Views Bangladesh Logo

ইসরায়েলি হামলায় গাজায় নিহত আরও ১২৩ ফিলিস্তিনি, অনাহারে ৮ জন

গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় গত ২৪ ঘণ্টায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ১২৩ জন ফিলিস্তিনি, আহত হয়েছেন আরও ৪৩৭ জন। নিহতদের ২১ জন যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ কেন্দ্রগুলোতে খাবারের জন্য এসেছিলেন। অবরুদ্ধ উপত্যকাটিতে জোরপূর্বক অনাহার ও অপুষ্টিতে মারা গেছেন তিনজন শিশুসহ আরও আটজন।

চিকিৎসাকর্মীরা জানান, বুধবার (১৩ আগস্ট) ভোর থেকে বিকেল পর্যন্ত গাজা সিটি ও দেইর আল-বালাহে পাঁচজন শিশু ও ৩৩ জন ত্রাণপ্রার্থীসহ আরও ৫৫ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। এর মধ্যে সেনাদের গুলিতে দেইর আল-বালাহের দক্ষিণ-পূর্বে জিএইচএফের ত্রাণকেন্দ্রে নিহত হন খাবারের জন্য অপেক্ষারত চারজন, আহত হন আরও অনেকে। আরও ১৩ জন ত্রাণপ্রার্থী রাফাহর উত্তরে একটি সাহায্য কেন্দ্রের কাছে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে নিহত হন বলে জানায় নাসের মেডিকেল কমপ্লেক্স হাসপাতাল।

তারা জানান, উত্তর গাজা সিটির শেখ রাদওয়ান পাড়ার আল-থানি স্ট্রিটে বিমান হামলায় আরও তিনজন নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হন।

হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলি অভিযান শুরুর পর থেকে মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) রাত পর্যন্ত মোট প্রাণহানি দাঁড়িয়েছে ৬১ হাজার ৭২২ জন, আহত হয়েছেন অন্তত এক লাখ ৫৪ হাজার ৫২৫ জন। অন্যদিকে ‘দুর্ভিক্ষে’ মারা গেছেন ২৩৫ জন, যাদের ১০৬ জনই শিশু।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, ২৭ মে ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্র চালু করে জিএইচএফ। সে সময় থেকে খাদ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে এক হাজার ৮৫৯ জন। এর মধ্যে এক হাজার ৩৪৫ জন জিএইচএফ কেন্দ্রের কাছে এবং বাকি ৫১৪ জন নিহত হয়েছেন ত্রাণবহরের রুটে। এ সময়কালে আহত হন আরও ১৩ হাজার ৫৯৪ জন ত্রাণপ্রার্থী।

কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরা জানায়, গাজা সিটি পুরোপুরি দখলে ইসরায়েলি সামরিক অভিযান প্রস্তুতিমূলক পর্যায়ে রয়েছে। জেইতুন, সাবরা ও শেখ রাদওয়ান এলাকায় বিমান ও ড্রোন থেকে বোমা হামলা অব্যাহত রেখেছে প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। আর মধ্য গাজার দেইর আল-বালাহে ভয়াবহ হামলার খবর দিয়েছে তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদোলু ও ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা ওয়াফা।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় এক হাজার ২০০ ইসরায়েলি নিহত হন এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়। গাজায় এখনও প্রায় ৫০ জন বন্দী রয়েছে। তাদের মধ্যে কমপক্ষে ২০ জন জীবিত বলে মনে করা হচ্ছে। তাদেরকে উদ্ধারের কথা বলেই ইসরায়েল সামরিক অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে গাজাজুড়ে।

চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য মধ্যস্থতাকারী দেশের চাপে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিলেও ১৮ মার্চ থেকে ফের সামরিক অভিযান চালাচ্ছে আইডিএফ। দ্বিতীয় দফার এই অভিযানে এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ১০ হাজার ২০১ জন ফিলিস্তিনি এবং আহত হয়েছেন ৪২ হাজার ৬৫৬ জন।

জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মহলের যুদ্ধবিরতির আহ্বান উপেক্ষা করে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, হামাসকে পুরোপুরি দুর্বল ও জিম্মিদের মুক্ত করাই এই অভিযানের লক্ষ্য, যা অর্জন না হওয়া পর্যন্ত গাজায় অভিযান চলবে। এ লক্ষ্যে গাজা সিটির অন্তত দশ লাখ বাসিন্দা ও আশ্রিত ফিলিস্তিনিদের তাড়িয়ে শহরটিকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নিতে গত পাঁচদিন ধরে হামলা আরও তীব্র করেছে তার বাহিনী।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ