৩৬ জুলাই: অভূতপূর্ব এক গণঅভ্যুত্থানের ঘটনাপঞ্জি
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট এক অভূতপূর্ব গণ-আন্দোলনের মধ্য দিয়ে পতন ঘটে দীর্ঘদিনের ফ্যাসিস্ট স্বৈরশাসক হাসিনা সরকারের। ছাত্র-জনতা এই আন্দোলনকে জুলাই আন্দোলন নামেও অভিহিত করেন। এর কারণ আন্দোলনের তীব্রতা লাভ করেছিল পুরো জুলাই মাসজুড়ে। এমনকি জুলাই মাস শেষ হয়ে গেলেও আন্দোলনকারীরা দিন গুনতে থাকেন ৩২ জুলাই, ৩৩ জুলাই, ৩৪ জুলাই, ৩৫ জুলাই নামে। কারণ আগস্ট মাস আওয়ামী লীগের শোক পালনের মাস। আন্দোলনকারীরা বরং জুলাইয়ের শহীদদের শোককেই জীবন্ত রাখতে চায়। প্রতিদিনই বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে অসংখ্য মানুষ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে নিহত হতে থাকেন। সরকারের দমন-পীড়ন এক সময় চরমমাত্রা লাভ করে। আন্দোলন দমাতে সরকার এক ভয়ংকর গণহত্যা শুরু করে। প্রায় ১ হাজার ৫০০ মানুষকে হত্যা করে আওয়ামী লীগ সরকার। মৃত্যুর মিছিল দেখে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয়। ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা শেখ হাসিনা ৫ আগস্ট বিকেলে ভারতে পালিয়ে যান। অবশেষে অসংখ্য প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত হয় সেই কাঙ্ক্ষিত বিজয়।
আজ সেই গণঅভ্যুত্থানের ১ বছর পূর্ণ হলো। সেই সময়ের উত্তাল দিনগুলোর কথা স্মরণ করা যাক:
প্রেক্ষাপট
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের নেপথ্য কারণ সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন। যা শুরু হয়েছিল ২০১৮ সালে। সরকারি চাকরির নিয়োগের ক্ষেত্রে ৫৬ শতাংশ কোটা ছিল। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও নাতি-নাতনিদের জন্য, ১০ শতাংশ নারীদের জন্য, ১০ শতাংশ পিছিয়ে থাকা জেলার মানুষদের জন্য, ৫ শতাংশ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সদস্যদের জন্য এবং ১ শতাংশ শারীরিক প্রতিবন্ধীদের জন্য রাখা ছিল।
কোটাভিত্তিক পদ কমানো, শূন্য পদে মেধাভিত্তিক নিয়োগ ও সরকারি চাকরিতে সবার জন্য অভিন্ন বয়সসীমা নির্ধারণের দাবিতে রাস্তায় নামেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থী ও চাকরি প্রত্যাশীদের বিক্ষোভ উপেক্ষা করে ২১ মার্চ সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোটাব্যবস্থা বহালই থাকবে বলে ঘোষণা দেন। প্রতিবাদের অংশ হিসেবে সারা দেশে কয়েক হাজার বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করেন, মিছিল বের করেন এবং মহাসড়ক অবরোধ করতে শুরু করেন। ২০১৮ সালের ১১ এপ্রিল শেখ হাসিনা কোটাব্যবস্থা সম্পূর্ণ বাতিলের ঘোষণা দেন।
এর মধ্যে কেটে যায় ৪টি বছর। তৃতীয়বারের মতো আওয়ামী লীগ সরকার একটি অবৈধ নির্বাচন আয়োজনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় আসে। গুম, খুন, দলীয়করণ, চাঁদাবাজি, গণতন্ত্র হত্যা- ইত্যাদি কারণে আওয়ামী লীগ সরকারের ওপর জনগণের একটা চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছিল।
২০২৪ সালের ৫ জুন আবারও সেই কোটা সংস্কার আন্দোলন মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট সরকারি দপ্তর, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন করপোরেশনের চাকরিতে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে (নবম থেকে ১৩তম গ্রেড) মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন। এর প্রতিক্রিয়ায় ছয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ শুরু করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ ছয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোটা পদ্ধতির বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ করে। আন্দোলনকারীদের অভিযোগ ছিল, সরকার বিচার বিভাগের ওপর অযাচিত হস্তক্ষেপের মাধ্যমে কোটা পুনর্বহালের নীলনকশা বাস্তবায়ন করছে। ২০২৪ সালের ১৭ জুন ছিল ঈদুল আজহা। ঈদুল আজহার ছুটি উপলক্ষে ছাত্ররা বাড়ি চলে গেলে আন্দোলন স্তমিত হয়ে যায়। আন্দোলন বেগবান হতে থাকে আবার জুলাই মাসের শুরু থেকেই।
আন্দোলনের প্রাথমিক পর্যায়
১ থেকে ৬ জুলাই ঈদের ছুটি কাটিয়ে শিক্ষার্থীরা ফিরে এসেছেন তাদের প্রিয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস আবার মুখরিত হয়ে উঠেছে ছাত্রছাত্রীদের পদচারণায়। এ সময় কোটা সংস্কারের আন্দোলনকারীরা আবার জোটবদ্ধ হতে থাকেন। ছোট ছোট মিছিল-সমাবেশের আয়োজন করেন তারা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যোগ দেয় আরও কয়েকটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। আন্দোলনকারীরা দাবি পূরণের জন্য ৪ জুলাই সময়সীমা নির্ধারণ করেন।
আকাশ তখনই কালো হতে শুরু করেছে শ্রাবণের মেঘে। মাঝে মাঝে থেকে থেকে বৃষ্টি। এর মধ্যে ২ জুলাই ঘণ্টাখানেকের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন। ঢাকা থেকে খবর পাওয়া যায় ঐ দিন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও বিক্ষোভ মিছিল বের করেছেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের সামনে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অন্তত ২০ মিনিট অবরোধ করে রেখেছেন ছাত্ররা।
শাহবাগ মোড় রাজধানী ঢাকার অত্যন্ত ব্যস্ততম একটি সড়ক। চার রাস্তার মোড়। ৩ জুলাই প্রায় দেড় ঘণ্টা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শাহবাগ মোড় অবরোধ করে রাখেন। দীর্ঘ জ্যাম ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। তখনো অনেক সাধারণ মানুষ জানেন না, কেন এই অবরোধ! আরও কয়েকটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও এই বিক্ষোভ অব্যাহত থাকে।
৪ জুলাই খুব গরম পড়েছে। কোথাও কোথাও বৃষ্টি হয়েছিল। সরকারি চাকরির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করা হাইকোর্টের রায় আপাতত বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে ছয় বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন। শুনানিতে আপিল বিভাগ রাষ্ট্রপক্ষের উদ্দেশে বলেন, আপাতত হাইকোর্টের রায় যেভাবে আছে, সেভাবে থাকুক। রায় প্রকাশ হলে আপনারা নিয়মিত আপিল দায়ের করেন। আমরা শুনবো।
আপিল বিভাগের এমন সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে টানা তৃতীয় দিনের মতো রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। শাহবাগে অবস্থানকালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা এখানে এক ঘণ্টার জন্য আসিনি। আমরা দাবি আদায় করার জন্য এসেছি। দাবি আদায় করে ঘরে ফিরব। শিক্ষার্থীরা জেগে উঠেছেন। দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলে দাবি মানতে বাধ্য করা হবে।’
ফলে তার পরদিন থেকেই মূলত আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করে এবং খুব দ্রুতই সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। ৫ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে শিক্ষার্থীরা অবস্থান কর্মসূচি, বিক্ষোভ, সমাবেশ এবং সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন। একই সঙ্গে তারা ৭ জুলাই থেকে ক্লাস পরীক্ষা বর্জনের আহ্বান জানান। সারা দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রচারণা জোরদার করার জন্য, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারে শিক্ষার্থীরা অবস্থান কর্মসূচি, বিক্ষোভ সমাবেশ এবং সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন এবং ৭ জুলাই (রোববার) থেকে ক্লাস পরীক্ষা বর্জনের আহ্বান জানিয়ে দিনের কর্মসূচি শেষ করেন। তারা এর পাশাপাশি ৬ জুলাই (শনিবার) প্রতিবাদ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
৬ জুলাই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অবস্থান, বিক্ষোভ সমাবেশ ও রাস্তা অবরোধ করেন। ৬ জুলাই শাহবাগের অবরোধ কর্মসূচি থেকে সারা দেশে আলোচিত ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি ঘোষণা করেন আন্দোলনকারীরা।’ প্রধান সমন্বয়ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাহিদ ইসলাম পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করেন, ‘আগামীকাল বিকাল ৩টা থেকে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি ঘোষণা করা হলো। আগামীকাল সারা দেশে প্রতিটি মোড়, প্রতিটি সিগনাল ব্লক করা হবে।’
বাংলা ব্লকেড
মানুষ এই প্রথম এরকম একটি বাংলা-ইংরেজি মিশ্রিত নতুন শব্দ শুনেন। শব্দটি তাদের চমকে দেয়। বাংলা ব্লকেডে সারা ঢাকা শহর ৭ জুলাই স্থবির হয়ে যায়। বাংলা ব্লকেড কর্মসূচির প্রথম দিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শাহবাগ মোড়, ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা সায়েন্সল্যাব মোড়, ইডেন কলেজের শিক্ষার্থীরা নীলক্ষেত মোড়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক এবং কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করেন। প্রচণ্ড জ্যামের মধ্যে যাত্রীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানবাহনে বসে থাকতে হয়। যারা এর আগে এই আন্দোলনের কথা জানতেন না তারাও সেদিন বাধ্য হন এই আন্দোলনের কথা জানতে। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সারা দেশের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা। এ বিক্ষোভকে ‘অযৌক্তিক’ উল্লেখ করে বিষয়টি সর্বোচ্চ আদালতে নিষ্পত্তি হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা।
৮ জুলাই দ্বিতীয় দিনের মতো ‘বাংলা ব্লকেড’ করেন কোটা আন্দোলনকারীরা। পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে শিক্ষার্থীরা এদিন ঢাকার ১১টি স্থানে অবরোধ কর্মসূচি, ৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ, ৬টি মহাসড়কসহ তিনটি স্পটে রেলপথ অবরোধ করেন। এছাড়া রাজধানীর বাইরে সারা দেশে ৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও ময়মনসিংহে রেলপথ অবরোধ করা হয় এবং সাভার, গোপালগঞ্জ, বরিশাল, কুষ্টিয়া, রংপুর ও কুমিল্লায় মহাসড়ক অবরোধ করা হয়। রাত সাড়ে ৮টার দিকে শাহবাগ থেকে কর্মসূচির সমাপনী বক্তব্যে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘গত ৫ জুন থেকে আমরা আন্দোলন করে আসছি। আমরা স্মারকলিপি দিয়েছি, সম্ভাব্য সব প্রক্রিয়ায় আমাদের দাবি জানিয়ে এসেছি। আমরা হুট করেই রাজপথে নামিনি। আমরা অর্ধবেলা ব্লকেড করছি; কিন্তু তাতে সীমাবদ্ধ থাকবো না।’
৯ জুলাই সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচির ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। ৯ জুলাই সন্ধ্যা ৬টার দিকে সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা ঘোষণা দেন, ১০ জুলাই সকাল ১০টা থেকে সারা দেশে শিক্ষার্থীদের সড়ক-মহাসড়ক ও রেলপথ অবরোধ করে ‘বাংলা ব্লকেড’ পালন করা হবে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের ঢাকায় আসা বন্ধ হয়ে যায়। জরুরি কাজে যারা ঢাকা এসেছিলেন তারাও আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে ঢাকা ছাড়তে থাকেন। জনদুর্ভোগ চরমে ওঠে। সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা যে আন্দোলনে নেমেছি, সেজন্য সাধারণ মানুষের ভোগান্তি হচ্ছে। আমরাও এই ভোগান্তি চাই না। আর এই ভোগান্তির জন্য সরকারকে দায় নিতে হবে। কোটার এই ইস্যুতে আমরা মনে করি সরকার ও নির্বাহী বিভাগের হস্তক্ষেপ করার এখতিয়ার আছে।
১০ জুলাই আপিল বিভাগ চার সপ্তাহের জন্য কোটার ওপর স্থিতাবস্থা জারি করেন। তবে আপিল বিভাগের এই আদেশ প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। সব গ্রেডে সরকারি নিয়োগে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবি জানান শিক্ষার্থীরা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদ লিখিত এক বার্তায় বলেন, ‘আমরা কোনো ঝুলন্ত সিদ্ধান্ত মানছি না। আমাদের এক দফা দাবি, সংসদে আইন পাস করে সরকারি চাকরির সব গ্রেডে শুধু পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য ন্যূনতম (সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ) কোটা রেখে সব ধরনের বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করতে হবে।’ এদিন সারা দেশে তৃতীয় দিনের মতো বাংলা ব্লকেড চলতে থাকে। সারা দেশের শিক্ষার্থীদের মধ্যেও আন্দোলনের তীব্রতা পেয়েছে। পুরো দেশই তখন একরকম স্থবির বলা যায়। রেল যোগাযোগও বন্ধ।
১১ জুলাই বিশেষ কোনো ঘটনা না ঘটলেও আগের আন্দোলনের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকে। রাস্তাঘাট বন্ধ। ঢাকার চাকরিজীবী-কর্মজীবীরা হেঁটে বা রিকশায় চলাচল করে অফিস করছেন। এই আন্দোলন কোন দিকে যাবে তার কোনো আলামত তখনো বোঝা যাচ্ছে না। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এদিন এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, কোটা আন্দোলনকারীরা দেশের সর্বোচ্চ আদালতের বিরুদ্ধে তাদের পেশিশক্তি ব্যবহার করছে যা অযৌক্তিক ও বেআইনি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আন্দোলনকারীরা ‘সীমা অতিক্রম করছে’। ১২ জুলাই বিকেল ৫টার দিকে শিক্ষার্থীরা শাহবাগে জড়ো হয়ে এলাকা অবরোধ করেন। এদিকে, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করতে গেলে ছাত্রলীগের একটি দল আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় ভিডিও ধারণকারী এক শিক্ষার্থীকে একটি হলে নিয়ে গিয়ে মারধর করে ছাত্রলীগের সদস্যরা। ১৩ জুলাই সাপ্তাহিক ছুটির দিন থাকলেও দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে বিক্ষোভ মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল শেষে শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রেললাইন অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। পরে শিক্ষার্থীরা সন্ধ্যায় ঢাকায় একটি সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ জানায় যে, মামলা দিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে বাধা দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। তারা ঘোষণা করে যে পরের দিন তারা সব গ্রেডের সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে স্মারকলিপি দেবেন।
রাষ্ট্রপতির কাছে স্মারকলিপি পেশ
১৪ জুলাই শিক্ষার্থীরা রাজধানীতে অবস্থান বিক্ষোভ ও অবরোধসহ মিছিল বের করেন এবং পরে তাদের দাবি জানিয়ে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনের কাছে স্মারকলিপি পেশ করেন। ১২ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল বঙ্গভবনে গিয়ে রাষ্ট্রপতির সামরিক সচিবের হাতে স্মারকলিপি তুলে দেন। বঙ্গভবন থেকে ফিরে এসে ওই দিন দুপুর ৩টার দিকে সমবেত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বক্তৃতা করেন আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম।
তুমি কে? আমি কে?- ‘রাজাকার, রাজাকার’
১৪ জুলাই সন্ধ্যায় গণভবনে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের রাজাকারের সন্তান বলে উল্লেখ করে বিতর্কিত মন্তব্য করেন যা আন্দোলনকে আরও উসকে দেয়। শেখ হাসিনার বক্তব্যের জবাবে শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস এলাকায় মধ্যরাতে বিক্ষোভ মিছিল করেন। ওই দিন মধ্যরাতে ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ শুরু হয়। মধ্যরাতে আন্দোলনে নামেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ আশপাশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। এ সময় আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রীর উক্তিকে ঘিরে ‘তুমি কে, আমি কে- রাজাকার রাজাকার’ স্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে ক্যাম্পাস।
আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা
১৫ জুলাই আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গণমাধ্যমকে বলেন, দলের ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ শিক্ষার্থীদের ‘উচিত জবাব’ দেবে। ওবায়দুল কাদেরের নির্দেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হামলা চালায় এবং নির্বিচারে তাদের পিটিয়ে অন্তত ৩০০ বিক্ষোভকারীকে আহত করে। হেলমেট পরা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে জোর করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে রড ও চাইনিজ কুড়াল নিয়ে প্রবেশ করে এবং পরে ঢামেক হাসপাতালের ভেতরে ও বাইরে আহত বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা চালায়। হাসপাতালের ভেতরে পার্ক করা বেশ কয়েকটি অ্যাম্বুলেন্স ভাঙচুর করে। কয়েক ঘণ্টার সংঘর্ষের পর আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি ছাত্রাবাস- ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হল, ফজলুল হক মুসলিম হল ও অমর একুশে হলের নিয়ন্ত্রণ নেয়। এদিকে, সন্ধ্যায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের রাজশাহী শাখার হামলায় ছয় শিক্ষার্থী আহত হন। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ককে ফোনে পরীক্ষার করার কথা বলে ডেকে ছাত্রলীগের লোকজন তাকে লাঞ্ছিত ও মারধর করে। আন্দোলনকারীরা ১৬ জুলাই বিকাল ৩টায় দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দেশব্যাপী বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের ডাক দেন।
আবু সাঈদ
১৬ জুলাই সারা দেশে শিক্ষার্থীরা ব্যাপক বিক্ষোভ করেন। আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগ-যুবলীগসহ ক্ষমতাসীন দলের লোকজন হামলা চালায়। ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রংপুরে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের তুমুল সংঘর্ষে অন্তত ৬ জন নিহত হন। এদিনই রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ (২২) নিহত হন। পুলিশের সামনে দুহাত প্রসারিত করে দাঁড়িয়ে থাকা এই শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হয়ে লুটিয়ে পড়ার ভিডিও মুহূর্তেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এতে করে আন্দোলনের উত্তাপ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। আবু সাঈদ নিহত হওয়ার ফুটেজ ও ছবি এদিন ভাইরাল হওয়ায় রাতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা পাল্টা লড়াই করে ছাত্রলীগকে ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাড়িয়ে দেন। তারা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ নেতাদের কক্ষ ভাঙচুর করার পাশাপাশি ঢাবি ও রাবি হলের বেশিরভাগ হলের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনার সরকার দেশব্যাপী স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেয়। তবে পরদিন গায়েবানা জানাজা ও কফিন মিছিলের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনকারীদের ‘রাজনীতিমুক্ত’ ক্যাম্পাস ঘোষণা
১৭ জুলাই সকালের দিকে আন্দোলনকারীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন ক্যাম্পাস থেকে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের তাড়িয়ে দেয় এবং ক্যাম্পাসকে ‘রাজনীতিমুক্ত’ ঘোষণা করেন। রাজধানীসহ দেশের অন্তত আট জেলায় হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এছাড়া অন্তত ১০টি জায়গায় সড়ক ও মহাসড়ক এবং দুই জায়গায় রেলপথ অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন আন্দোলনকারীরা। এসব ঘটনায় ৫০ জনের বেশি আহত হন। সারা দেশে সংঘর্ষ ও হামলার ঘটনায় নিহতদের স্মরণে ওই দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য এলাকায় গায়েবানা জানাজা ও কফিন মিছিল করবেন আন্দোলনকারীরা। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন এবং ঘোষণা করেন যে, তিনি অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত শুরু করবেন। কোটা প্রসঙ্গে তিনি শিক্ষার্থীদের সুপ্রিম কোর্টের রায়ের জন্য অপেক্ষা করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, এই সিদ্ধান্ত তাদের হতাশ করবে না।
কমপ্লিট শাটডাউন
১৮ জুলাই ‘সম্পূর্ণ শাটডাউন’ কর্মসূচির পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকায় ও অন্যান্য ৪৭টি জেলায় ব্যাপক সহিংসতা ঘটে। হাজার হাজার শিক্ষার্থী পরিবহন বন্ধ কার্যকর করার জন্য অন্যান্য গ্রুপের সঙ্গে যোগ দেন। পুলিশ ও অজ্ঞাত ব্যক্তিরা বুলেট, শটগানের গুলি ও রাবার বুলেট দিয়ে তাদের ওপর গুলি চালালে কমপক্ষে ২৯ জন শহীদ হওয়ার নিশ্চিত খবর পাওয়া যায়। পুলিশ ও ছাত্রলীগের লোকজন ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। আন্দোলনকারীরা বিটিভি ভবন, সেতু ভবন ও অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন। সারা দেশে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখা হয় এবং মেট্রোরেলের কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হয়।
ঢাকা ছাড়াও দেশের ৪৭টি জেলায় বিক্ষোভ, সংঘর্ষ, পুলিশের গুলি ও হামলার ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় আহত হন অন্তত ১৫০০ জন। কোথাও কোথাও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে এবং কিছু জায়গায় ক্ষমতাসীন দলের লোকজনের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ হয়। সারা দেশে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্য মোতায়েন করা হয়। সরকারি চাকরিতে কোটা ৫৬ শতাংশের পরিবর্তে ২০ শতাংশ করার প্রস্তাব দেয়া হয় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে সরকার রাজি বলে জানান আইনমন্ত্রী। রাত ৯টা থেকে ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়।
দেশজুড়ে কারফিউ জারি
১৯ জুলাই থেকে শেখ হাসিনা সরকার মধ্যরাতে দেশব্যাপী কারফিউ জারি করে। সেনাবাহিনী মাঠে নামে। ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে অবস্থান নেন সেনাসদস্যরা। কারফিউর প্রথম দিনেই অন্তত ২৬ জন নিহত হন। সরকার পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত কারফিউ অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেয় এবং নির্বাহী আদেশে ২১ ও ২২ জুলাই সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। রাজধানীর বাইরেও কয়েকটি স্থানে সংঘর্ষ হয়। মেট্রোরেলের কাজীপাড়া ও মিরপুর-১০ স্টেশনে ভাঙচুর করা হয়। এদিনই নরসিংদীর কারাগার, মেট্রোরেল স্টেশন ও বিআরটিএ অফিসসহ আরও সরকারি প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। নরসিংদীতে জনতা কারাগারে ঢুকে জেলা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে প্রায় ৯০০ বন্দিকে মুক্ত করে দেয় এবং ৮০টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ১০০০ রাউন্ডের বেশি গুলি লুট করে। শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে বাধা দেয়ার প্রয়াসে, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ জনসমাগম ও মিছিল অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত ঘোষণা করে। ২০ জুলাই কেবল ঢাকা মহানগরীতেই গুলি ও সংঘর্ষে অন্তত ৪৪ জন নিহত হন। ঢাকার বাইরে মোট ৫৯ জন নিহত হন। এতে ছাত্র, রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, পুলিশ, সাংবাদিক, পথচারীসহ কয়েক শতাধিক মানুষ আহত হন। শুরু থেকে শুধু শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে অংশ নিলেও শুক্রবার স্থানীয়দেরও আন্দোলনে যোগ দিতে দেখা গেছে।
কোটা নিয়ে হাইকোর্ট বিভাগের রায়
২১ জুলাই সুপ্রিম কোর্ট কোটা মামলায় রায় প্রদান করে, সিভিল সার্ভিসের চাকরির বেশিরভাগ কোটা বিলুপ্ত করে এবং সিভিল সার্ভিসে ৯৩% শতাংশ নিয়োগ মেধার ভিত্তিতে সাধারণ আবেদনকারীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়। কোটার মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনার সন্তানদের জন্য ৫ শতাংশ, জাতিগত সংখ্যালঘুদের জন্য এক শতাংশ এবং শারীরিক প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের জন্য এক শতাংশ কোটা নির্ধারণ করা হয়। এদিকে, বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ৫৬ জন সমন্বয়কের পক্ষ থেকে সংবাদকর্মীদের কাছে একটি যৌথ বিবৃতি পাঠানো হয় যাতে শিক্ষার্থীদের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ আরও জোরদার করার আহ্বান জানানো হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, ৩০০ জনেরও বেশি ছাত্র ও মানুষ নিহত হয়েছেন। শুধুমাত্র আদালতের আদেশ ব্যবহার করে সরকার হত্যার দায় এড়াতে পারে না। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, পুলিশ কিছু মূল সংগঠককে তুলে নিয়ে গেছে এবং তাদের বিবৃতি দিতে বাধ্য করার ব্যর্থ চেষ্টা করেছিল। সহিংসতা নিয়ে জাতিসংঘ, ইইউ, যুক্তরাজ্যের উদ্বেগ প্রকাশ করায় তিন বাহিনীর প্রধানরা (সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী) হাসিনার সঙ্গে দেখা করেন। কারফিউ চলতে থাকে এবং আরও সাতজন নিহত হন।
বাড়ছে শহীদের সংখ্যা
আগের দিনের সংঘর্ষে আহত অন্তত ছয়জন মারা যাওয়ার খবর পাওয়া যায় ২২ জুলাই। শেখ হাসিনা বিএনপি ও জামায়াতকে পরিণতির হুঁশিয়ারি দেন। স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে পাওয়ার আশা প্রকাশ করেছেন সেনাপ্রধান। বিএনপি ও জামায়াত নেতাদের গ্রেপ্তার অব্যাহত রয়েছে। আদালতের আদেশের ভিত্তিতে প্রণীত কোটা সংস্কার সংক্রান্ত গেজেট প্রজ্ঞাপনের অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এদিন সংঘর্ষে আরও ১৩ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে এবং মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮৭-এ । এর মধ্যে শহীদ হয়েছেন মীর মুগ্ধ, তাহির জামান প্রিয়, আসহাবুল ইয়ামিন, হাসান মেহেদীসহ আরও অনেকে। তাদের কারও কারও মৃত্যু দেশবাসীর মনে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। কারণ মৃত্যুগুলো ছিল অনেক নির্মম। বিশেষ করে শহীদ ইয়ামিনের লাশ পুলিশের এপিসির ছাদ থেকে ফেলে দেয়ার দৃশ্য এবং মীর মুগ্ধর ‘পানি লাগবে, পানি’ বলে ডাক দেশবাসীকে খুব নাড়া দেয়। দিন দিন শহীদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। আর এই মৃত্যুর মিছিল সাধারণ মানুষকেও রাস্তায় নামায়।
নিখোঁজ তিন সমন্বয়কারী
১৯ জুলাই থেকে কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর তিন সমন্বয়কারীর কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। পাঁচ দিন ধরে নিখোঁজ থাকার পর পাওয়া যায়। আসিফ মাহমুদ, আবু বাকের মজুমদার এবং রিফাত রশিদকে ১৯ জুলাই অজ্ঞাত ব্যক্তিরা তুলে নিয়েছিল। আসিফ এবং বাকের দুজনেই ফেসবুকে পোস্ট করেছিলেন যে, পাঁচ দিন তাদের চোখ বেঁধে রাখা হয়েছিল। রাজধানীর হাতিরঝিল এলাকায় আসিফ মাহমুদকে এবং ধানমন্ডি এলাকায় আবু বকরকে চোখ বেঁধে ছেড়ে দেয়া হয়।
শেখ হাসিনার মেট্রোরেল পরিদর্শন
১৯ জুলাই মিরপুর কাজীপাড়ার মেট্রোস্টেশন পুড়িয়ে দেয় আন্দোলনকারীদের একটি পক্ষ। ২৫ জুলাই শেখ হাসিনা মেট্রোরেলের ধ্বংসস্তূপ পরিদর্শন করেন। স্টেশনের ধ্বংসলীলা দেখে একপর্যায়ে কেঁদে ফেলেন তিনি। এতে অনেকের মনে আরও ক্ষোভের জন্ম হয়। মানুষ মেরে কেন মেট্রোলের জন্য মায়াকান্না! জাতিসংঘ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ক্র্যাকডাউন বন্ধ করার আহ্বান জানায়। সেনা মোতায়েনের পর হাসিনা প্রথম জনসমক্ষে উপস্থিত হন এবং একটি ক্ষতিগ্রস্ত মেট্রো রেলস্টেশন পরিদর্শন করেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও তিনজন মারা যান, মৃত্যুর সংখ্যা ২০৪ জনে দাঁড়ায়। শুক্রবার ও শনিবার সপ্তাহান্তে ৯ ঘণ্টার জন্য কারফিউ শিথিল করা হয়। অ্যামনেস্টি বলেছে যে, পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ওপর প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করেছে।
‘ব্লক রেইড’
২৬ জুলাই সারা দেশে ‘ব্লক রেইড’ শুরু হয়। সারা দেশে অন্তত ৫৫৫টি মামলা হয়েছে এবং ৬,২৬৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কারফিউ ঘোষণার পর জনসমক্ষে হাজির হওয়ার দ্বিতীয় দিনে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পরিদর্শন করেন শেখ হাসিনা। জাতিসংঘ ক্র্যাকডাউন বন্ধ এবং ইন্টারনেট পরিষেবা সম্পূর্ণ পুনরুদ্ধারের আহ্বান জানিয়েছে। বাংলাদেশের পুলিশ বিভাগের গোয়েন্দা শাখা তিনজন আন্দোলন সমন্বয়কারী- নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ এবং আবু বকের মজুমদারকে তুলে নিয়ে যায়। ২৭ জুলাই বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে ব্লক রেইড, বেশিরভাগ ছাত্র অব্যাহত রয়েছে। ডিএমপির গোয়েন্দা শাখা আরও দুই সমন্বয়কারী সারজিস আলম ও হাসনাত আব্দুল্লাহকে হেফাজতে নেয়া হয়। তাদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা দিতে এবং সাম্প্রতিক ঘটনা সম্পর্কে জানতে তাদের হেফাজতে নেয়া হয়েছে বলে জানায় ডিবি কার্যালয়। গত ১১ দিনে মোট ৯,১২১ জনকে গ্রেপ্তার করার খবর পাওয়া যায়। এর মধ্যে শুধু রাজধানীতেই গ্রেপ্তার হয়েছেন ২ হাজার ৫৩৬ জন। ঢাকায় ১৪টি পশ্চিমা দেশের কূটনৈতিক মিশন একটি যৌথ চিঠি জারি করে, যাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অন্যায় কাজের জন্য জবাবদিহি করতে বলা হয়। ছাত্র আন্দোলনের আরও দুই সংগঠককে আটক করেছে গোয়েন্দা শাখা। শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তারে পুলিশ অভিযান অব্যাহত রেখেছে।
শেখ হাসিনা আহতদের দেখতে পঙ্গু হাসপাতালে যান এবং বলেন, অর্থনীতিকে পঙ্গু করতে সহিংসতা চালানো হচ্ছে।
ডিবি কার্যালয় থেকে সমন্বয়কারীদের বার্তা
কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নুসরাত তাবাসসুমকে হেফাজতে নেয় ডিবি। পরে রাত ৯টার দিকে ডিবি কার্যালয়ে রেকর্ড করা একটি ভিডিও গণমাধ্যমে পাঠানো হয় যেখানে আগে হেফাজতে নেয়া ছয় সমন্বয়কারী সব কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়ে একটি লিখিত বিবৃতি পড়ে শোনান। তবে, তিন সমন্বয়কারী- মাহিন সরকার, আব্দুল কাদের এবং আব্দুল হান্নান মাসুদ - বলেছেন যে, ডিবি হেফাজতে থাকা ছয় সমন্বয়কের ভিডিও বার্তাটি বিক্ষোভকারীদের আসল অবস্থান নয়। সমন্বয়কারীদের ডিবি কার্যালয়ে জিম্মি করা হয়েছিল এবং বার্তা পড়তে বাধ্য করা হয়েছিল। তারা পৃথক বার্তায় বলেন, ডিবি কার্যালয়ে অস্ত্রের মুখে ছয় সমন্বয়কের ভিডিও বিবৃতি দেয়া হয়। ডিবি অফিস কখনোই শিক্ষার্থীদের সংবাদ সম্মেলনের জায়গা নয়। দেশব্যাপী ক্র্যাকডাউন চলছে, শুধুমাত্র ঢাকা শহরে ২০০টিরও বেশি মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছে ২.১৩ লাখেরও বেশি লোক। মোবাইল ইন্টারনেট ফিরে এসেছে; কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়া বন্ধ রয়েছে। সরকার প্রথমবারের মতো মৃতের সংখ্যা ১৪৭ বলে জানিয়েছে।
জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ
২৯ জুলাই জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করার ঘোষণা দেয় সরকার। সোশ্যাল মিডিয়ায় তাদের সঙ্গে খাওয়ার ছবি শেয়ার করাসহ ছয় কোটা সংগঠককে উপস্থাপন করা নিয়ে ডিবিকে তিরস্কার করেছেন হাইকোর্ট। ১ আগস্ট সরকার জামায়াতে ইসলামী দল এবং এর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের পাশাপাশি এর সহযোগী সংগঠনগুলোকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অধীনে নিষিদ্ধ করে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। জাতিসংঘ সহিংসতা তদন্তে একটি স্বাধীন ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং দল পাঠানোর প্রস্তাব দেয়। আন্দোলনের ছয় সংগঠককে পুলিশ হেফাজত থেকে মুক্তি দেয়া হয়। বিক্ষোভকারীরা নিহতদের জন্য গণমিছিল ও প্রার্থনা করে। পাঁচটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ সমাবেশ করে।
দ্রোহযাত্রা
২ আগস্ট দুপুরে প্রেস ক্লাব এলাকায় জনতার ঢল নামে। লোকে লোকারণ্য প্রেস ক্লাবের সামনে কোনো সংগঠনের কী কর্মসূচি তা আলাদা করার সুযোগ ছিল না। একপর্যায়ে পুরো প্রেস ক্লাবের সামনের উপস্থিতি একক গণকর্মসূচিতে রূপ নেয়। এই কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। তিনি বক্তব্যে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ দাবি করেন। সেদিন বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে আনু মুহাম্মদ তার বক্তব্য শেষ করে প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে ‘দ্রোহযাত্র’ শুরুর ঘোষণা দেন। সেখান থেকে কদম ফোয়ারা, হাইকোর্ট মোড়, দোয়েল চত্বর ও টিএসসি ঘুরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে যায় দ্রোহযাত্রা। শহীদ মিনারে ছাত্র-জনতার পক্ষ থেকে প্রথমে ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। ঠিক সেই সময় সরকারের পদত্যাগ ও হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে হাজারো জনতা স্লোগান দিতে থাকেন। স্লোগান ওঠে ‘আমার ভাইয়ের রক্ত বৃথা যেতে দেব না’, ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাইরে’, ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক’, ‘খুনি সরকারের গদিতে, আগুন জ্বালো একসাথে’।
‘দ্রোহযাত্রায়’ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, সাংস্কৃতিক কর্মী, শিল্পী, আইনজীবী, উন্নয়নকর্মী, মানবাধিকারকর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন। এই কর্মসূচিতে যুক্ত ছিলেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
১ দফা
সেদিনও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে সমবেত হয়েছিল হাজারো জনতা। সাড়ে ৫টার দিকে, প্রধান সমন্বয়কদের একজন নাহিদ ইসলাম শহীদ মিনারে সমবেত জনতার উদ্দেশ্যে বক্তৃতা করেন। যেখানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার মন্ত্রিসভার পদত্যাগের জন্য একক দাবি ঘোষণা করে এবং আহ্বান জানায়। নাহিদ ইসলাম বলেন, সরকারের সঙ্গে তাদের আলোচনার কোনো পরিকল্পনা নেই। শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একজন ব্যক্তির নেতৃত্বে জাতীয় সরকার গঠনের দাবিতে ‘লংমার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি ঘোষণা করেন তিনি। শেখ হাসিনা আলোচনার প্রস্তাব দিলেও ছাত্ররা তা প্রত্যাখ্যান করেন। সন্ধ্যায় একক দাবিতে রাজপথে নামেন হাজার হাজার ছাত্র-জনতা। তাদের একটাই দাবি: প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ। এর আগে ৩১ জুলাই অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান শেখ হাসিনার পদত্যাগ দাবি করেছিলেন। তার দাবি আন্দোলনকারীদের মধ্যে ব্যাপক সাহস জোগায়।
৩৫ জুলাই
৪ আগস্ট ঢাকা এবং দেশের অন্তত ২১টি জেলায় ব্যাপক সংঘর্ষের ফলে ১৪ পুলিশ কর্মকর্তাসহ প্রায় ৯১ জন নিহত হওয়ার সঙ্গে দিনটি বিক্ষোভে মারাত্মকভাবে ফুঁসে ওঠে। গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, সহিংসতায় অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে সিরাজগঞ্জে গণপিটুনিতে নিহত ১৩ পুলিশ সদস্য রয়েছে। বিক্ষোভকারীরা এবং পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়, যখন বিক্ষোভকারীরা প্রধান মহাসড়ক অবরোধ করেন। পুলিশ স্টেশনের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের কার্যালয়কে লক্ষ্য করে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতা। পুলিশ বাহিনী কাঁদানে গ্যাস ছুড়েছে এবং রাবার বুলেট ছুড়েছে বলে দাবি করেছে যদিও কিছু লোক প্রকৃত বুলেটে আহত ও নিহত হয়েছেন। নতুন করে বিক্ষোভের ফলে সরকার ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয় এবং সন্ধ্যা ৬টা থেকে দেশব্যাপী অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ ঘোষণা করে। শেখ হাসিনা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সমালোচনা করে বলেন যে যারা ‘নাশকতা’ এবং ধ্বংসযজ্ঞে জড়িত তারা আর ছাত্র নয় বরং সন্ত্রাসী, যখন বিক্ষোভকারীরা তাকে পদত্যাগ করার আহ্বান জানায়। সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করার লক্ষ্যে শিক্ষার্থীরা দেশের সব প্রান্ত থেকে ঢাকায় পদযাত্রা করার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন। সেনাবাহিনী ও পুলিশ জনগণকে কারফিউ না ভাঙতে বা আইন লঙ্ঘন না করার আহ্বান জানায়। সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল ইকবাল করিম ভূঁইয়া সেনা প্রত্যাহারের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান এবং হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানান। বর্তমান সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান বলেছেন, সশস্ত্র বাহিনী সর্বদা জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে।
৩৬ জুলাই: বিজয়ের দিন
কারফিউ অমান্য করে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার মানুষ রাজধানীর কেন্দ্রে একত্রিত হয়। ‘মার্চ টু ঢাকা’ ডাকে সাড়া দিয়ে হাজার হাজার শিক্ষার্থী ও দেশবাসী রাজধানী অভিমুখে যাত্রা শুরু করে। সেনাবাহিনী ছাত্র-জনতার বিক্ষোভের মুখে বন্দুক অবনত করে। শেখ হাসিনার পতনের প্রাক্কালে আওয়ামী লীগ বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালিয়ে আগ্রাসন প্রদর্শন করে। দুপুর নাগাদ ভিড় করে শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবনে। বিকেলে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের কাছে তার পদত্যাগপত্র হস্তান্তর করেন শেখ হাসিনা। এরপর শেখ হাসিনা তার বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে সামরিক বিমানে করে প্রতিবেশী দেশ ভারতে পালিয়ে যান। সারা ঢাকা শহর, সারা দেশে বিজয়ী ছাত্র-জনতা রাস্তায় নেমে আসেন। ঢাকা শহরে সেদিন লাখ লাখ মানুষ এ বিজয় উদযাপন করেন। মাত্র এক মাস আগেও কেউ কল্পনা করতে পারেননি ছোট একটি কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এমন বিশাল এক গণ-অভ্যুত্থানের সূচনা হবে এবং দীর্ঘদিনের ফ্যাসিস্ট শক্তি বিদায় নিবে। তথ্যসূত্র: বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে