ডিসি-এসপি-ওসিদের লটারির মাধ্যমে বদলির দাবি জামায়াতের
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লটারির মাধ্যমে জেলা প্রশাসক (ডিসি), পুলিশ সুপার (এসপি) ও ওসি বদলির দাবি জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। দলটি বলেছে, তপশিল ঘোষণার পর প্রশাসনের সব ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের হাতে আসে। প্রশাসনের রদবদল করে তারা। সবচেয়ে নিরপেক্ষ এবং আস্থা রাখার মতো একটা উপায় হলো যে, লটারির মাধ্যমে বদলি করে দেওয়া- যার যেখানে তকদির আছে সে চলে যাবে। এটাতে কোনো প্রশ্ন থাকে না।
বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের সম্মেলন কক্ষে ইসির সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর চতুর্থ দিনের সংলাপে এসব কথা বলেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। এ সময় প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন, তিন নির্বাচন কমিশনার ও ইসির জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘আপনারা লক্ষ্য করেছেন যে এক মাসও হয়নি, ২০ দিনও হয়নি, একজন ডিসি চলে গেলেন। সেটাও হঠাৎ করে। আবার এক সপ্তাহের মধ্যে অনেককে রদবদল করা হয়েছে। এটার পেছনে মনে হয় যেন কোনো একটা ডিজাইন, একটা উদ্দেশ্যে আছে।’
তিনি বলেন, ‘কিন্তু আমরা যখন এই কথা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনার সময় বলেছিলাম- আপনারা এরকম করেন, কোশ্চেন থাকবে না, তখন সেখানে তার (প্রধান উপদেষ্টা) বক্তব্যে বোঝা গেল যে, পরিষ্কারভাবে উনি কিছু বলেননি। তবে, আমরা বুঝতে পেলাম যে কোনোভাবে, কোনো জায়গা থেকে কেউ এটা শুরু করেছে। সেটা কি কোনো প্ল্যান? নির্বাচন কমিশনই হচ্ছে নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার জন্য তপশিল ঘোষণার পর আমাদের একমাত্র আস্থার জায়গা। সেখানে আমরা আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করলাম যে, একটা চেঞ্জ আমরা ইতিপূর্বে দু-একটা ইলেকশন কমিশনের সময় দেখেছি, তপশিল ঘোষণার পরেই একদিনে, এক রাতে সব ডিসি-এসপি, পুলিশ সুপারদের রদবদলের ঘটনা ঘটেছে। তাতে কিন্তু আস্থা ছিল; কমপ্লেন ছিল না। এরকম একটা সিদ্ধান্ত না নিলে এখন যা হচ্ছে, এটা একটা পরিকল্পিত ইন্টেনশন।’
জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আরও বলেন, ‘ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে কিন্তু জুলাই সনদ এবং গণভোট- এই দুটো প্রশ্ন খুবই প্রাসঙ্গিক। এই ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে কিন্তু আপনাদের আচরণবিধিতে- ইভেন গতকাল আপনারা প্রবাসীদের ভোটের ব্যাপারে যে প্রেজেন্টেশন করলেন এটা পরিষ্কার হয়নি। সেটা হচ্ছে যে, একই দিনে গণভোট আর জাতীয় নির্বাচনের ঘোষণা প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে এসেছে, গেজেটও সেটা এসেছে। যদিও আমরা দল হিসেবে আগের কিছু যুক্তির কারণে বলেছিলাম যে, গণভোটটা আগে হওয়া উচিত। জুলাই সনদে কী কী সংস্কার হতে যাচ্ছে, কোনটায় ভোটাররা ‘হ্যাঁ’ বলবে, ‘না’ বলবে- সে যদি আগে থেকে সে বিষয়ে মাইন্ডসেট করতে না পারে, বুঝতে না পারে যে, বিদ্যমান রাষ্ট্র কাঠামোর কী কী পরিবর্তন দরকার, তাহলে সে ‘হ্যাঁ’ কী বলবে, ‘না’ কী বলবে? তো একই দিনে দুইটা ভোট হলে সে তো বুঝতে পারবে না। যাই হোক, আমরা এই দাবি ও যুক্তি পেশ করেছিলাম।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের এখনকার আচরণবিধিতে লাউডস্পিকার ব্যবহারে বলা হয়েছে যে, একই সময়ে নির্বাচনি এলাকায় তিনটা লাউডস্পিকার ব্যবহৃত হতে পারবে। যেটা দেখলাম- আপনারা জানেন একটি নির্বাচনি এলাকায় ১৫, ২০, ২১, ১৮, ১৬টা করে ইউনিয়ন আছে। বিরাট নির্বাচনি এলাকা। একজন প্রার্থী বা তার পক্ষের ভোটাররা বিভিন্ন জায়গায় সমাবেশ করবে। স্কুল-কলেজের পরীক্ষা সাধারণত ডিসেম্বর-নভেম্বরে হয়ে যাচ্ছে। ওটা যদি ফেব্রুয়ারি মাস হয় তাহলে তিনটা লাউডস্পিকারের মধ্যে সীমিত করে দিলে বিশাল নির্বাচনি এলাকায় এটা প্রার্থীদের জন্য ভোটারদের কাছে প্রচারণায় সংকট তৈরি করতে পারে। এটা আমরা পুনর্বিবেচনার জন্য আবেদন করছি।’
ভোটার লিস্টের ছবিগুলো স্পষ্ট নয় উল্লেখ করে গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘প্রিন্টিং এত স্পষ্ট না। চেহারাও চেনা যায় না। এটা আমরা জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে যখন আপনাদের সঙ্গে ফরমালি দেখা করেছিলাম, ১৮টা দফায় আমরা যে পরামর্শ দিয়েছি তার মধ্যে একটা ছিল- ভোটার লিস্টের ছাপা ছবিগুলো স্পষ্ট হতে হবে। চিনতে না পারলে সেখানে ঝামেলা হয়। এ বিষয়ে আপনাদের কথা বলা দরকার।’
তিনি বলেন, ‘আমরা শুনতে পাচ্ছি এবং সিদ্ধান্ত আছে যে প্রতি ভোটকেন্দ্রে সেনা মোতায়েন হবে নির্বাচনকে নিরপেক্ষ করার জন্য। সন্ত্রাসী, ভোট ডাকাত, যারা বাধা সৃষ্টি করে, নাশকতা করে- তাদের একটু চাপে রাখতে গেলে, ভোটারদের সাহসী করতে গেলে সেনাবাহিনী দরকার। একজন সেনা সদস্য একটা ভোটকেন্দ্রে দিলে এটা খুব বেশি পরিবেশ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্ব পায় না। সংখ্যাটা একটু বাড়িয়ে অন্তত ৫ জন সেনা সদস্য একটা ভোটকেন্দ্রে দিলে ভালো হয়। স্ট্রাইকিং ফোর্স তো থাকেই। এ ব্যাপারে আপনাদের কোনো সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা, সেনাবাহিনীর সঙ্গে আলোচনা নিশ্চয়ই হয়েছে বা হবে।’
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে