গাজায় হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েলি সেনারা, পশ্চিম তীরে বসতি স্থাপনকারীদের আগ্রাসন
অবরুদ্ধ গাজাজুড়ে ইসরায়েলি সেনাদের নৃশংস হামলা-হত্যার পাশাপাশি অধিকৃত পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলা অব্যাহত রেখেছে বসতি স্থাপনকারী ইসরায়েলিরা। গত ২৪ ঘণ্টায় গাজায় মারা গেছেন আরও অন্তত ৭৮ জন। আর পশ্চিম তীরের বসতি স্থাপনকারীরা সেনাদের সহায়তায় পূর্ব জেরুজালেম ও বেথেলহেমে ফিলিস্তিনিদের ওপর হত্যা, হামলা, জমি ও ফসল ধ্বংসসহ এবং হয়রানি তীব্রতর করেছে, যার লক্ষ্য, ফিলিস্তিনিদের আরও জমি ও সম্পদ দখল।
ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা ওয়াফার বরাতে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানায়, সোমবার (১৪ জুলাই) দিনভর গাজা শহরসহ দক্ষিণাঞ্চলীয় রাফা, খান ইউনিস, বুরেইজে একের পর এক বিমান, ড্রোন ও বোমা হামলা চালায় ইসরায়েলি সেনারা। তাদের স্থল অভিযানে নির্বিচার গুলিতে দক্ষিণ গাজার রাফায় ত্রাণকেন্দ্রের কাছে অন্তত পাঁচজন নিহত ও অনেকে আহত হন। ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ওই ত্রাণকেন্দ্রে খাবার নিতে লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন হতাহতরা।
ওয়াফা জানায়, এ নিয়ে ২৭ মের পর থেকে বিতর্কিত ত্রাণকেন্দ্রগুলোতে ত্রাণ নিতে গিয়ে ইসরায়েলি সেনাদের হামলায় নিহত হয়েছেন অন্তত ৮৩৮ জন ফিলিস্তিনি। আহত হয়েছেন আরও পাঁচ হাজার ৫০০ জনেরও বেশি। তবে গত ছয় সপ্তাহে কমপক্ষে ৮৭৫ জন নিহতের ঘটনা রেকর্ড করেছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়। নিহতদের ৬৭৪ জিএইচএফের ত্রাণকেন্দ্রের আশপাশের এলাকায় এবং বাকি ২০১ জন ত্রাণ সংগ্রহে যাওয়ার পথে মারা গেছেন।
আরব নিউজ জানায়, সোমবার নিহত অন্য ৭৩ জনের ৫২ জনই কেন্দ্রীয় গাজা ও দক্ষিণাঞ্চলের বাসিন্দা।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, দক্ষিণ গাজার খান ইউনুস শহরে বাস্তুচ্যুতদের এক শিবিরে বিমান হামলায় নয়জন নিহত ও বহু মানুষ আহত হন। কেন্দ্রীয় গাজার বুরেইজ শরণার্থী শিবিরে এক বাণিজ্যিক ভবনে হামলায় নিহত হন আরও চারজন।
উত্তর গাজা ও গাজা শহরেও ফের হামলা জোরদার করেছে ইসরায়েলি সেনারা। শহরের তুফাহ ও শুজাইয়ায় ব্যাপক বিমান হামলায় বহু বাসাবাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন আল জাজিরার স্থানীয় সংবাদদাতা তারেক আবু আযম। এদিকে শহরের অভ্যন্তরে অ্যামবুশে একটি ট্যাংকে রকেট হামলা ও পরে ছোট অস্ত্র দিয়ে গুলি চালানো হয়, যেখানে ইসরায়েলি সেনাদের হতাহতের ঘটনা ঘটে। পরে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ও গণমাধ্যম জানায়, এতে তিনজন ইসরায়েলি সেনা নিহত হন।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরুর পর থেকে গত ২১ মাসে ইসরায়েলি হামলায় গাজায় কমপক্ষে ৫৮ হাজার ৩৮৬ জন নিহত এবং এক লাখ ৩৯ হাজার ৭৭ জন আহত হয়েছেন। হতাহতদের ৫৬ শতাংশই নারী ও শিশু। ইসরায়েলি বাহিনী এ সময় গাজার ২০ হাজারেরও বেশি শিশুকে হত্যা করেছে।
অন্যদিকে জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিস জানিয়েছে, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে পূর্ব জেরুজালেমসহ অধিকৃত পশ্চিম তীরে বসতি স্থাপনকারী এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের হাতে ফিলিস্তিনিদের হত্যা এবং তাদের ওপর হামলা বেড়ে গেছে। সোমবার সকালে বেথলেহেমের বুরকা গ্রামে ফিলিস্তিনিদের জমি ও যানবাহনে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে তারা। প্রায় একই সময়ে বসতি স্থাপনকারীরা শহরের দক্ষিণ-পূর্বের আল-মানিয়া গ্রামে শত শত জলপাই গাছ উপড়ে ফেলে এবং ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ একটি চারতলা আবাসিক ভবন ভেঙে দেয়।
আল-মানিয়া গ্রাম পরিষদের প্রধান জায়েদ কাওয়াজবা ওয়াফা সংবাদ সংস্থাকে জানিয়েছেন, বসতি স্থাপনকারীদের একটি দল গ্রামের কেন্দ্রস্থল আল-কার্নে হামলা চালিয়ে চারটি তাঁবু স্থাপন করে এবং আল-মোতাওয়ার এবং জাবারিন বংশের পরিবারের প্রায় দেড় হাজার জলপাই গাছ উপড়ে ফেলে।
অধিকৃত পশ্চিম তীরে ত্রিশ লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনি কঠোর ইসরায়েলি সামরিক শাসনের অধীনে বাস করেন। অসংখ্য ইসরায়েলি চেকপয়েন্টে দ্বারা একে অন্যের থেকে বিচ্ছিন্ন সীমিত এলাকায় শাসন করে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ। ইসরায়েল এখন পর্যন্ত পশ্চিম তীরজুড়ে ১০০টিরও বেশি বসতি নির্মাণ করেছে, যেখানে প্রায় পাঁচ লাখ বসতি স্থাপনকারী ইসরায়েলি ফিলিস্তিনি জমিতে অবৈধভাবে বসবাস করে।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে