ত্যাগের মহিমায় উদযাপিত হোক ঈদুল আজহা
ঈদুল আজহা মানে ত্যাগের উৎসব। এই ত্যাগ শুধু পশু কোরবানি নয়, কোরবানির মধ্য দিয়ে মানুষের মনের যত পাশবিক দিক, সেগুলো ত্যাগ করাই এই ধর্মীয়-উৎসবের মর্মকথা। সমগ্র মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রতি বছর এই ঈদ আসে ত্যাগের মহিমা নিয়ে। সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের দেশ বাংলাদেশেও ঈদুল ফিতরের মতো ঈদুল আজহাও পালিত হয় প্রধান ধর্মীয় উৎসব হিসেবে। হাজার বছর ধরে একই রকম উৎসব পালিত হলেও প্রতি বছরই দিবসটির নতুন মহিমা থাকে, যেহেতু মানুষ সব সময়ই তাদের পশুবৃত্তি থেকে বেরিয়ে আরও শুদ্ধ ও পবিত্র হতে চায়।
সেই দিক বিবেচনা করলে বাংলাদেশের মুসলমান সম্প্রদায়ের জন্য এবারের ঈদুল আজহার তাৎপর্য অনেক গভীর। কারণ আমাদের মধ্যে এখনো নানা বিভাজন বিরাজমান। এসব বিভাজন গোছানোর একমাত্র উপায় প্রাণী কোরবানির সঙ্গে সঙ্গে যার যার মনের অহম, অহঙ্কারের পশুটিকে হত্যা করা। এই ঈদ আমাদের শেখায় নিজের অর্জিত কিছু অন্যের জন্য ত্যাগ করতে; কিন্তু আমরা কি সত্যিই তা পারি? অনেকেই কোরবানির গোশতের বড় অংশ রেখে দেন আত্মীয়-স্বজন ও নিজের জন্য।
গরিব, দরিদ্র মানুষের কাছে তা পৌঁছায় নামমাত্র। অথচ ঈদের আসল সৌন্দর্য তো এখানেই- সবার মধ্যে আনন্দ ভাগাভাগি করে নেয়ার। শুধু কোরবানির মাংস নয়, আমাদের যা কিছু ভালো, তা-ই আমাদের সবার সঙ্গে ভাগ করে নিতে হবে এটাই কোরবানির শিক্ষা। কোরবানির ঈদ ঘিরে বাংলাদেশে তৈরি হয় এক অন্যরকম আমেজ। পশুর হাট বসে দেশের নানা প্রান্তে, মানুষ স্বজনদের সঙ্গে ঈদ করার প্রস্তুতি নেয়, শহর থেকে গ্রাম, সব জায়গায় এক ধরনের উদ্দীপনা তৈরি হয়।
তবে এই উৎসবের সঙ্গে সঙ্গে কিছু সমস্যাও প্রতি বছর ঘুরে ফিরে আসে- যা আমাদের ঈদের আনন্দকে অনেক সময় ম্লান করে দেয়। তা ছাড়া বর্তমান সময়ে পরিবেশ সুরক্ষা এবং পশুর প্রতি সহানুভূতি খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। রাস্তার পাশে পশু জবাই, খোলা জায়গায় বর্জ্য ফেলে রাখা, কিংবা পশুদের প্রতি নিষ্ঠুরতা- এসব আমাদের ঈদের চেতনার সঙ্গে মানায় না। তাই পরিবেশবান্ধব ও মানবিক কোরবানির সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে এখনই।
এখন সময় এসেছে, আমরা যেন এই উৎসবকে কেবল আনুষ্ঠানিকতা না বানিয়ে, একে মানবিক মূল্যবোধ আর সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে দেখি। পরিবেশবান্ধব কোরবানি, দরিদ্রদের প্রতি বেশি সহানুভূতি এবং শৃঙ্খলার সঙ্গে পুরো প্রক্রিয়া পরিচালনা- এই হোক ঈদুল আজহার শিক্ষা। বর্তমানে আমাদের দেশ কিছুটা রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
এই সংকট কাটিয়ে আমরা যেন সুন্দর একটি দেশ গড়ে তুলতে পারি তার প্রতিজ্ঞাও এখান থেকে ব্যক্ত হোক। এবারের ঈদে প্রায় ১০ দিন ছুটি। পরিবার-প্রিয়জনের সঙ্গে নিরাপদে, নিশ্চিন্তে সবার ঈদের আনন্দ অতিবাহিত হোক তাই আমাদের কামনা। ভিউজ বাংলাদেশের সব পাঠকের জন্য ঈদ মোবারক।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে