যুদ্ধবিরতির মাঝে ধ্বংসস্তূপের দিকে ফিরছেন ফিলিস্তিনিরা, সেনা প্রত্যাহার শুরু ইসরায়েলের
দুই বছর ধরে চলা রক্তক্ষয়ী সংঘাতের পর ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই হাজারো বাস্তুচ্যুত গাজাবাসী ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া নিজ নিজ বাড়িঘরে ফিরতে শুরু করেছেন। রয়টার্সের খবর অনুযায়ী, ইসরায়েলি বাহিনী পর্যায়ক্রমে তাদের অবস্থান থেকে পিছু হটতে শুরু করায় গাজা সিটি ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোয় নেমেছে মানুষের ঢল।
স্থানীয় সময় শুক্রবার (১০ অক্টোবর) দুপুর ১২টা (জিএমটি ৯:০০) থেকে এই যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী। এর আগে ভোরে ইসরায়েলি সরকার যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপের অনুমোদন দেয়। এই প্রাথমিক ধাপে আংশিক সেনা প্রত্যাহার শুরু হবে এবং আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সম্পূর্ণ যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পথ তৈরি করা হবে।
চুক্তি অনুযায়ী, ৭২ ঘণ্টার মধ্যে জীবিত ২০ জন ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দিতে হবে হামাসকে। এর বিনিময়ে ইসরায়েল ২৫০ জন দীর্ঘমেয়াদি ফিলিস্তিনি বন্দি এবং সংঘাতের সময় আটক প্রায় ১ হাজার ৭০০ জন ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেবে।
চুক্তি কার্যকর হওয়ার পর জাতিসংঘ কর্মকর্তাদের মতে, খাদ্য ও চিকিৎসা সামগ্রী বহনকারী শত শত ট্রাক গাজায় প্রবেশ করবে যা অস্থায়ী তাঁবুতে অবস্থানরত লাখো মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা নিয়ে আসবে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ইসরায়েলি বাহিনী গাজার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা থেকে সরে আসবে। যদিও গাজা ভূখণ্ডের প্রায় অর্ধেক এলাকার নিয়ন্ত্রণ থাকবে তাদের হাতে।
টেলিভিশন ভাষণে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, নিরস্ত্র করার বিষয়টি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ইসরায়েলি সেনারা গাজায় থাকবে। তিনি বলেন, ‘সম্ভব হলে শান্তিপূর্ণভাবে; অন্যথায় আমরা আরও কঠিন উপায়ে তা অর্জন করব।’
দক্ষিণ গাজার খান ইউনিস অঞ্চলে ইসরায়েলি বাহিনী পূর্বাঞ্চল থেকে পিছু হটতে শুরু করেছে, তবে কিছু এলাকায় ট্যাংকের গোলাবর্ষণের খবর পাওয়া গেছে। একইভাবে মধ্য গাজার নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে কিছু সেনা সীমান্তের দিকে সরে গেলেও ভোরে গুলির শব্দ শোনা যায়। ইসরায়েলি বাহিনী ভূমধ্যসাগর উপকূল বরাবর গাজা সিটি অভিমুখী রাস্তাও খালি করেছে।
গত দুই বছরের ইসরায়েলি অভিযানে প্রায় ২০ হাজার শিশুসহ ৬৭ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের হামাসের চালানো হামলায় ১,২০০ ইসরায়েলি নিহত এবং ২৫১ জন জিম্মি হয়েছিলেন।
হামাস নিশ্চিত করেছে যে, ২০ জন জীবিত জিম্মিকে দ্রুত মুক্তি দেয়া হবে। তবে নিহত জিম্মিদের মৃতদেহ উদ্ধারে আরও বেশি সময় লাগতে পারে। বন্দি বিনিময়ের তালিকা প্রকাশ না হওয়া এবং হামাসের পক্ষ থেকে ইসরায়েলে আটক শীর্ষ ফিলিস্তিনি নেতাদের মুক্তির দাবি চুক্তি বাস্তবায়নে এখনো কিছু চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে।
এদিকে গাজার যুদ্ধ পরবর্তী শাসনব্যবস্থা বা হামাসের ভবিষ্যতের ভূমিকা নিয়ে এখনো কোনো চূড়ান্ত চুক্তি হয়নি, যা ট্রাম্পের ২০-দফা পরিকল্পনার পরবর্তী ধাপের অংশ। হামাসের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি সেনারা সরে যাওয়া এলাকাগুলোতে নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করা হবে, তবে হামাস যোদ্ধারা রাস্তায় ফিরবেন কি-না তা স্পষ্ট নয়।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আগামী রোববার মধ্যপ্রাচ্য সফর করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। সম্ভবত মিশরে চূড়ান্ত চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন তিনি। ইসরায়েলি পার্লামেন্টের স্পিকার আমির ওহানা তাকে নেসেটে (ইসরায়েলি সংসদ) ভাষণ দেয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে