Views Bangladesh Logo

গাজায় আরও ৪৭ ফিলিস্তিনি নিহত, ইসরায়েলি হামলা চলছে পশ্চিম তীরেও

বরুদ্ধ গাজাজুড়ে ইসরায়েলি বাহিনীর একের পর এক হামলায় অন্তত আরও ৪৭ জন নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) সহায়তা কেন্দ্রের সামনে ত্রাণ ও খাবারের কাছে জড়ো হওয়া ফিলিস্তিনিরাও।


ইসরায়েলি আগ্রাসন চলছে পূর্ব জেরুজালেমের বেথলেহেম ও রামাল্লাহসহ ইসরায়েল অধিকৃত পশ্চিম তীরের বিভিন্ন এলাকায়ও।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানায়, সোমবার (১৪ জুলাই) ভোর থেকে বিকেল পর্যন্ত ইসরায়েলি বাহিনীর বিমান হামলা ও স্থল অভিযানে গাজা শহর ও উত্তর গাজা উপত্যকার বিভিন্ন এলাকায় ২৭ জন নিহত হন। অন্য ২০ জন মারা যান মধ্য ও দক্ষিণ গাজায়।

ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাতে আল জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, মধ্য গাজার নুসাইরাত শরণার্থী শিবিরে একটি জলের ট্যাঙ্কারে ইসরায়েলি বিমান হামলায় একজন নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হন।

ব্যাপটিস্ট হাসপাতাল সূত্র জানায়, গাজা শহরের পূর্বে শুজাইয়া পাড়ায় হামলায় দুজন নিহত হয়েছেন। আল-শিফা হাসপাতাল জানায়, দক্ষিণ গাজা শহরের বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের কাছে নিহত হন একজন নারীসহ তিনজন। আল-সাফতাভিতে মারা যান আরও পাঁচজন ফিলিস্তিনি।

এদিকে গাজা শহরের পূর্বে আল-তুফার আল-শুরাফা চৌরাস্তার কাছে একটি বাড়ি লক্ষ্য করে হামলা চালায় ইসরায়েলি জেট বিমান। হামলা চলে দক্ষিণের সাবরার একটি বাড়িতেও, যেখানে একজন আহত হন। পাশের আল-সাবরার আবাসিক বাড়িতে বোমা হামলায় একজন মারা যান।

অন্যদিকে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরায়েল কমপক্ষে ৩৬০ জন চিকিৎসাকর্মীকে ছিটমহলের ভেতরে আটক করেছে এবং তারা ‘করুণ ও কঠোর পরিস্থিতিতে জীবনযাপন করছেন’।

বিবৃতিতে মন্ত্রণালয় বলেছে, আটককৃতদের মধ্যে চিকিৎসকরাও রয়েছেন। ফলে হাজার হাজার আহত ফিলিস্তিনি এবং রোগী চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। বন্দি চিকিৎসাকর্মীদের বিরুদ্ধে দখলদারিত্বের আচরণকে অপরাধী করে তোলা এবং তাদের মুক্তিতে চাপ প্রয়োগে জরুরি আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপেরও আহ্বান জানানো হয়েছে বিবৃতিতে।

মন্ত্রণালয়ের মতে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে গত ২১ মাসে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজাজুড়ে কমপক্ষে এক হাজার ৪০০ স্বাস্থ্যসেবা ও চিকিৎসাকর্মীকে হত্যা করেছে। সব মিলিয়ে ইসরায়েলি আগ্রাসনে এখন পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন ৫৮ হাজার ৭৩ জন, যার মধ্যে অধিকাংশই নারী ও শিশু। আহত হয়েছেন আরও অন্তত এক লাখ ৩৮ হাজার ৫০০ জনেরও বেশি। হতাহতদের ৫৬ শতাংশই নারী ও শিশু। ইসরায়েলি বাহিনী এই সময়ে গাজার ২০ হাজারেরও বেশি শিশুকে হত্যা করেছে।

ইসরায়েলি বাহিনী দাবি করেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় গাজায় ১০০ বারেরও বেশি হামলা চালিয়েছে তাদের যুদ্ধবিমান।

অন্যদিকে অধিকৃত পশ্চিম তীরে হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েলি সেনারা। সোমবার বেথলেহেমের দক্ষিণে আল-মারা গ্রামে একজন ফিলিস্তিনির বাড়ি ভেঙে দিয়েছে তারা। ফিলিস্তিনি প্ল্যাটফর্ম প্রকাশিত এবং আল জাজিরা যাচাইকৃত ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, ইসরায়েলি বুলডোজার চারতলা বাড়িটি ভেঙে ফেলছে।

স্কুলের উঠোন কার্যত একটি শোকসভায় পরিণত হয়েছে। ফিলিস্তিনিরা সেখানে একসঙ্গে বসে শোক জ্ঞাপন করছেন।

শুক্রবার (১১ জুলাই) নতুন করে পশ্চিম তীরে হামলা শুরু হলে রামাল্লাহ শহরের আল-মাজরা আল শারকিয়া এলাকায় ২০ বছরের সায়ফোল্লাহ মুসাল্লেত ও ২৩ বছরের মোহাম্মেদ আল-শালাবিকে হত্যা করে উপকূলের ইসরায়েলি বাসিন্দারা। আমেরিকার নাগরিক সায়ফোল্লাহর বাড়ি ফ্লোরিডায়। তাকে পিটিয়ে আর শালাবিকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ফিলিস্তিনিদের অভিযোগ, আহত অবস্থায় তাদের দু'জনকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে এমনকি ঘটনাস্থলে অ্যাম্বুলেন্সও ঢুকতে দেয়া হয়নি।

উপকূলের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, জুম্মার নামাজের পর তাদের ওপর অত্যাচারের প্রতিবাদে বিক্ষোভ দেখাতে রাস্তায় জমায়েত হন ফিলিস্তিনিদের একটি দল। ইসরায়েলের অভিযোগ, ওই বিক্ষোভকারীরা ইসরায়েলি নাগরিকদের ওপর পাথর ছুড়েছিল। এরপরেই ফিলিস্তিনিদের ঘরবাড়ি ভাঙচুর শুরু হয়, যা চলেছে সোমবার দিনভরও।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ