Views Bangladesh Logo

ইসরায়েলি হামলায় গাজায় নিহত আরও ১০৯ ফিলিস্তিনি

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর লাগাতার হামলায় গত ২৪ ঘণ্টায় আরও অন্তত ১০৯ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন শতাধিক মানুষ। নিহতদের ১৬ জনই মারা গেছেন বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণকেন্দ্রে খাদ্য ও ত্রাণ আনতে গিয়ে।


এ নিয়ে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে গত প্রায় ২১ মাসে ইসরায়েলি হামলায় গাজায় মোট নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৬ হাজার ৬৪৭ জনে। আহত হয়েছেন আরও এক লাখ ৩৩ হাজার ৯১৯ জন। হতাহতদের মধ্যে ৫৬ শতাংশই নারী ও শিশু। ইসরায়েলি বাহিনী এই সময়ে গাজার ১৫ হাজারেরও বেশি শিশুকে হত্যা করেছে।


গাজার মেডিকেল সূত্রগুলোর বরাতে বুধবার (২ জুলাই) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানায়, মঙ্গলবার (১ জুলাই) স্থানীয় সময় ভোর থেকে রাত পর্যন্ত দিনভর বিভিন্ন স্থানে বোমা ও ড্রোন হামলা চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। এর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ হামলার ঘটনা ঘটে গাজা জিএইচএফ পরিচালিত একটি খাদ্য সহায়তা কেন্দ্রে। সেখানে খাবারের জন্য জড়ো হওয়া মানুষের ভিড়ে ইসরায়েলি সেনারা গুলি চালালে কমপক্ষে ১৬ জন নিহত হন।


ক্ষতিগ্রস্ত কিছু এলাকায় চলাচল অসম্ভব হওয়ায় অ্যাম্বুলেন্স এবং সিভিল ডিফেন্সকর্মীরা ধ্বংসস্তূপের নিচে ও রাস্তায় আটকে পড়া অনেক হতাহতের কাছে পৌঁছাতে পারেননি বলেও জানিয়েছেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা।


এদিকে আবারও উত্তরাঞ্চলের গাজা সিটিতে হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। স্থানীয় সংবাদ সংস্থা ওয়াফা জানায়, শহরের একটি স্থানে ইসরায়েলি কোয়াডকপ্টার থেকে চালানো হামলায় কমপক্ষে পাঁচজন নিহত হন। কিছুদিন আগেই ওই এলাকার বাসিন্দাদের সরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল।


জিএইচএফ ২৭ মে থেকে সীমিত পরিসরে খাদ্য সহায়তা বিতরণ করছে। তবে প্রায় প্রতিদিনই খাদ্য আনতে যাওয়া ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিদের ওপর সরাসরি গুলি ও বিমান হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। এসব হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৫৮৫ জন, আহত হয়েছেন আরও চার হাজার ৩৯৯ জন।


এই পরিস্থিতিতে ১৭০টিরও বেশি আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা ও এনজিও যৌথ বিবৃতিতে জিএইচএফ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে।


বিবৃতিতে বলা হয়, ‘গাজার মানুষ এখন দুটি ভয়াবহ বিকল্পের সামনে ক্ষুধায় মারা যাওয়া অথবা গুলির ঝুঁকি নিয়ে খাবার সংগ্রহ করা। জিএইচএফ গাজার মানুষের জন্য কেবল ক্ষুধা ও গুলির ভয়ই এনেছে’।


জাতিসংঘের তথ্য অনুসারে, গাজার ৮২ শতাংশ এলাকাই এখন ইসরায়েলি সামরিক নিয়ন্ত্রণে অথবা জোরপূর্বক উচ্ছেদের হুমকিতে রয়েছে। গাজা সিটির শেখ রাদওয়ান এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, ‘নতুন করে বাস্তুচ্যুত মানুষজন রাস্তায় তাঁবু খাটিয়ে থাকছে। কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই’।


২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে অতর্কিত হামলা চালায় হামাস। তারা এক হাজার ২০০ জনকে হত্যা এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করে নিয়ে যায়। হামাসের হামলার জবাব দিতে এবং জিম্মিদের মুক্ত করতে ওই দিন থেকেই গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করে আইডিএফ।


টানা ১৫ মাস অভিযান চালানোর পর ১৯ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রসহ মধ্যস্থতাকারী দেশগুলোর চাপে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে ইসরায়েল। তবে যুদ্ধবিরতির দু’মাস না যেতেই ১৮ মার্চ থেকে আবারও গাজায় হামলা চালাচ্ছে আইডিএফ।


গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দ্বিতীয় দফার এই অভিযানে এখন পর্যন্ত ছয় হাজার ২৯৩ জন নিহত এবং ২১ হাজার ৪৯১ জন আহত হয়েছেন।


এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, ইসরায়েল ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির একটি প্রস্তাবে সম্মত হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে ট্রাম্প তার সামাজিক মাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এর পোস্টে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সব পক্ষের সঙ্গে মিলে গাজা যুদ্ধ বন্ধে কাজ করছে এবং হামাসকেও এই প্রস্তাব গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ