্সের জিডিপি থেকে ০.২ শতাংশ পয়েন্ট কমিয়ে দিতে পারে। ব্যাংক গভর্নর ফ্রাঁসোয়া ভিলরো দ্য গালো এই অনিশ্চয়তাকে ‘প্রবৃদ্ধির এক নম্বর শত্রু’ বলে অভিহিত করেছেন।

আশঙ্কা করা হচ্ছে, চলতি বছরে ফ্রান্সের বাজেট ঘাটতি জিডিপির ৫.৪ শতাংশে পৌঁছাতে পারে, যা ইউরোপীয় ইউনিয়নের নির্ধারিত সীমার প্রায় দ্বিগুণ। কর্মকর্তারা আশা করছেন, ২০২৬ সালের মধ্যে এই ঘাটতি ৪.৮ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনা সম্ভব হবে।

উল্লেখ্য, গত এক বছরে বাজেট আলোচনা ব্যর্থ হওয়ায় ম্যাক্রোঁ ইতোমধ্যে তিনজন প্রধানমন্ত্রীকে হারিয়েছেন, যা ফরাসি রাজনীতির গভীর বিভাজনকে তুলে ধরে। তাই চলমান সঙ্কটটি আরও গভীর হওয়ার আগে লেকর্নুর এই প্রত্যাবর্তন পরিস্থিতি সামাল দেয়ার জন্য ম্যাক্রোঁর সর্বশেষ প্রচেষ্টা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।


মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ