Views Bangladesh Logo

ইসরায়েলি হামলায় গাজা সিটির আরেক বহুতল ভবন ধ্বংস, নিহত আরও ৬৭

গাজা উপত্যকার প্রধান নগরী গাজা সিটি দখলে আরেকটি বহুতল ভবন ধ্বংস করেছে ইসরায়েল। মুশতাহা ও আল-সুসি টাওয়ারের পর আল-রুয়া আবাসিক টাওয়ারও উড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এটিসহ গত ২৪ ঘণ্টার হামলায় কমপক্ষে ৬৭ জন নিহত হয়েছেন, যাদের ৪৯ জনই উত্তর গাজা সিটির বাসিন্দা। এছাড়া ইসরায়েলসৃষ্ট দুর্ভিক্ষে মারা গেছেন তিনজন শিশুসহ আরও পাঁচজন।


রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) সারাদিনের এসব হামলায় আহত হয়ে হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন কমপক্ষে ৪০৯ জন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, এ নিয়ে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে গত ২৩ মাসে ইসরায়েলি হামলায় প্রাণহানি দাঁড়িয়েছে ৬৪ হাজার ৪৫৫ জনে, আহত হয়েছেন অন্তত এক লাখ ৬২ হাজার ৭৭৬ জন। অন্যদিকে জাতিসংঘ ঘোষিত পূর্ণমাত্রার দুর্ভিক্ষপীড়িত উপত্যকাটিতে চাপিয়ে দেয়া অনাহারজনিত মৃত্যু ঘটেছে ৩৮৭ জনের, যাদের ১৩৮ জনই শিশু।


সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরা জানায়, গাজার সবচেয়ে বড় নগরীটি দখলের চেষ্টায় ধ্বংসযজ্ঞ আরও তীব্র করেছে ইসরায়েলি সেনারা। ফিলিস্তিনি সিভিল ডিফেন্স জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত গাজা সিটির অন্তত ৫০টি ভবন ধ্বংস করা হয়েছে, যার ফলে হাজার হাজার পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছে।


ইসরায়েলি বাহিনীর দাবি, তারা বাসিন্দাদের সরে যেতে বলার পর আল-রুয়া আবাসিক টাওয়ারে হামলা চালিয়েছে। এতে বাস্তুচ্যুত হয়ে কাছেই তাঁবুতে আশ্রয় নেয়া পরিবারগুলোও আতঙ্কে পালিয়ে যায়।


ঘটনাস্থলের কাছে থাকা ফিলিস্তিনি এনজিও নেটওয়ার্কের প্রধান আমজাদ শাওয়াহ আল জাজিরাকে বলেন, ‘অবস্থা ভয়ঙ্কর, চারদিকে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। শত শত পরিবার আশ্রয় হারিয়েছে। ইসরায়েল এভাবে মানুষকে দক্ষিণে সরাতে চাইছে। অথচ সবাই জানে, দক্ষিণেও কোনো নিরাপদ জায়গা নেই’।


তিনি বলেন, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দাবি করেছিলেন, সামরিক বাহিনী ‘সন্ত্রাসী অবকাঠামো এবং সন্ত্রাসীদের বহুতল ভবনগুলোতে’ হামলা চালাচ্ছে। কিন্তু আল-রুয়া টাওয়ারটি ছিল পাঁচতলা ভবন, যেখানে ২৪টি অ্যাপার্টমেন্ট, দোকান, একটি ক্লিনিক এবং একটি জিম ছিল। একই কথা বলে ইসরায়েল আল জাজিরা ক্লাব এলাকায়ও হামলা চালিয়ে তাঁবুতে থাকা পরিবারগুলোকে হতাহত করেছিল।


আল জাজিরার সাংবাদিক হানি মাহমুদ জানিয়েছেন, ‘প্রতি পাঁচ থেকে দশ মিনিট পর পর গাজা সিটির চারপাশে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছে। সাবরা ও জায়তুনসহ বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক বোমা হামলা চলছে’।


তিনি আরও জানান, আবাসিক এলাকায় দূরনিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরক রোবট ব্যবহার করছে ইসরায়েল। শেখ রাদওয়ানের বাড়িঘর, স্কুল, মসজিদ এবং সরকারি ভবনও লক্ষ্যবস্তু হয়েছে।


উদ্ধারকর্মীরা জানান, পশ্চিম গাজা সিটির আল-ফারাবি স্কুলকে আশ্রয়কেন্দ্রে রূপান্তর করা হয়েছিল। সেখানে চালানো বিমান হামলায় শিশুসহ অন্তত আটজন নিহত হয়েছেন।


এর আগে শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) গাজা সিটির ১৫তলা সাউসি টাওয়ার ও শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) ১২তলা মুশতাহা টাওয়ার গুঁড়িয়ে দেয় দখলদার বাহিনী। এসব হামলায় বহু বাস্তুচ্যুত পরিবারের সদস্যরা হতাহত হন। সাউসি টাওয়ারের একটি পরিবার জানায়, ‘আমাদের আর কিছু অবশিষ্ট নেই। আমরা কিছুই নিতে পারিনি। আধা ঘণ্টার মধ্যেই ভবনটি মাটির সঙ্গে মিশে গিয়েছিল’।


গাজা সিটি দখল নিয়ে সেখানকার প্রায় দশ লাখ ফিলিস্তিনিকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করে পশ্চিম ও দক্ষিণে পাঠিয়ে দিতে ১৩ আগস্ট বৃহত্তর সমন্বিত হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। নেতানিয়াহুর এই কৌশল এরই মধ্যে আল-সাবরাসহ সিটির ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চলগুলো ধ্বংস ও কমপক্ষে এক লাখ ফিলিস্তিনিকে বাস্তুচ্যুত করেছে। সিটিটির ৪০ শতাংশেরও বেশি এ পর্যন্ত দখলের ঘোষণা দিয়েছে সেনারা।


তবে ফিলিস্তিনিরা জোর দিয়ে বলছেন, গাজার কোথাও কোনো নিরাপদ আশ্রয় নেই। রোববার গাজার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, ইসরায়েলের ‘মানবিক নিরাপদ অঞ্চল’ সম্পর্কিত দাবিতে বাসিন্দাদের বিশ্বাস করা উচিত নয়। খান ইউনুসের আল-মাওয়াসিকেও এমন এলাকা হিসেবে ঘোষণার পরও সেখানে বেশ কয়েকবার বোমা হামলা করেছে দখলদাররা।



মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ