Views Bangladesh Logo

খণ্ডকালীন কাজের সুযোগ ৫০ শিক্ষার্থীর

কপোতাক্ষের কাঁকড়া যাচ্ছে চীন, কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়ায়

Rezaul karim

রেজাউল করিম

সাগরদাঁড়ির কপোতাক্ষ নদ পারে উৎপাদিত কাঁকড়া যাচ্ছে চীন, কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও মালয়েশিয়ায়। মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্মভূমি সাগরদাঁড়ির কপোতাক্ষ পারে ৯ বিঘা জমির ঘেরে ৭৩ হাজার বাক্সে কাঁকড়া চাষ করা হচ্ছে। ঘেরের পানিতে ভাসছে প্লাস্টিকের ছোট ছোট হাজারো বাক্স। ওই বাক্সে শীলা সেরেটা জাতীয় কাঁকড়ার চাষ করা হয়। মাঝ বরাবর বাঁশ আর কাঠ দিয়ে বানানো হয়েছে টিনের ছাউনি দেওয়া টংঘর। মূলত এসব বাক্সের মধ্যে চাষ হচ্ছে কাঁকড়া। এখান থেকে প্রতি মাসেই বিদেশে কাঁকড়া রপ্তানি করা হয়। এবার চীন, কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও মালয়েশিয়ার পাশাপাশি জাপানেও কাঁকড়া রপ্তানির উদ্যোগ নিয়েছেন তরুণ উদ্যোক্তা কেশবপুরের আব্দুল্লাহ আল মামুন সজীব।

আব্দুল্লাহ আল মামুন সজীব কেশবপুর উপজেলার ব্যাসডাঙ্গা গ্রামের আবু তালেবের ছেলে। তিনি চাকরি করতেন যমুনা গ্রুপের করপোরেট এক্সিকিউটিভ পদে। উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত এ যুবক গ্রামের মানুষের উন্নয়নে সিদ্ধান্ত নেন খামারির উদ্যোক্তা হওয়ার। সিদ্ধান্ত নিয়েই ২০১৯ সালের শেষে চাকরি ছেড়ে বাড়িতে এসে মুরগি খামার ও ফলের বাগান করেন। কিন্তু মুরগি খামার ও ফলের বাগানে ভালো করতে না পারলেও মনোবল হারাননি। শেষে মাছ চাষের পাশাপাশি কাঁকড়া চাষের উদ্যোগ নিয়েই সফলতা পেয়ে যান।

কেশবপুর উপজেলার সাগরদাঁড়িতে মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তর বাড়ির সামনের কপোতাক্ষ নদের ধারেই সজিবের কাঁকড়ার ঘের। এ ঘেরে দেশে বিদ্যমান ১৭ গ্রেডের কাঁকড়ার মধ্যে মাত্র দুটি গ্রেডের চাষ করেন তিনি। গত ৩ বছর ধরে এখানে কাঁকড়া চাষ করা হচ্ছে। সুন্দরবন সংলগ্ন নদী থেকে কাঁকড়া সংগ্রহ করে এ ঘেরের বাক্সে রেখে গ্রেডিং করা হয়। বাক্সে কাঁকড়া ঢোকানোর ৩ ঘণ্টার মধ্যেই খোলস শুরু হয়। এরপর ২৫ দিনের পরিচর্যা শেষে তা পুরাপুরি গ্রেডিংয়ে পরিণত হয়। প্রায় ৭৩ হাজার বাক্সে কাঁকড়ার চাষ করছেন সজীব। তার চাষ করা কাঁকড়া যাচ্ছে দেশের পাঁচ তারকা হোটেলসহ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, চীন, মালয়েশিয়ার মত দেশে। এর মাধ্যমে তিনি যেমন স্বাবলম্বী হয়েছেন।

তার কাঁকড়ার ঘেরে কর্মসংস্থান করেছেন ২৪ জনের। সজীবের ৯ বিঘার ঘেরের ৫ বিঘাতে ৭৩ হাজার বাক্সে চাষ হচ্ছে সফট সেল কাঁকড়া এবং ৪ বিঘাতে সনাতনী পদ্ধতিতে চাষ হচ্ছে হার্ড সেল কাঁকড়ার। কাঁকড়ার খাদ্য হিসেবে প্রতিদিন প্রায় ২মণ তেলাপিয়া মাছ কেটে খাওয়ানো হয়। কাঁকড়া ঘেরের তরুণ উদ্যোক্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন সজীব বলেন, কাঁকড়া বহন করা ফ্রিজিং গাড়ি চলে আসে ঘের পারে। ক্রেতারা ঘের থেকে বাছাই করা গ্রেডিং কাঁকড়া ওই ফ্রিজিং গাড়িতে করে নিয়ে যায়। প্রতি কেজি কাঁকড়া ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকায় বিক্রি হয়।

এ কাঁকড়া শুধু পাঁচ তারকা হোটেলে বিক্রি ও বিদেশে রপ্তানি করা হয়। স্থানীয় খোলা বাজারে বিক্রি করা হয় না। ঘের থেকে যেমন কাঁকড়া বিক্রি হচ্ছে তেমনিভাবে সুন্দরবনের নদী থেকে ধরা বিভিন্ন গ্রেডের কাঁকড়া এনে ঘেরে দেয়া হয়। তিনি আরও জানান এ ঘেরে ১জন ম্যানেজার ও ১জন সুপারভাইজার ছাড়াও ২২ জন শিক্ষার্থী খণ্ডকালীন কাজ করেন। এখানে কাজ করে তারাও অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। তার উৎপাদিত কাঁকড়ার বিশ্বব্যাপী চাহিদা রয়েছে। এবার তিনি জাপানে কাঁকড়া রপ্তানি করার উদ্যোগ নিয়েছেন। এ ব্যাপারে জাপানি এক্সপোর্টধারীদের সাথে কথাবার্তা চূড়ান্ত হয়েছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী কোরবানি ঈদের পরেই সাগরদাঁড়ির কপোতাক্ষ নদ পার থেকে সরাসরি জাপানে কাঁকড়া রপ্তানি করতে পারবেন। অনেকেই তার দেখাদেখি কাঁকড়া চাষে ঝুঁকে পড়েছেন।

তরুণ এই উদ্যোক্তা দৃঢ়তার সাথে উল্লেখ করেন, গ্রামের মানুষকে স্বাবলম্বী করার মানসে তার এ উদ্যোগ নেওয়া। সে ক্ষেত্রে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে যেমন কাঁকড়া চাষের প্রসার ঘটবে তেমনি কর্মহীন শত শত মানুষের কর্মসংস্থান হবে এ কাঁকড়া ঘেরের মাধ্যমে। তার ঘেরে লেখাপড়ায় সহযোগিতা করার জন্য ২২ জন শিক্ষার্থীকে খণ্ডকালীন কাজ করার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। আগামীতে অন্তত ৫০ জন শিক্ষার্থীকে তার ঘেরে কাজ করার সুযোগ করে দেবেন বলে তিনি আশাবাদী।

এ ব্যাপারে কেশবপুর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা সুদীপ বিশ্বাস বলেন, মূলত এ ঘেরটি সাগরদাঁড়ির কপোতাক্ষ নদ পারের কেশবপুর ও তালা উপজেলার মানুষের জমিতে তৈরি করা হয়েছে। ছোট ঘের হলেও প্রায় ৭০ থেকে ৮০ হাজার কাঁকড়া রয়েছে এ ঘেরে। ২২ জন শিক্ষার্থী লেখা পড়ার পাশাপাশি কাঁকড়া ঘেরে খণ্ডকালীন কাজ করে স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করছেন। এ ঘেরের উৎপাদিত কাঁকড়া বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে।

সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে অসংখ্য বেকার যুবক কপোতাক্ষ নদ পারে এ ধরনের কাঁকড়া চাষের মাধ্যমে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে সক্ষম হবেন।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ