ট্রাফিক পুলিশ ফিরে আসুক রাস্তায়
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পরিপ্রেক্ষিতে দেশে সরকার পতন হয়েছে পাঁচ দিন হয়ে গেল। এর মধ্যে জনজীবন স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা বাড়ছে; কিন্তু ট্রাফিক পুলিশের কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি। এখনো রাজধানীসহ দেশের অনেক ব্যস্ত সড়কে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়; কিন্তু এভাবে কতদিন? ট্রাফিক পুলিশকেই এই নিয়ন্ত্রণ নিতে হবে।
আজ সোমবার (১২ আগস্ট) কিছু ট্রাফিক পুলিশ তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে। তাদের সঙ্গে শিক্ষার্থীরাও আছেন; কিন্তু যত দ্রুত সম্ভব ট্রাফিক পুলিশকে পুরো নিয়ন্ত্রণ নিতে হবে। শিক্ষার্থীদের ফিরে যেতে হবে হবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। এতে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনারও ক্ষতি হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন বটে; কিন্তু তারা প্রশিক্ষিত নন। ফলে ব্যস্ত রাস্তায় তাদের অনেক সময়ই হিমশিম খেতে হয়। রাজধানীর অনেক ব্যস্ত রাস্তায় আজ অনেক বিশৃঙ্খলা দেখা গেছে। তা ছাড়া, ছাত্রদের সঙ্গে সাধারণ মানুষের কিছু বাগবিতণ্ডাও হচ্ছে। কারণ, শিক্ষার্থীরা সামান্যতম ত্রুটিও মানতে নারাজ। এভাবে চলতে থাকলে শিগগির যাত্রী ও চালকদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ বাধবে।
চলমান পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের প্রতি অনেক মানুষ সহানুভূতি দেখিয়েছেন। তাদের খাবার দিয়েছেন। অনেকে ছাতা কিনে দিয়েছেন; কিন্তু এটা অবশ্যই মানতে হবে প্রশাসনিক ব্যবস্থা ছাড়া এভাবে চলতে থাকলে দ্রুতই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ব্যাহত হবে। এখন পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মানুষও উপলব্ধি করতে পারছে, থানা-পুলিশি কার্যক্রমের পাশাপাশি রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশের কার্যক্রমও জোরেশোরে শুরু করা দরকার।
সরকার পতনের আগে পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। অনেক শিক্ষার্থীকে হত্যা করা হয়েছে। অনেক পুলিশও নিহত হয়েছেন। পুলিশের অতিরিক্ত বল প্রয়োগে ছাত্র-জনতা ক্ষুব্ধ। ফলে আতঙ্কিত হয়ে পুলিশ থানা ত্যাগ করেছেন। অন্তবর্তীকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন গত বুধবার ঘোষণা দিয়েছেন, বৃহস্পতিবারের মধ্যে পুলিশকে থানায় ফিরতে। তাতে থানার কার্যক্রমও কিছু কিছু শুরু হয়েছে।
চাকরিতে যোগদানের আগে পুলিশ শপথ গ্রহণ করেছেন- তারা জনগণের বন্ধু হয়ে কাজ করবেন। আর কোনো অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে জড়াবেন না। পুলিশ সদর দপ্তর থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে জানা যায়, দেশের ৬৩৯টি থানার মধ্যে গতকাল বিকেল ৩টা পর্যন্ত ৫৩৮টি থানার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এর মধ্যে বিভিন্ন মেট্রোপলিটনের ১১০টি থানার মধ্যে ৮৪টি এবং জেলার ৫২৯টি থানার মধ্যে ৪৫৪টি থানার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এটা ইতিবাচক ঘটনা।
আমরা চাই দেশে দ্রুতই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হোক। চলমান পরিস্থিতে অনেকেই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। নাগরিকদের নিরাপত্তা প্রদান রাষ্ট্রের দায়িত্ব। মনে রাখতে হবে, একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের পতন হয়েছে, দেশের রাষ্ট্র-ব্যবস্থা ভেঙে পড়েনি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নীতিনির্ধারকদের এটা বুঝতে হবে।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে