Views Bangladesh Logo

জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান হাসপাতালের চোখ উন্মোচিত হোক

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিদের সঙ্গে চিকিৎসক-কর্মচারীদের হাতাহাতি ও সংঘর্ষের জের ধরে আজ পঞ্চম দিনের মতো রাজধানীর জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা বন্ধ শুধু উদ্বেগজনক নয়, অত্যন্ত দুঃখজনক। জাতীয় চক্ষু হাসপাতাল কবে খুলবে তাও জানেন না রোগীরা। দূরদূরান্তর থেকে রোগীরা এসে ফিরে যাচ্ছেন। এতে তারা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিরাপত্তার অভাবে চিকিৎসকসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কাজে ফিরছেন না। তাছাড়া আহতরা বাসা-বাড়িতে হামলার পরিকল্পনা করছেন এমন গুঞ্জনে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন হাসপাতালটির চিকিৎসকরা। এমন পরিস্থিতিতে শনিবার স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে রোগীদের বিকল্প হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চক্ষু রোগীরা নিকটস্থ হাসপাতালের চক্ষু বিভাগ থেকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করবেন।

হাসপাতাল অত্যন্ত স্পর্শকাতর একটি স্থান। রোগী ও চিকিৎসকের আস্থার সম্পর্কের ভিত্তিতেই হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা পরিচালিত হয়। সেখানে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আহত রোগীরা অবশ্যই অগ্রাধিকার পাওয়ার দাবি রাখে; কিন্তু চিকিৎসক ও নার্সদের বিরুদ্ধে তাদের অভিযোগ রয়েছে। যার ফলে সংঘর্ষের সূত্রপাত। যে কোনো কারণেই সংঘর্ষ ঘটুক, তা দ্রুত মীমাংসা করা উচিত ছিল। এর জন্য টানা পাঁচ দিন হাসপাতাল অচলাবস্থা কাটাতে গত শুক্রবার হাসপাতালের কয়েকজন সচিব, হাসপাতাল প্রতিনিধি, ছাত্র প্রতিনিধিসহ বৈঠক হলেও সিদ্ধান্তে আসতে পারেননি তারা।

হাসপাতালটির চিকিৎসাধীন জুলাই যোদ্ধা রোহান আহমেদ বলেন, আমি হাসপাতালেই আছি। সব ধরনের সেবা কার্যক্রম বন্ধ আছে। আমাদের খাবার ও ওষুধ বাইরে থেকে নিয়ে আসা হচ্ছে। দুপুরে চিকিৎসা চালুর বিষয়ে বৈঠক হলেও কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। গত বুধবারও আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠক হয়। বৈঠকে বেশ কয়েকজন উপদেষ্টাসহ এনসিপির নেতা নাহিদ ইসলাম, হাসনাত আব্দুল্লাহ ও আবু বকর উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে আহত ৮-১০ জন জুলাই যোদ্ধাকে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট থেকে অন্যত্র স্থানান্তর করার বিষয়ে তারা সম্মত হয়েছেন। হাসপাতাল সূত্র জানায়, পুরো সেবা কার্যক্রম স্থগিত রাখা হয়েছে। কর্মচারীরা নিরাপত্তাহীনতার অভিযোগ করছেন। তাদের ভাষ্য, হাসপাতালের ভেতর জুলাই যোদ্ধাদের কিছু অংশ সহিংস আচরণ করেছে। ভাঙচুর ও হামলার ঘটনা ঘটেছে বারবার। এতে আতঙ্কে রয়েছেন চিকিৎসক ও স্টাফরা। হাসপাতাল বন্ধ থাকবে এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

তার মানে ঘটনাটির সমাধান তো হচ্ছেই না, বরং উত্তরোত্তর আরও বৃদ্ধি পাবারই আশঙ্কা দেখা যাচ্ছে। যদি গণঅভ্যুত্থানে আহত রোগীরা হাসপাতাল ছেড়ে চলে যায়ই, তাদের মনে ক্ষোভ রয়ে যাবে। সাধারণ রোগীরাও হাসপাতালটির ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলবে। আবার এ কথাও সত্য যে, নিরাপত্তা সংকটে ভুগলে ডাক্তার-নার্স-কর্মচারীরা হাসপাতালে আসবেন কেন? কিন্তু সরকার কেন এখনো বিষয়টির সুরাহা করতে পারল না তা একটি বড় প্রশ্ন।

তার মানে কি সরকারের আদেশ-নির্দেশ হাসপাতালটিতে কাজ করছে না? সরকারের জানা উচিত কোনো হাসপাতালই এক দিনের জন্যও বন্ধ থাকতে পারে না, সেখানে চক্ষু হাসপাতালের মতো একটি জরুরি চিকিৎসাসেবা কোনোভাবেই টানা পাঁচ দিন এবং অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকতে পারে না। পাশাপাশি এ কথাও বলা প্রয়োজন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিরা কেন চিকিৎসাসেবা নিয়ে বারবার প্রশ্ন তোলেন, কেন তাদের চিকিৎসার দাবিতে রাস্তায় নামতে হয়, তাও ভেবে দেখতে হবে।

এটা কোনোভাবেই কাম্য ছিল না। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে সরকার স্বাভাবিক হিতাহিত জ্ঞান হারিয়েছে। আমরা চাই এ ঘটনার দ্রুত সুরাহা হোক। হাসপাতালটির অচল অবস্থা দূর করে দ্রুত চিকিৎসাসেবায় ফিরে যাক। জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট হাসপাতালেরও চক্ষু উন্মোচিত হোক, সরকারেরও চোখ খুলুক।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ