গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত আরও ৪৫ ফিলিস্তিনি
গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় নিহত হয়েছেন আরও ৪৫ জন ফিলিস্তিনি। আহত হয়েছেন অন্তত ৩৬২ জন। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণকেন্দ্রে খাদ্য ও ত্রাণ আনতে যাওয়া তিনজন ক্ষুধার্ত মানুষও।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাতে এএফপি ও আল জাজিরা জানিয়েছে, ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানের লাগাতার বোমাবর্ষণে মঙ্গলবার (৮ জুলাই) সারাদিনে ২৯ জন এবং বুধবার (৯ জুলাই) ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত আরও ১৬ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে জিএইচএফের ত্রাণকেন্দ্রের আশেপাশে ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে তিনজন নিহত ও ৪৬ জন আহত হন।
এছাড়া ড্রোন হামলায় দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসের কাছে আল-সানাবেল শরণার্থী শিবিরে নয়জন ও শাতি শরণার্থী শিবিরে আটজন এবং দেইর আল-বালাহতে একটি বাড়িতে বোমা হামলায় দুজন নিহত হন।
আল-সানাবেল শিবিরের বাসিন্দা ৩০ বছর বয়সী শাইমা আল-শায়ের এএফপিকে বলেন, ‘আমি আমার তাঁবুর সামনে আমার চার সন্তানের জন্য নাস্তা তৈরি করছিলাম-বিন ও কিছুটা শুকনো রুটি। এ সময় হঠাৎ বিস্ফোরণ ঘটে’।
তিনি আরও বলেন, ‘ধোঁয়া ও ধুলোয় এলাকা ভরে গেল। ধ্বংসাবশেষ ও পাথর চারদিক থেকে উড়ে এসে আমাদের তাঁবুতে আঘাত করে’।
শাইমা বলেন, ‘এতে পাশের তাঁবুর সামনে খেলারত চার শিশু আহত হয়েছে। আমি শহীদদের বহনকারী লোকজনকে দেখতে পেয়েছি। আামরা জানি না, কোথা থেকে এই মরদেহ আসছে। বোমা হামলা চলছেই’।
গাজার বেসামরিক প্রতিরক্ষা মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল জানান, গাজা উপত্যকাজুড়ে মঙ্গলবারের আরও ছয়টি হামলায় কমপক্ষে তিন শিশু ও দুই নারীসহ আরও ২৩ জন নিহত হন।
এ নিয়ে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে গত প্রায় ২১ মাসে ইসরায়েলি হামলায় গাজায় মোট নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৭ হাজার ৫৭৫ জনে। আহত হয়েছেন আরও এক লাখ ৩৬ হাজার ৮৭৯ জন। এর মধ্যে জিএইচএফ কেন্দ্রগুলো থেকে খাবার সংগ্রহ করার সময় কমপক্ষে ৭৫০ ফিলিস্তিনি নিহত ও আরও অন্তত চার হাজার ৯৬২ জন আহত হয়েছেন। হতাহতদের ৫৬ শতাংশই নারী ও শিশু। ইসরায়েলি বাহিনী এই সময়ে গাজার ১৫ হাজারেরও বেশি শিশুকে হত্যা করেছে।
গাজায় চলমান ইসরায়েলি অবরোধে জ্বালানি সংকট ভয়াবহ রূপ নিয়েছে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘ। সংস্থাটি বলছে, এই সংকট চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে এবং আরও মৃত্যু ও দুর্ভোগ তৈরি করবে অবরুদ্ধ উপত্যকাটিতে।
বিবিসি জানায়, গাজার বেশিরভাগ জনগণ একাধিকবার বাস্তুচ্যুত হয়েছে। নব্বই শতাংশের বেশি বাড়িঘর ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গেছে। স্বাস্থ্যসেবা, পানি, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। ঘাটতি রয়েছে খাদ্য, জ্বালানি, ওষুধ এবং আশ্রয়েরও।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজা নিয়ন্ত্রিত সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের আকস্মিক হামলার পর থেকেই গাজায় অভিযান চালিয়ে আসছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী (আইডিএফ)। হামলায় ইসরায়েলে অন্তত এক হাজার ২০০ জন নিহত হন এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়।
হামলার জবাবে শুরু হওয়া অভিযানে একপর্যায়ে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে ইসরায়েল। তবে ওই বিরতি ভেঙে ১৮ মার্চ থেকে আবারও গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করে আইডিএফ। দ্বিতীয় দফার এই আক্রমণে গত প্রায় চার মাসে প্রাণ হারিয়েছেন আরও সাত হাজার ৯ জন ফিলিস্তিনি এবং আহত হয়েছেন অন্তত ২৪ হাজার ৯৩৮ জন।
হামাসের হাতে জিম্মি হওয়া ২৫১ জনের মধ্যে এখনো অন্তত ৩৫ জন জীবিত রয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, সামরিক অভিযান চালিয়েই তারা জিম্মিদের উদ্ধার করতে চায়।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে