গাজা দখলে ইসরায়েলের সামরিক অভিযান শুরু, নিহত ৮১
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলায় একদিনে আরও অন্তত ৮১ জন নিহত ও ৩৫৬ জন হয়েছেন। তাদের ৩০ জন প্রাণ হারিয়েছেন গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণকেন্দ্রে মানবিক সহায়তা সংগ্রহে গিয়ে। এছাড়া অনাহার ও অপুষ্টিতে আরও দুজনের মৃত্যু হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) আল জাজিরা জানায়, বুধবার (২০ আগস্ট) ভোর থেকে গাজা সিটির নিয়ন্ত্রণ নিতে সামরিক অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েলি সেনারা। শহরটি গাজার সবচেয়ে বড় নগরকেন্দ্র, যেখানে এখনো প্রায় ১০ লাখ মানুষ ভয়াবহ পরিস্থিতিতে আটকে আছেন। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, এটি শহর দখলের প্রথম ধাপ।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, এ নিয়ে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর শুরু যুদ্ধে গত ২২ মাসে প্রাণহানি দাঁড়িয়েছে ৬২ হাজার ১৯২ জনে, আহত হয়েছেন অন্তত এক লাখ ৫৭ হাজার ১১৪ জন। এর মধ্যে ২৭ মে ইসরায়েল মার্কিন-ভিত্তিক জিএইচএফের মাধ্যমে নতুন সাহায্য বিতরণ ব্যবস্থা চালুর পর থেকে নিহত ত্রাণপ্রার্থী দুই হাজার ৩৬ জন, আহত হয়েছেন ১৫ হাজার ৬৪ জনেরও বেশি।
অন্যদিকে দুর্ভিক্ষপীড়িত ছিটমহলটিতে লাগাতার হামলা ও অবরোধে তীব্র খাদ্যসংকট দেখা দিয়েছে। এ পর্যন্ত অনাহারজনিত মৃত্যু ঘটেছে ২৭১ জনের, যাদের ১১২ জনই শিশু।
জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) সতর্ক করে জানিয়েছে, ‘এটি কেবল ক্ষুধা নয়, এটি অনাহার’। সংস্থাটির মতে, অপুষ্টি এখন গাজার শিশুদের জীবনের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আল জাজিরা জানায়, দক্ষিণ গাজার একটি ত্রাণকেন্দ্রে ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন ফিলিস্তিনি জাতীয় বাস্কেটবল দলের সাবেক তারকা মোহাম্মদ শালান। একই হামলায় আরও অন্তত ৩০ জন নিহত হন। এছাড়া দক্ষিণ গাজার এক তাঁবুতে আশ্রয় নেয়া বাস্তুচ্যুতদের ওপর হামলায় প্রাণ গেছে আরও তিনজনের।
ফিলিস্তিনিদের জন্য জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ) জানিয়েছে, গাজা সিটির প্রায় প্রতি তিনজন শিশুর মধ্যে একজন অপুষ্টিতে ভুগছে। আবারও দ্রুত যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।
অন্যদিকে ইসরায়েলি মানবাধিকার সংগঠন গিশা অভিযোগ করেছে, শুরু থেকেই ইসরায়েল গাজায় সাহায্য প্রবেশে বাধা দিয়ে অনাহারকে ‘যুদ্ধের অস্ত্র’ হিসেবে ব্যবহার করছে।
গাজার সিভিল ডিফেন্স জানিয়েছে, জ্বালানি ঘাটতিতে জরুরি উদ্ধার কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। সংস্থাটির ভাষায়, ‘আমাদের অনেক গাড়ি মিশনে যাওয়ার পথে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। জ্বালানি না থাকা বা যন্ত্রাংশের সংকটে উদ্ধার অভিযান ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে’।
চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরাও বলছেন, তারা ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে কাজ করছেন। এক চিকিৎসক বলেন, ‘আমরা বিপর্যয়কর অবস্থার মধ্যেও রোগীদের সেবা দেয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি’।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে