Views Bangladesh Logo

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় এক দিনে নিহত ৭৫, নিরাপদ আশ্রয়হীন লাখো মানুষ

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় ইসরায়েলের লাগাতার বোমাবর্ষণে বৃহস্পতিবার ভোর থেকে এক দিনে অন্তত আরও ৭৫ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে শুধু গাজা সিটিতেই প্রাণ হারিয়েছেন ৪৪ জন। টানা হামলায় পুরো শহর এখন পরিণত হয়েছে ‘আতঙ্কের নগরীতে’। শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা।

প্রতিবেদনে বলা হয়, নির্বিচার বোমাবর্ষণে গাজা সিটির পাড়া-মহল্লা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হচ্ছে। প্রাণ বাঁচাতে মানুষ এক স্থান থেকে অন্যত্র পালালেও কোথাও নিরাপদ আশ্রয় মিলছে না। জাতিসংঘ শিশু তহবিল ইউনিসেফ ইতোমধ্যেই গাজা সিটিকে আখ্যা দিয়েছে ‘আতঙ্কের নগরী’ বলে।

বৃহস্পতিবার তাল আল-হাওয়া এলাকায় একটি তাঁবুতে ইসরায়েলি হামলায় একই পরিবারের পাঁচজন নিহত হন, যাদের মধ্যে তিনজনই শিশু। হামলার পর ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, ফিলিস্তিনিরা ভাঙাচোরা মালপত্র জড়ো করছেন। ধ্বংসস্তূপের মধ্যে রক্তে ভেজা একটি শিশুদের স্যান্ডেলও উদ্ধার করা হয়।

গাজা সিটির জেইতুন, সাবরা, তুফাহ, নাসর ও শুজাইয়া এলাকায় ভয়াবহ বোমাবর্ষণের খবর পাওয়া গেছে। সিভিল ডিফেন্সের মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল জানান, তুফাহ এলাকায় অন্তত আটজন নিহত হয়েছেন। শুজাইয়ায় একটি আবাসিক ভবনে বিমান হামলায় দুজন মারা যান। জেইতুনে আল-ঘাফ পরিবারের তিন সদস্যের মরদেহ ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার করা হয়।

আল জাজিরার সাংবাদিক হানি মাহমুদ জানিয়েছেন, নিরাপত্তার খোঁজে মানুষ যেখানেই যাচ্ছেন, ইসরায়েলি বিমান ও গোলাবর্ষণ তাদের পিছু ছাড়ছে না। অনেকে আশ্রয় নিয়েছিলেন শেখ রাদওয়ান এলাকায়, কিন্তু সেখানেও ট্যাংক হামলায় ঘরবাড়ি ভেঙে ফেলা হয়েছে এবং তাঁবুতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

হাসপাতালগুলোতে এখন লাশ ও আহতদের ঢল নেমেছে। আল-শিফা হাসপাতালে মর্গের মেঝেতে লাশ সারিবদ্ধভাবে রাখা হয়েছে। বাইরে নিহত সন্তানকে জড়িয়ে কাঁদতে দেখা গেছে এক মাকে।

ইউনিসেফের মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার যোগাযোগ কর্মকর্তা টেস ইনগ্রাম সতর্ক করে বলেন, প্রায় ১০ লাখ মানুষ আটকা পড়েছেন এই ‘ভয়, পালানো ও জানাজায় ভরা নগরীতে’।

এদিকে ইসরায়েলি সেনারা জানিয়েছে, তারা গাজা সিটির প্রায় ৪০ শতাংশ এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে এবং শিগগিরই অভিযান আরও জোরদার করা হবে। আল জাজিরার সানাদ ফ্যাক্ট-চেকিং এজেন্সির স্যাটেলাইট ছবিতে দেখা গেছে, জেইতুন এলাকায় অন্তত ৫২টি সামরিক যান মোতায়েন রয়েছে।

ছবিতে আরও দেখা যায়, ২৫ আগস্ট থেকে ১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে উত্তর ও মধ্য গাজা সিটি থেকে পশ্চিমে, বিশেষ করে আল-রাশিদ সড়ক ও সমুদ্রতীরবর্তী এলাকায় ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

তবে দক্ষিণ গাজায় আশ্রিতদের অবস্থাও ভয়াবহ। খান ইউনিসে চার মাস আগে পালিয়ে আসা গর্ভবতী নারী শুরুক আবু ঈদ জানান, উত্তর দিক থেকে নতুন মানুষের আগমনে তাদের দুর্দশা আরও বেড়েছে।

বৃহস্পতিবার নুসাইরাত শরণার্থী শিবিরে বিমান হামলায় সাতজন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে তিনজন শিশু। একইদিন রাফাহতে ত্রাণ নেওয়ার জন্য জড়ো হওয়া মানুষের ওপর সেনারা গুলি চালালে আরও সাতজন নিহত হন।

শুধু বৃহস্পতিবার ভোর থেকে চালানো স্থল ও বিমান হামলায় পুরো গাজা উপত্যকাজুড়ে নিহত হয়েছেন অন্তত ৭৫ জন।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ