আদালতে বিচারকের সামনে সাংবাদিককে মারধর
সন্ত্রাসবিরোধী আইনের একটি মামলার শুনানিতে সংবাদ সংগ্রহ করতে আদালতে গিয়ে বিচারকের সামনেই মারধরের শিকার হয়েছেন একজন সাংবাদিক। তাকে কিল, ঘুষি ও লাথি মেরেছেন কয়েকজন আইনজীবী।
বৃহস্পতিবার (৪ আগস্ট) বিকেলে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হাসিব উল্লাহ্ পিয়াসের আদালতে এই ঘটনা ঘটে। আহত সাংবাদিকের নাম আসিফ মোহাম্মদ সিয়াম, যিনি বেসরকারি টেলিভিশন 'সময় টিভি'র সাংবাদিক।
গত ২৮ আগস্ট ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির একটি অনুষ্ঠান থেকে সাবেক মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকী ও সাংবাদিক মঞ্জুরুল আলম পান্নাসহ মোট ১৬ জনকে আটক করা হয়। এরপর সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা দিয়ে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়। আজ তাদের জামিন শুনানির তারিখ ছিল।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুর ২টা ৫৫ মিনিটে সাংবাদিক পান্নাকে আদালতের এজলাসে আনা হয়। তার পরনে ছিল হেলমেট, হাতে হাতকড়া এবং বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট। কাঠগড়ায় নেয়ার পর তিনি পুলিশকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আপনারা এমন কেন করছেন, আমি তো আপনাদের শত্রু নই।’ সে সময় পাশে থাকা আরেক সাংবাদিক মুক্তাদির রশীদ রোমিও পান্নার কাছে জানতে চান- তাকে জেলে নির্যাতন করা হয়েছে কিনা। পান্না 'না' জবাব দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে আইনজীবী মহিউদ্দিন মাহি সাংবাদিক রোমিওকে আদালত কক্ষ থেকে বের হয়ে যেতে বলেন।
এসময় রোমিও বলেন, ‘আদালত থেকে বের করে দেয়ার ক্ষমতা শুধু বিচারকের আছে। তিনি বললে বের হয়ে যাব। তাকে বলতে দিন।’ এই কথা শুনেই আইনজীবী মাহি ক্ষিপ্ত হয়ে রোমিওকে মারতে উদ্যত হন। সিয়াম তখন তাকে আটকানোর চেষ্টা করেন। এরই মাঝে বিচারক এজলাসে ওঠেন এবং শুনানি শুরু হয়। সিয়াম আইনজীবীকে বোঝানোর চেষ্টা করেন যে রোমিও বহিরাগত নন, তিনি একজন সাংবাদিক। এতে আরও ক্ষিপ্ত হয়ে আইনজীবী মাহি বেঞ্চ থেকে লাফ দিয়ে উঠে সিয়ামের কানে ঘুষি মারেন। এরপর তাকে বাইরে টেনে নিয়ে যাওয়া হয় এবং ওই আইনজীবীর কয়েকজন সহযোগী তাকে ঘিরে ধরে মারধর করেন। এ সময় সিয়াম রক্তাক্ত হন। মুক্তাদির রশীদকেও আইনজীবীদের চাপে এজলাস থেকে বের করে দেয়া হয়।
আদালত কক্ষে এমন পরিস্থিতি দেখে বিচারক এজলাস থেকে নেমে খাস কামরায় চলে যান। প্রসিকিউশনের একজন আইনজীবী সিয়ামকে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যান। সিয়াম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘কোনো কারণ ছাড়াই বিচারকের সামনে আমাকে মারধর করা হলো। আমি এই ঘটনার বিচার চাই।’
মুক্তাদির রশীদ রোমিও জানান, পুলিশ অত্যন্ত নাটকীয়ভাবে পান্নাকে আদালতে হাজির করে। আইনজীবী মাহি রোমিওকে মারতে এলে সিয়াম তাকে ঠেকানোর চেষ্টা করেন, আর এতেই মাহি সিয়ামের ওপর চড়াও হন। রোমিও অভিযোগ করেন, পুলিশ পাশে দাঁড়িয়ে থাকলেও তারা দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ নজরুল ইসলাম জানান, তিনি ঘটনাস্থলে ছিলেন না। তবে খবর পেয়ে সেখানে গিয়ে উভয়পক্ষকে শান্ত করার চেষ্টা করেছেন এবং সমস্যা সমাধানের জন্য তাদের ডেকেছেন।
পরে বিচারক আবার এজলাসে ফিরে আসেন। শুনানি শেষে তিনি লতিফ সিদ্দিকী ও সাংবাদিক পান্নার জামিন আবেদন খারিজ করে দেন।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে