চলুন ঘুরে আসি নেপাল
কাঠমান্ডুর স্থানীয় সময় দুপুর ২টা ১৫ মিনিট, দিনটি ছিল ১২ মার্চ ২০১৮। এক দুর্বিষহ স্মৃতির কথা স্মরণ করিয়ে দেই। নিশ্চই সবার মনে এখনো গেঁথে রয়েছে, ত্রিভুবন বিমানবন্দরে বাংলাদেশের একটি বেসরকারি বিমান পরিবহন কোম্পানির ড্যাশ ৮ উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হওয়ার সেই ঘটনা। সংবাদপত্রে কাজের সুবাদেই ঘটনায় গভীর দৃষ্টি ছিল আমাদের। নেপাল থেকে পাঠানো কিছু সচল আর স্থির চিত্র ঘুরে ফিরে সব টেলিভিশন চ্যানেল প্রচার করেছিল। সঙ্গে বিশ্লেষণ আর নেপালে উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হওয়ার পরিসংখ্যানে টেলিভিশন চ্যানেলগুলো তখন সরগরম হয়ে উঠেছে। স্বাভাবিকভাবে মানুষের মধ্যেই উদ্বেগ উৎকণ্ঠা কাজ করছিল। একের পর এক মৃত্যুর খবর আসছিল। স্বজন আর খুব কাছের মানুষদের হারানোর বেদনার গল্পে ভারি হচ্ছিল চারপাশ। সেই থেকে নেপালের বিষয়ে আমার এক ধরনের ভয় কাজ করত; কিন্তু দুর্ঘটনাতো দুর্ঘটনাই। কোনো খারাপ সময়, কোনো খারাপ স্মৃতিই প্রকৃতির কাছ থেকে মানুষকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারে না।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে ২০ অক্টোবর ২০২৩-এর ফ্লাইট ত্রিভুবন এয়ারপোর্টে অবতরণের ঠিক ১৫ মিনিট আগে ককপিট থেকে ঘোষণা এলো আমরা এখন হিমালয় পর্বতমালা অতিক্রম করছি। ডান দিকের জানালা দিয়ে স্পষ্ট হিমালয় দেখা যাচ্ছে। মনে হচ্ছিল আকাশে হিমালয়ের সমান্তরালে যেন প্লেনটি স্থির হয়ে আছে। এতে হিমালয়ের বিশলতা বুঝতে একটুও কষ্ট হয়নি। আকাশের এতটা ওপর থেকে এই প্রথম হিমালয় দেখা! এক অন্যরকম অনুভূতি। মুহূর্তেই স্মৃতি থেকে ১২ মার্চ ২০১৮-এর সেই বিকেল আর রাতের দুঃসহ স্মৃতি মুছে গিয়ে কেবলই সেখানে হিমালয়ের সৌন্দর্য জায়গা করে নিলো।
নেপাল-বাংলাদেশের সময়ের পার্থক্য মাত্র ১৫ মিনিট। সময়ের খুব বেশি হেরফের নেই। এক ঘণ্টা ১০ মিনিটের ফ্লাই টাইমে বিমানের চাকা যখন রানওয়ে স্পর্শ করছে, তখন সবে দুপুর হচ্ছে। কাঠমান্ডু ভ্যালিতে ত্রিভুবন এয়ারপোর্টে একেবারে শহরের মধ্যে অবস্থিত।
নেপালে নামার পর স্থানীয় ভ্রমণসঙ্গীর আতিথেয়তা ছিল মুগ্ধ হওয়ার মতো। সেখান থেকে হোটেল ভাইশালীতে পৌঁছানোর সময় রাস্তার দুধারে সাজানো গোছানো এক সুন্দর শহর চোখে পড়বে। যে শহরে কোনো সুউচ্চ ভবন নেই, বড় ফ্লাইওভার, ওভারপাস কিছুই নেই। শুধু প্রকৃতির মায়া আছে। ভোর ৬টা থেকে প্রায় দুপুর ২টা এর মধ্যে বডিং পাস নেয়া আর দুই দেশের ইমিগ্রেশন পার হতে লম্বা সময় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে। ফলে ক্লান্তি ছিল সবার চোখে মুখে। দুপুরে খাওয়ার পর খানিকটা বিশ্রামের প্রয়োজন ছিল সবারই।
ঢাকা থেকে কাঠমান্ডুর দূরত্ব মাত্র ৭০ মিনিটের। দূরত্বের হিসেবে ঢাকা-থিম্পুর পরেই কাঠমান্ডুর অবস্থান। ঢাকা থেকে ভুটানের থিম্পুর দূরত্ব ৬১২ কিলোমিটার, কাঠমান্ডু ৯১৯ কিলোমিটার। ঢাকা থেকে মিয়ানমারের রাজধানী নেপিদে ১ হাজার ৪৭৩ কিলোমিটার, আর ভারতের নয়া দিল্লি ১ হাজার ৮৭৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। তবে নেপালে ভিসা জটিলতা না থাকাতে যাওয়াটা সহজ। চাইলে দেশে বসে অনলাইনে ভিসা ফরম পূরণ করে নিয়ে যাওয়া যায়। তবে ভিসার ক্ষেত্রে দুই ধরনের ক্যাটাগরি রয়েছে। প্রথমটি ১৫ দিনের জন্য ৩০ ডলার ফি দিতে পারেন। তবে সার্কভুক্ত দেশগুলোর জন্য ফ্রি ভিসার ব্যবস্থা রয়েছে। এয়ারপোর্টে নেমেই ডিজিটাল বোর্ডে নিজেই ভিসা ফরম পূরণ করে মোবাইলে একখানা ছবি তুলে নিলেই যথেষ্ট।
সন্ধ্যার কাঠমান্ডু
অক্টোবরের শেষে সন্ধ্যের পর খানিকটা শীতের আহব ছিল। তাপমাত্রা কখনো কখনো ১২ থেকে ১৩ ডিগ্রিতে নেমে আসে। ঢাকার সঙ্গে এই আবহাওয়ার তেমন মিল নেই। ফলে নেপালে এই সময়ে শীতের কাপড় না নিলে খানিকটা বিপত্তিতে পড়তে পারেন। পর্যটকদের জন্য নেপালে কেনা-কাটার জায়গা খুব সীমিত। থামেল এলাকায় ছোট ছোট দোকানগুলোতে নানা বাহারি পণ্য সাজিয়ে বসে থাকেন বিক্রেতা। থামেল এলাকার বেশিরভাগ পণ্যই ভারত থেকে আসে। নেপালে আসতে ভারতীয়দের কোনো ভিসার দরকার হয় না আবার নেপালের মানুষেরও ভারতে যেতে ভিসার প্রয়োজন হয় না। ফলে দুদেশের মধ্যে চমৎকার বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে। নেপাল থেকে চীনের দূরত্বও খুব বেশি নয়। ফলে কাঠমান্ডুতে ভারত এবং চীনা পণ্যের আধিক্য বেশি।
বাংলাদেশও চাইলে নেপালে এই বাণিজ্যের সম্পসারণ ঘটাতে পারে। বিশেষ করে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের স্থানীয় ব্র্যান্ডগুলো নেপালে তাদের আউটলেট করতে পারেন। কারণ হিসেবে আমার মনে হয়েছে নেপালে ঢাকার তুলনায় কাপড়ের দাম অনেক বেশি। খুব ছোট শহর হলেও যেহেতু প্রচুর পর্যটকের ভিড় হয়, তাই নেপালে ইউরোপ এবং আমেরিকার ঘড়ি, ব্যাগ আর জুতার নিজস্ব আউটলেট রয়েছে। তবে এর বেশিরভাগই পরিচালনা করেন ভারতীয়রা। নেপালের একটি স্থানীয় সুপারশপে ঢুকেতো চোখ চড়কগাছে ওঠার মতো ঢাকার তুলনায় কিছু পণ্যের দাম চারভাগের এক ভাগ। আধা লিটার লাইফবয় হ্যাড ওয়াশের দাম মাত্র ৯০ রুপি। নেপালের নিজস্ব চা টেকলোর এক কেজির প্যাকেট ৫৭০ টাকা। ভারতীয় আর চীনা চকলেটের দাম বাংলাদেশের তুলনায় অর্ধেক। তবে থামেল এলাকায় দামাদামি করে পণ্য কিনতে না পারলে ঠকতে হবে নিশ্চিত। এখানে খানিকটা কম দামে কাশ্মীর থেকে আনা নানা রকম শাল এবং বাহারি হাতের কাজের পোশাক কিনতে পারবেন।
ঢাকায় ফিরে এই দামের হেরফেরের বিষয়টি একটি সুপারশপের মালিকের কাছে বলতেই তিনি জানালেন, নেপাল হয়তো এসব পণ্য আমদানি করে। আমাদের দেশে যারা এসব প্রশাধন সামগ্রী প্রস্তুত করে, তাদের তুলনায় যারা আমদানি করে তাদের পণ্যের দাম অনেক কম। অন্যদিকে একটি চা কোম্পানির বড় কর্মকর্তাকে নেপালের চায়ের দাম জানাতে তিনি বললেন, আমরা দেশে সব থেকে ভালো মানের চা নিলামে বিক্রি করি ৩৫০ টাকা কেজি; কিন্তু খুচরা বাজারে সেটি কীভাবে হাজার টাকার ওপর বিক্রি হয়, সে প্রশ্নের উত্তর তিনি অবশ্য দিতে পারেননি। সন্ধ্যার কাঠমান্ডুর সব চাইতে বড় আকর্ষণ এখানকার বার আর ড্যান্সবার। রাস্তার পাশেই সাধারণ রেস্টুরেন্টে চাইলেই অ্যালকোহলের স্বাদ নেয়া সম্ভব। তবে ড্যান্সবারগুলো রাখঢাক রেখেই চালানো হয়।
কাঠমান্ডু থেকে নাগোরকোট
কাঠমান্ডু উপত্যকা থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে নাগোরকোট। এখান থেকে নেপাল শহর স্পষ্টভাবে দেখা যায়। সমতলে একই পথ পাড়ি দিতে এক ঘণ্টার মতো সময় লাগলেও পাহাড়ি রাস্তায় প্রয়োজন পড়ে আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা। হোটেল লবি থেকে আধাঘণ্টা পরেই পাহাড়ি রাস্তা শুরু। যেতে যেতে গাইড নেপালের সরকারি দপ্তর, সুপ্রিম কোর্ট আর সেনাবাহিনীর অফিস দেখালেন। খুব কাছাকাছি এই তিন দপ্তরের অবস্থান। তবে সবার দৃষ্টি ছিল হিমালয়ের দিকে। মাঝে মাঝে শহুরে রাস্তার ফাঁকে ফাঁকে সেখানেও হিমালয় উঁকি দিচ্ছিল।
নেপালের এক দিকে চীন অন্য সীমান্তে ভারত। গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরলেও পৃথিবীর দুই শক্তিধর দেশের প্রভাব থাকে এখানের সরকারের ওপর। গাইডের কাছে খোলামেলা প্রশ্ন ছিল নেপালের সরকারের ওপর প্রতিবেশীদের প্রভাব কেমন থাকে। তিনি কূটনৈতিক উত্তর দিতে গিয়ে বিষয়টি অস্বীকার করলেন না। অনেকটা বাংলাদশের মতোই চীন উন্নয়ন অংশীদার আবার ভারতের সঙ্গে একটি আত্মিক সম্পর্ক রয়েছে নেপালি জনগণের। ভিসা ছাড়াই ভারত ভ্রমণ আর ভারতীয়দের জন্য নেপালে ব্যবসা-বণিজ্য সম্প্রসারণ, যা বিশেষ ভূমিকা রাখছে।
গত শতক থেকে নেপালে রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয়। এই শতকেও যা চলতে থাকে, যা ভয়ংকর রূপ নেয় নব্বইয়ের দশকে। নেপালে ১৯৯০ সাল থেকে শুরু করে ২০০৮ সাল পর্যন্ত দেশটি একটি গৃহদ্বন্দ্বে ভুগছিল। এরপর ২০০৬ সালে একটি শান্তি চুক্তি সই হয় এবং ওই একই বছরে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সাংবিধানিক নির্বাচনের জন্য নেপালের সংসদ ২০০৬ সালের জুন মাসে রাজতন্ত্রের অবসানের পক্ষে ভোট দেয়। নেপাল একটি প্রজাতন্ত্র হয়ে ওঠে এবং ২০০ বছরের পুরোনো শাহ রাজবংশের পতন ঘটে।
আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ ধরে নাগোরকোটে উঠতে গিয়ে কেবলই মনে হচ্ছিল এত উঁচু পাহাড়ের গায়ে কীভাবে বাড়িগুলো দাঁড়িয়ে আছে। খুব কাছ থেকে দেখতে সাধারণ মনে হলেও দূর থেকে কেবলই ভীতিকর মনে হচ্ছিল, যাদের উচ্চতা ভীতি রয়েছে তাদের জন্য নাগোরকোটের এই যাত্রা ভয়ংকর মনে হতে পারে; কিন্তু পাহাড়ে প্রাণ-প্রকৃতি এমনভাবে সেজেছে দেখলে মনে হবে শিল্পীর নিপুণ হাতে আঁকা কোনো ছবি।
নাগোরকোটে যখন আমরা একেবারে পাহাড়ের চূড়ায়, তখন নিচে দিয়ে মেঘ ভেসে যেতে দেখা যায়। সেখান থেকে হিমালয় আরো স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল। আশপাশের পাহাড়ের দিকে যখন আমাদের দৃষ্টি, তখন দূরে এক পাহাড়ের খুব কাছ দিয়ে প্লেন উড়ে যেতে দেখা গেল। আমরা তখন প্লেনেরও ওপরে। এই অনুভূতির বর্ণনা দেয়া কঠিন। কেবলই মনে হবে এইতো আপনার আর একটু ওপরেই আকাশ! অথবা আপনি আকাশের খুব কাছে চলে এসেছেন।
ফেরার পথে মাঙ্কি টেম্পল
দুপুরে খাওয়ার পর সবাই যেতে চাইল মাঙ্কি টেম্পলে। আগেই গাইড জানিয়েছিল এটি ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্যের একটি স্থাপনা। মহামানব গৌতম বুদ্ধের জন্মভুমি হওয়াতে নেপালজুড়েই বৌদ্ধ মন্দির ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। বৌদ্ধদের কাছে অতি পবিত্র এসব স্থানে এখন সারা বছরই পর্যটকদের ভিড় লেগে থাকে। তবে হালকা শীতের এই সময়ে অক্টোবর এবং নভেম্বরেই এখানে যাওয়ার সব চাইতে ভালো সময়। নেপালের হিন্দু ও বৌদ্ধ সবাই এসব জায়গায় শ্রদ্ধা জানাতে যান।
চন্দ্রগিরির ক্যাবলকার
কাঠমান্ডু থেকে চন্দ্রগিরি দূরত্ব মাত্র ৪০ মিনিটের। শহরের খুব কাছে এই পাহাড়টিকে নেপাল পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় করে সাজিয়েছে। এখানের সব চাইতে বড় আকর্ষণও হিমালয়। নাগোরকোট থেকে যেভাবে হিমালয় দেখা যায়, চন্দ্রগিরি থেকে তার চাইতে স্পষ্টভাবে হিমালয় দেখা যায়। মনে হবে এত দিন যে হিমালয়ের ছবি দেখেছেন, এখন সেই হিমালয়ই আপনার সামনে মন ভরে প্রাণ ভরে আপনি হিমালয় দেখবেন, চোখ কোনো দিকেই সরাতে পারবেন না।
আমাদের তিন পার্বত্য জেলাতেও কেবল কার করার প্রস্তাব নিয়ে এসেছিল একটি বেসরকারি কোম্পানি। সরকার সেই প্রস্তাবে সাড়া দেয়নি। পর্যটক আকৃষ্ট করার জন্য দেশে যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, তা খুবই সীমিত। দেশে পর্যটক আসলে তাদের সঙ্গে ডলার, ইউরো আসে এটি সম্ভবত আমাদের সরকারের মাথায় আসে না। মাঝে মধ্যে পর্যটন নিয়ে বিপ্লব করতে দেখা যায়; কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না। বিশ্বের সবচেয়ে বড় সমুদ্রসৈকতে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। এই লজ্জা আপনি রাখবেন কোথায় বলুন। নেপালকে দেখলে মনে হয় আমরা পর্যটক আকৃষ্ট করতে আমাদের সম্পদ কাজে লাগাতে পারিনি। নেপাল যেটা পেরেছে। নেপালে ঘুরলে আপনাকে যা আকৃষ্ট করবে, তা হচ্ছে নেপালিদের ব্যবহার। মানুষের সঙ্গে এতটা আন্তরিক ব্যবহার করার মানুষ খুব কমই পাওয়া যায়।
দুটি উদাহরণ দেই, তাহলে বিষয়টি বুঝতে সহজ হবে। ঢাকা বিমানবন্দরে ঠিক আমার আগে ইমিগ্রেশন লাইন পার করছিলেন এক রেমিট্যান্স যোদ্ধা। ভদ্রলোক সৌদি আরবে যাচ্ছিলেন। একজন মহিলা সাব-ইন্সপেক্টর তাকে রিতিমতো ধমকাচ্ছিলেন; কিন্তু কেন? ভদ্রলোক বারবার বলছিলেন তিনি ১২ বছর ধরে সৌদি আরব থাকেন। নানারকম ব্যাখ্যা চাচ্ছিলেন। প্রত্যেক কথার সঙ্গে একটা করে ধমক ফ্রি। আমার কেবলই মনে হচ্ছিল ভদ্র মহিলা হয়তো বাসায় আজ ঝগড়া করে এসেছেন অথবা গিয়ে করবেন।
কাঠমান্ডুর রাস্তায় আমরা আগে হাঁটছি পেছনে একটি গাড়ি আসছিল। হঠাৎই পেছন ফিরে তাকাতে দেখলাম গাড়িটি আমাদের পেছনে আস্তে আস্তে আসছে। ওই গাড়ির পেছনে আরও কয়েকটি গাড়ি একইভাবে গতি কমিয়ে আসছে। লজ্জা পেয়ে সরি বলে সরে গেলাম। গাড়ি পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় ড্রাইভার বলল থ্যাংক ইউ। চিন্তা করেন পর্যটকের সমস্যা হবে বলে তিনি হর্ন দিচ্ছিলেন না। অপেক্ষা করছিলেন, কখন পর্যটক ফিরে তাকায়!
নেপালের অধিকাংশ বাড়ির জানালায় কোনো গ্রিল নেই। অথচ আমরা কেন লোহার খাঁচায় নিজেদের বন্দি করি জানেন, নিরাপত্তার জন্য। যাতে চুরি না হয়, এ জন্য। আচ্ছা একবার চিন্তা করেন তো যদি জানালায় গ্রিল দিতে না হয়, তাহলে কত লোহা বেঁচে যায়। নেপালিরা বাড়ির সামনেই বাইক রেখে দেয়। কেউ ধরেও না। তাহলে আমরা কেন এমন!
চন্দ্রগিরিতে ক্যাবলকারে আসা-যাওয়ার ভাড়া ২০ ডলার। সকালে গিয়ে ইচ্ছা করলে আপনি বিকেলেও আসতে পারবেন। ঢাকায় যেমন আমরা চিড়িয়াখানা দেখতে যাই, কেউ কেউ চিড়িয়াখানায় খাবার নিয়েও যান। নেপালিরাও তেমনি দলবেঁধে ক্যাবলকারে করে ঘুরতে গিয়ে দুপুরে সেখানেই বাড়ি থেকে রান্না করা খাবার খেয়ে নেন। অবশ্য আপনি চাইলে সেখানের রেস্টুরেন্টে বসে পড়তে পারেন। ক্যাবলকারে উঠতে উঠতে আরেক পাহাড়ের চূড়ায় রিসোর্ট দেখতে পাওয়া যাবে। মনে হবে এখানে ওঠার একমাত্র উপায় হেলিকপ্টার।
এর আগে বেইজিং এ চীনের প্রাচীরে উঠতে গিয়ে ক্যাবলকারে উঠেছিলাম; কিন্তু সেই যাত্রা চন্দ্রগিরির মতো রোমাঞ্চকর ছিল না। নেপালের এই যাত্রায় আমার কেবলই মনে হয়েছে আমাদের সমুদ্র, পাহাড়, হাওর বিদেশি পর্যটকদের জন্য প্রস্তুত হতে আর কত দিন প্রয়োজন হবে।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে