গাজায় ইসরায়েলি হামলায় প্রাণহানি ছাড়াল ৬৬০০০, বাস্তুচ্যুত সাড়ে সাত লাখ ফিলিস্তিনি
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৭৭ জন নিহত এবং অন্তত ৩৭৯ জন আহত হয়েছেন। আগের ইসরায়েলি হামলার ধ্বংসস্তূপ থেকে আরও দুজনের মরদেহ উদ্ধারসহ আগে নিহত আরও ৩০০ জনের পরিচয় নিশ্চিত হয়ে হতাহতের তালিকাভূক্ত করার কথাও জানিয়েছে অবরুদ্ধ উপত্যকাটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
এদিকে গাজা সিটি দখলে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) ব্যাপক অভিযানে এখন পর্যন্ত সাত লাখ ৫০ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি ঘরবাড়ি ছেড়ে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। উপত্যকার সবচেয়ে বড় নগর কেন্দ্রটির ১০ লাখ বাসিন্দা ও আশ্রিত ফিলিস্তিনিকে দক্ষিণে তাড়িয়ে দিতে ১১ আগস্ট থেকে সমন্বিত এই অভিযান চালাচ্ছে আইডিএফ।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাতে কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরা জানায়, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরুর পর থেকে দুই বছরের কাছাকাছি সময়ে ইসরায়েলি হামলায় প্রাণহানি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৬ হাজার ৫ জনে, আহত হয়েছেন অন্তত এক লাখ ৬৮ হাজার ১৬২ জন। এছাড়া ইসরায়েলি-সৃষ্ট দুর্ভিক্ষ ও অপুষ্টিতে মারা গেছেন ৪৪০ জন, যাদের ১৪৭ জনই শিশু। এর মধ্যে জাতিসংঘ-সমর্থিত ক্ষুধা পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা (আইপিসি) গত মাসে উত্তর গাজাকে দুর্ভিক্ষ অঞ্চল ঘোষণা করার পর থেকেই মারা গেছেন ৩২ জন শিশুসহ ১৬৪ জন।
তবে মন্ত্রণালয়ের দাবি, প্রকৃত হতাহতের সংখ্যা আরও বেশি। কারণ, ধ্বংসস্তূপের নিচে অনেক মরদেহ চাপা পড়ে আছে; কিন্তু পর্যাপ্ত জনবল ও সরঞ্জাম না থাকায় উদ্ধারকাজ ব্যাহত হচ্ছে।
তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদোলু জানায়, শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা থেকে শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা পর্যন্ত নিহতদের মধ্যে কেবল গাজা সিটিতেই প্রাণ হারিয়েছেন ৪৮ জন। ইসরায়েল ও মার্কিন-সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) মানবিক সহায়তা নিতে গিয়ে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর গুলিতে প্রাণ হারান অন্য ১৭ জন ত্রাণপ্রার্থী এবং আহত হন অন্তত ৮৯ জন। এ নিয়ে ২৭ মে বিতর্কিত জিএইচএফের কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকে নিহত সাহায্যপ্রার্থী দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৫৬০ জনে, আহত হয়েছেন আরও ১৮ হাজার ৭০৩ জন।
এদিকে শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) দ্য টাইমস অব ইসরাইল জানায়, অভিযানের আগে গাজা নগরীতে প্রায় দশ লাখ ফিলিস্তিনি বসবাস করলেও এখন তাদের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে আড়াই লাখেরও কম। বাকি সাড়ে সাত লাখ মানুষই সরে গেছেন।
ইসরায়েল সাধারণ মানুষকে দক্ষিণ গাজার আল-মাওয়াসি এলাকায় নির্ধারিত ‘মানবিক অঞ্চলে’ সরে যেতে নির্দেশ দিয়েছে। গত সপ্তাহে আইডিএফ শহরের ভেতরে আরও গভীরে প্রবেশ করায় গাজা থেকে মানুষের সরে যাওয়ার হারও বেড়েছে।
আইডিএফের আরবি মুখপাত্র কর্নেল আভিখাই আদ্রেয়ি জানান, ‘গাজা শহর প্রায় ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। বাসিন্দারা বুঝতে পারছেন, সামরিক অভিযান আরও তীব্র হচ্ছে এবং দক্ষিণে চলে যাওয়াই নিরাপদ’।
তিনি বলেন, ‘আমরা সবাইকে আহ্বান জানাই, দ্রুত আল-মাওয়াসির মানবিক এলাকায় চলে যেতে এবং সেই সাত লাখ ৫০ হাজার মানুষের সঙ্গে যোগ দিতে, যারা নিজেদের নিরাপত্তার জন্য গাজা ছেড়েছেন’।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় এক হাজার ২০০ ইসরায়েলি নিহত হন এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়। গাজায় এখনো ৪৮ জন বন্দি রয়েছে। তাদের মধ্যে কমপক্ষে ২০ জন জীবিত বলে মনে করা হচ্ছে। তাদের উদ্ধারের কথা বলেই ইসরায়েল সামরিক অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে গাজাজুড়ে।
চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য মধ্যস্থতাকারী দেশের চাপে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিলেও ১৮ মার্চ থেকে ফের সামরিক অভিযান চালাচ্ছে ইসরায়েল। দ্বিতীয় দফার এই অভিযানে এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ১৩ হাজার ৬০ জন ফিলিস্তিনি এবং আহত হয়েছেন ৫৫ হাজার ৭৪২ জন।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে