শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রথম সাক্ষ্য দিলেন খোকন চন্দ্র
জুলাই-আগস্টের গণআন্দোলনে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ‘গণহত্যা’ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রথম সাক্ষ্য দিয়েছেন জুলাই গণআন্দোলনে আহত খোকন চন্দ্র বর্মণ। পুলিশের গুলিতে তার বাম চোখ, মুখ, নাক নষ্ট হয়ে চেহারা বিকৃত হয়ে গেছে।
মামলাটির তিন আসামির মধ্যে রাজসাক্ষী হয়েছেন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। তিনি আগেই এই মামলায় মানবতাবিরোধী অপরাধের দায় স্বীকার করে নিয়েছেন। অন্য আসামি সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল পলাতক।
খোকন চন্দ্র রোববার (৩ আগস্ট) ট্রাইব্যুনাল-১ এ নিজের ওপর ঘটে যাওয়া নৃশংস আচরণসহ রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানা এলাকায় তার চোখের সামনে ঘটা মানুষ হত্যার বিবরণ দিয়েছেন। এজন্য শেখ হাসিনা ছাড়াও সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমান ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনকে দায়ী করেন তিনি।
চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনালে চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনকে রাজসাক্ষী হিসেবে কারাগার থেকে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে হাজির করা হয়। ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
খোকন বলেন, ‘২০২৪ সালের ৫ আগস্ট দুপুরে যাত্রাবাড়ী থানার সামনে পুলিশ গুলি করে আমার বাম চোখ, নাখ ও মুখ নষ্ট করেছে। হাজার হাজার মানুষকে মারা হয়েছে। আমার চোখের সামনে অনেককে গুলি করা হয়েছে। আমাকে আহত করাসহ হাজার হাজার মানুষ হত্যার জন্য দায়ী শেখ হাসিনা, ‘কাউয়া কাদের’, আসাদুজ্জামান খান কামাল, শামীম ওসমান ও আব্দুল্লাহ আল মামুন’।
এ সময় প্রসিকিউশন তার কাছে জানতে চান, ‘কাউয়া কাদের বলতে কাকে বোঝাচ্ছেন?’ জবাবে খোকন একাধিকবার বলেন, ‘কাউয়া কাদের বলতে ওবায়দুল কাদেরকেই বোঝাচ্ছি’। এ সময় ট্রাইব্যুনালে হাস্যরসও হয়।
এর আগে মামলাটির সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন (ওপেনিং স্টেটমেন্ট) করেন ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মুহাম্মদ তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে জুলাই আন্দোলন দমনে অপরাধের প্রমাণ এতোটাই স্পষ্ট ও শক্তিশালী যে, বিচারে বিন্দুমাত্র সন্দেহের সুযোগ থাকবে না’।
তার আগে ট্রাইব্যুনালের কাছে মামলার আসামিদের প্রচলিত আইনে সর্বোচ্চ সাজার আরজি জানান অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান।
তিনি বলেন, ‘আজকের দিনটি ঐতিহাসিক। পৃথিবীর ইতিহাসে শেখ হাসিনার মতো কোনো স্বৈরাচারের জন্ম হয়নি। তিনি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মিথ্যাবাদী স্বৈরাচার।’
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘কোনো স্বৈরাচারকে মিথ্যার ওপর পিএইচডি করতে হলে তাকে শেখ হাসিনার কাছে শিখতে হবে। পৃথিবীর সব স্বৈরশাসকের যদি কোনো সমিতি করা হয়, শেখ হাসিনা হবেন তার সভাপতি। দেশের ভবিষ্যতের স্বার্থে, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বার্থে স্বৈরাচার ও তার সহযোগীদের সর্বোচ্চ শাস্তি আমরা চাই।’
পৃথিবীর কোন স্বৈরাচারের কী পরিণতি হয়েছে, তাও ট্রাইব্যুনালে তুলে ধরেন অ্যাটর্নি জেনারেল।
১০ জুলাই মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলাটিতে শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু করেন ট্রাইব্যুনাল। একই সঙ্গে ৩ আগস্ট প্রসিকিউশনের সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন ও প্রথম সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করেন।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে