Views Bangladesh Logo

বিক্ষোভ দমনে লস অ্যাঞ্জেলেসে কারফিউ, সেনা মোতায়েনে সমালোচিত ট্রাম্প

  • মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিবাসনবিরোধী অভিযানের প্রতিবাদে তীব্র বিক্ষোভের মুখে লস অ্যাঞ্জেলেসে স্থানীয় পর্যায়ের জরুরি অবস্থা ও আংশিক কারফিউ জারি করেছেন মেয়র কারেন বাস। ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যের ব্যস্ততম শহরটির কেন্দ্রস্থলের মাত্র এক বর্গমাইল এলাকায় প্রযোজ্য থাকছে এই কারফিউ।

    প্রাথমিকভাবে স্থানীয় সময় বুধবার (১১ জুন) সকাল ছয়টা পর্যন্ত এই কারফিউ চলবে। পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে এটি কয়েক দিন বাড়ানো যেতে পারে বলে জানিয়েছেন মেয়র। গণমাধ্যম, কর্মক্ষেত্রে যাতায়াতকারী এবং চিকিৎসাসহ জরুরি সেবাদাতারা এর আওতামুক্ত বলেও জানিয়েছে লস অ্যাঞ্জেলেস সিটি কর্পোরেশন।

    ট্রাম্পের ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) অভিযানের প্রতিবাদে জনতার এই বিক্ষোভ গড়িয়েছে টানা ষষ্ঠদিনে। অস্থিরতা দমনে লস অ্যাঞ্জেলেসে ন্যাশনাল গার্ড ও মেরিন সেনা মোতায়েন করে রাজ্যটির প্রশাসন, স্থানীয় কর্মকর্তা এবং জনপ্রতিনিধিদেরও তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন ট্রাম্প।

    মঙ্গলবার (১০ জুন) পঞ্চম দিনেও বিক্ষোভকারী এবং আইন প্রয়োগকারী বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষের পাশাপাশি বিশেষত রাতের বেলায় ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। সাম্প্রতিক অভিযানে লক্ষ্যবস্তু হওয়া অভিবাসীদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে মেক্সিকোসহ অন্য দেশগুলোর পতাকাও ওড়ান বিক্ষোভকারীরা। পুলিশের হতে গ্রেপ্তার হন তাদের ১৯৭ জন।

    দেশটির হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ জানিয়েছে, ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট দিনে গড়ে দুই হাজার জন অভিবাসীকে গ্রেপ্তার করছে, যা প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সময়ে ২০২৪ অর্থবছরে গড়ে ৩১১ জনের চেয়ে অনেক বেশি।

    এরই প্রতিবাদে শুক্রবার (৬ জুন) শুরু ব্যাপক বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে লস অ্যাঞ্জেলেস শহর ও আশেপাশের এলাকায়। শনিবার (৭ জুন) ২৭ জন, রোববার (৮ জুন) ৪০ জন ও সোমবার (৯ জুন) ১১৪ জনকে গ্রেপ্তারের পরও অস্থিরতা না কমা এবং ভাংচুর ও লুটপাট ঠেকাতে কারফিউ জারির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জানান মেয়র বাস।

    সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘তবে আমি বৃহস্পতিবার (১২ জুন) নির্বাচিত নেতা ও আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করব…আমরা ধারণা করছি, এমনটা (আংশিক কারফিউ) কয়েক দিন চলবে’।

    সিটি মেয়র বলেন, ‘এই কদিনে শহরজুড়ে উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হয়েছে। এই এক বর্গমাইলে যা ঘটছে (কারফিউ জারি), তা গোটা শহরের ওপর প্রভাব ফেলছে না’। তিনি জোর দিয়ে আরও বলেন, ‘এটি শহরজুড়ে ছড়িয়ে পড়া কোনো সংকট নয়’।

    লস অ্যাঞ্জেলেস পুলিশের প্রধান জিম ম্যাকডনেল সংবাদ সম্মেলনে বলেন, টানা কয়েকদিন শহরে যেভাবে অস্থিরতা বেড়েছে, তাতে জীবন ও সম্পদের সুরক্ষায় এ কারফিউ জারি প্রয়োজন। গণমাধ্যম ও কারফিউয়ের আওতামুক্তরা ছাড়া কেউ কারফিউ অমান্য করলে গ্রেপ্তারের হুশিয়ারিও দেন তিনি।

    অস্থিরতা দমনে লস অ্যাঞ্জেলেসে চার হাজার ন্যাশনাল গার্ড সেনা মোতায়েন করেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার নির্দেশে শহরটিতে পৌঁছেছেন শত শত মার্কিন মেরিন সেনাও। একজন মার্কিন কর্মকর্তা জানান, লস অ্যাঞ্জেলেস শহরের প্রায় ৩০ মাইল দক্ষিণে সিল বিচ এলাকায় প্রায় ৭০০ জন মেরিন সেনাকে মোতায়েন করা হয়েছিল। ন্যাশনাল গার্ড সেনাদের সঙ্গে যৌথভাবে বিক্ষোভ দমনে তাদেরকেই শহরে আনা হচ্ছে।

    যদিও সেনা মোতায়েনের তীব্র বিরোধিতা এবং এটিকে অপ্রয়োজনীয়, বেআইনিও রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে অভিহিত করেছিলেন ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসম। তবে তাকে পাত্তা দেননি ট্রাম্প।

    অস্থিরতার ঘটনা সত্ত্বেও কেন্দ্রের এই প্রতিক্রিয়ার সমালোচনা করেছেন রাজ্য এবং স্থানীয় কর্মকর্তারাও। তারা চলমান বিক্ষোভকে ‘মূলত শান্তিপূর্ণ’ হিসাবে বর্ণনা করে বলেন, এর তুলনায় সেনা মোতায়েন অসামঞ্জস্যপূর্ণ প্রতিক্রিয়া।

    যৌথ বিবৃতিতে সক্রিয়-কর্তব্যরত সামরিককর্মীদের ব্যবহারের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ক্যালিফোর্নিয়ার সিনেটর অ্যাডাম শিফ এবং অ্যালেক্স প্যাডিলাও।

    বিবৃতিতে লেখা হয়েছে, ‘এই ধরনের সেনা সমাবেশ শুধুমাত্র সবচেয়ে চরম পরিস্থিতিতেই হওয়া উচিত- এবং এগুলো তা নয়’।

    তবে মঙ্গলবার উত্তর ক্যারোলিনার ফোর্ট ব্র্যাগে দেয়া ভাষণে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার পদক্ষেপের পক্ষে যুক্তি দিয়ে বলেন, ‘প্রজন্মের সেনাবাহিনীর বীরেরা শুধুমাত্র আক্রমণ এবং তৃতীয় বিশ্বের অনাচারে আমাদের দেশ ধ্বংস হতে দেখতে দূরবর্তী উপকূলে নিজেদের রক্তপাত করেননি। ক্যালিফোর্নিয়ায় আপনি যা দেখছেন, তা হল শান্তি, জনশৃঙ্খলা এবং জাতীয় সার্বভৌমত্বে পূর্ণাঙ্গ আক্রমণ, যা বিদেশি দাঙ্গাবাজরা করেছে’।

    তার প্রশাসন ‘লস অ্যাঞ্জেলেসকে মুক্ত করবে’ বলেও প্রতিশ্রুতি দেন ট্রাম্প।


মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ