Views Bangladesh Logo

গাছের বন্ধু বাদশা মিয়া আমাদের আলোকবর্তিকা হোক

গাছ আমাদের ফুল দেয়, ফল দেয়, অক্সিজেন দেয়, কাঠ দেয়- শুধু দিয়েই যায়, বিনিময় নেয় না কিছুই। গাছের মতোই নিঃস্বার্থ একজন মানুষ বাদশা মিয়া। তিনি গাছের বন্ধু। পেশা দিনমজুরি হলেও নেশা গাছ লাগানো। নিজের টাকায় রাস্তার পাশে, হাটবাজার ও গ্রামের মোড়ে, ঈদগাহ, মসজিদ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঠে ২০ বছর ধরে গাছের চারা লাগিয়ে চলেছেন তিনি।

এখন তার লাগানো গাছের ফল খান এলাকার মানুষ। গাছের ছায়ায় বসে মনপ্রাণ জুড়ায় পথচারীরা। স্থানীয় লোকজন ভালোবেসে তাকে ‘গাছের বন্ধু বাদশা’ নামে ডাকেন।

সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, বাদশা মিয়ার বাড়ি রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে শানেরহাট ইউনিয়নের মেষ্টা গ্রামে। কৃষকের সন্তান বাদশা মিয়া আর্থিক অনটনে লেখাপড়া করতে পারেননি। সাত বছর বয়সে তিনি মাঠে ছাগল, গরু চরানোর কাজ শুরু করেন। একটু বড় হওয়ার পর পেশা দাঁড়ায় দিনমজুরি। সংসারে তার এক ছেলে ও এক মেয়ে। কৃষি জমি নেই। চার শতক জমির ওপর তার বাড়ি।

স্থানীয় লোকজন জানান, প্রায় ১০ বছর ধরে শুক্রবার এলেই ৭২ বছর বয়সী বাদশা মিয়া বাইসাইকেলের পেছনে গাছের চারা নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। ইউনিয়নের যে কোনো মসজিদে জুমার নামাজ আদায়ের পর গাছের উপকারিতা সম্পর্কে লোকজনকে ধারণা দেন। গাছের চারা উপহার দিয়ে গাছ লাগানোরও পরামর্শ দেন।

বাদশা মিয়াকে অনেকে পাগল বলেছেন, অনেকে উপহাশ করেছেন; কিন্তু তাকে দমাতে পারেনি। গাছকে ভালোবেসে তিনি গাছ লাগিয়ে গেছেন যেখানে জায়গা পেয়েছেন সেখানেই।

আজকে আমরা পরিবেশ বিপর্যয় এক মারাত্মক হুমকির মধ্যে আছি। বাংলাদেশের বায়ু ক্রমেই দূষিত হয়ে উঠছে। গাছের অভাবে পাখিরাও বাসা বানাতে পারছে না। নানা অবকাঠামো নির্মাণের জন্য আমরা ক্রমাগত গাছ কেটে যাচ্ছি। আমরা ধীরে ধীরে আমাদের প্রকৃতি ও জীব-বৈচিত্র্যকে হত্যা করছি।

সেখানে বাদশা মিয়া শুধু অনুপ্রেরণার নাম নয়, আমাদের এক আলোকবর্তিকার নাম। বাদশা মিয়া প্রমাণ করলেন, অর্থ-সম্পদ নয় সদিচ্ছা আর ভালোবাসাই যথেষ্ট। আমরা সরকারকে বলবো, বাদশা মিয়াকে তার কাজের জন্য রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিতে। আর স্থানীয় প্রশাসন যেন বাদশা মিয়াকে তার কাজে সহযোগিতা করে। এই ধ্বংসের যুগে বাদশা মিয়াই আমাদের পথ-প্রদর্শক।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ