Views Bangladesh Logo

লন্ডভন্ড জোবরা গ্রাম, হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন ছাত্ররা

ট্টগ্রাম মহানগরীর বিভিন্ন হাসপাতালের বেডে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন পাশের জোবরা গ্রামবাসীর সঙ্গে ভয়াবহ সংঘর্ষে আহত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষার্থীরা। আহতদের একজন লাইফ সাপোর্টে আছেন। অন্যদের মাথায়, হাতে-পায়ে ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখমও গুরুতর।

অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের ভাঙচুরে লন্ডভন্ড জোবরা গ্রামে এখনো সুনসান নীরবতা। গ্রেপ্তার আতঙ্কে পুরুষশূন্য গ্রামটির নারীরাও রয়েছেন চরম আতঙ্ক ও নিরাপত্তাহীনতায়।

শনিবার (৩০ আগস্ট) গভীর রাত থেকে রোববার (৩১ আগস্ট) সকাল পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেট সংলগ্ন জোবরা গ্রামের বাসিন্দাদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের দফায় দফায় সংঘর্ষে চবির সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মো. কামাল উদ্দিনসহ চার শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। শনিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী সাফিয়া খাতুনের ভাড়া বাসার গেট খোলা নিয়ে দারোয়ানের সঙ্গে বাগবিতণ্ডার জেরে শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের মধ্যে কথা কাটাকাটির পর সংঘর্ষের সূত্রপাত বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের এলাকায় মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) রাত ১২টা পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি করে প্রশাসন।

চবি শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, তাদের ওপর দেশি অস্ত্রশস্ত্র, লাঠিসোঁটা, রামদা ও ইটপাটকেল নিয়ে অতর্কিত হামলা চালান জোবরা গ্রামবাসী। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, যৌথবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে গেলে তাদের ওপর হামলা চালানো হয়। অন্যদিকে জোবরার বাসিন্দারা বলছেন, শিক্ষার্থীরাই স্থানীয়দের ওপর প্রথমে হামলার পাশাপাশি বাড়িঘর ভাঙচুর ও দোকানপাট লুটপাট চালান।

বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, সংঘর্ষের জেরে গ্রেপ্তার আতঙ্কে চবি সংলগ্ন জোবরা গ্রাম এখনো পুরুষশূন্য। ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গেছেন অনেকে। রাস্তাঘাটে শুধু নারীর দেখা মিলছে। তবে তারাও আছেন আতঙ্কে।

স্থানীয় নারীরা বলেন, ‘রাতে বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে প্রতিরোধের কেউ নেই। ফলে তারা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।’

জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায়, সংঘর্ষে আহতদের মধ্যে চবি চিকিৎসাকেন্দ্রে তিন শতাধিক, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ১১৪ জন এবং নগরীর বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে ৩০ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) থেকে বেসরকারি পার্কভিউ হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে আছেন দুজন শিক্ষার্থী এবং চমেক হাসপাতালে এখনো চিকিৎসাধীন ১১ জন। একজন শিক্ষার্থীর রক্তনালি ছিঁড়ে যাওয়ায় তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার এনআইসিবিডিতে (ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কার্ডিওভাসকুলার) পাঠানো হয়েছে বলেও জানান সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর হোসেন।

পার্কভিউ হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে থাকা গুরুতর আহত শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ আহমেদের অবস্থার উন্নতি হয়নি। তিনি এখনো আশঙ্কামুক্ত নন বলে বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) বিকেলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। একই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরেক শিক্ষার্থী সমাজতত্ত্ব বিভাগের মামুন মিয়ার অবস্থার উন্নতি হওয়ায় লাইফ সাপোর্ট খুলে নেয়া হলেও আইসিইউতে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। তারও মাথার খুলিতে জখম রয়েছে।

চমেক হাসপাতালের অর্থোপেডিক ও ট্রমাটলজি ওয়ার্ডের বেডে বসে ব্যথায় কাতরাচ্ছিলেন চবির শিক্ষার্থী পলাশ মল্লিক। পিঠে কোপানোয় ঠিকমতো শুয়ে থাকতে পারছিলেন না তিনি। এক হাতে ব্যান্ডেজ বাঁধা অবস্থায়ই অধিকাংশ সময় বসে থাকতে হচ্ছে তাকে। একই ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন এহসানেরও মাথা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে কুপিয়েছেন স্থানীয়রা।

পলাশ মল্লিক বলেন, ‘প্রক্টর স্যার আহত হয়েছেন শুনে আমরা ঘটনাস্থলে যাই। সেখান থেকে স্যারকে নিয়ে চলে আসার সময় আমাদের ওপর হামলা করা হয়। গ্রামবাসী রামদা দিয়ে আমাদের কুপিয়েছে। আমার সঙ্গে থাকা ইমতিয়াজকেও মাথায় খুব মারাত্মকভাবে জখম করা হয়েছে। সেখান থেকে সহপাঠীরা আমাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেছেন।’

পুলিশ জানায়, সংঘর্ষের ঘটনায় ৯৫ জনের নাম উল্লেখসহ এক হাজার অজ্ঞাতনামার বিরুদ্ধে মামলা এবং সংঘর্ষ চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা দপ্তর থেকে অস্ত্র লুটের অভিযোগে জিডি করেছে চবি প্রশাসন। এজাহারভুক্ত ও তদন্তে পাওয়া আটজন গ্রামবাসীকে গ্রেপ্তারের পর আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তারা হলেন মো. ইমরান হোসেন প্রকাশ এমরান হোসেন (৩৫), মো. হাসান হাসাঈন (২২), রাসেল ওরফে কালো রাসেল (৩০), মো. আলমগীর (৩৫), মো. নজরুল ইসলাম (৩০), মো. জাহেদ (৩০), মো. আরমান (২৪) ও দিদারুল আলম (৪৬)।

বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) জোবরা গ্রামসহ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে উভয়পক্ষকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মুমিন। তিনি বলেন, ‘গ্রামবাসী ও শিক্ষার্থীরা যেন মিলেমিশে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করতে পারেন সে লক্ষ্যে প্রশাসন কাজ করছে। একাডেমিক ও সামাজিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।’

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ