Views Bangladesh Logo

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত আরও ১৩০ ফিলিস্তিনি, দুর্ভিক্ষে ১৮ জন

গাজাজুড়ে ইসরায়েলি বাহিনীর একের পর এক হামলায় আরও অন্তত ১৩০ জন ফিলিস্তিনি নিহত ও ৪৯৫ জন আহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ৭৩ জনই যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণকেন্দ্রগুলোতে খাবারের জন্য এসেছিলেন। অন্যদিকে অবরুদ্ধ উপত্যকাটিতে দুর্ভিক্ষে মারা গেছেন আরও ১৮ জন।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আকস্মিক হামলার পর থেকেই গাজায় অভিযান চালাচ্ছে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, গত ২১ মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা এই যুদ্ধে এ পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ৫৮ হাজার ৮৯৫ জন আর আহত হয়েছেন ১ লাখ ৪০ হাজার ৯৮০ জন।

মন্ত্রণালয় আরও জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ১৮ জনসহ ইসরায়েলি অবরোধের পর থেকে গাজায় কমপক্ষে ৮৬ জন ক্ষুধা ও অপুষ্টিতে মারা গেছেন, যাদের ৭৬ জনই শিশু এবং ১০ জন প্রাপ্তবয়স্ক।

টেলিগ্রামে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, ছিটমহলটিতে ক্ষুধা ও অপুষ্টির মাত্রা ‘নীরব গণহত্যার’ দিকে পরিচালিত করছে। এজন্য তারা ইসরায়েলি দখলদারিত্ব ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে দায়ী করছে। খাদ্য ও ওষুধ প্রবেশের অনুমতি দিতে অবিলম্বে গাজার ক্রসিংগুলো খুলে দেয়ারও দাবি জানিয়েছে মন্ত্রণালয়।

কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরা জানায়, ইসরায়েলি বিমান ও ড্রোন হামলা এবং স্থল অভিযানে শনিবার (১৮ জুলাই) রাতভর ৪৬ জন নিহত ও ২৯৫ জন আহত এবং রোববার (১৯ জুলাই) ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আরও ৮৪ জন নিহত ও ২০০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হন। তাদের মূল লক্ষ্যবস্তুই এখন জিএইচএফের খোলা রাখা চারটি ত্রাণকেন্দ্র এবং বাস্তুচ্যুত আশ্রিত ফিলিস্তিনিদের তাঁবুগুলো।

উত্তর গাজার জিকিম ক্রসিংয়ে এ ধরনের একটি খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রের কাছে জড়ো হওয়া ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিবর্ষণে কমপক্ষে ৩০ জন নিহত ও অন্তত ২০ জন আহত হন। নিহতদের মরদেহ ও আহতদের নেয়া হয়েছে আল-শিফা হাসপাতালে।

আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যারা জিকিমে সাহায্যের জন্য গিয়েছিলেন, তাদের মধ্যে কেবল একজনই এক ব্যাগ আটা নিয়ে ফিরে এসেছিলেন। আরও প্রায় ৩০ জনকে পশুর গাড়িতে করে ফিরিয়ে আনা হয়েছিল হয় মৃত অথবা গুরুতর আহত।

উত্তর গাজার বেইত লাহিয়ায় অন্য একটি সাহায্য কেন্দ্রের কাছে ইসরায়েলি গুলিতে ১৯ জন নিহত এবং ৫৫ জন আহত হন।দক্ষিণ গাজার রাফাহ শহরের উত্তরে একটি সাহায্য কেন্দ্রের কাছে পাঁচজন ও মধ্য গাজার দেইর এল-বালাহ প্রদেশের পশ্চিমাঞ্চলে বাকি ১৯ জন ফিলিস্তিনি নিহত হন।

দেইর এল-বালাহ থেকে আল জাজিরা জানায়, বর্তমানে জিএইচএফের চারটি মাত্র কেন্দ্রে খাদ্য সহায়তা বিতরণ করা হচ্ছে। তবে, যারা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় প্যাকেজগুলো নেয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন, তাদের গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে। ফলে ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রগুলোতে ত্রাণপ্রার্থীদের ওপর ইসরায়েলি হামলা সাধারণ ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ হিসাবে, ২৭ মে থেকে গাজায় খাদ্য বিতরণের অপেক্ষায় থাকা ৯৮৬ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনির মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তাদের বেশিরভাগই জিএইচএফ সাইটের আশেপাশে নিহত হয়েছেন।

ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ-এর যোগাযোগ পরিচালক জুলিয়েট তোমা গত সপ্তাহে বলেছিলেন, মিশর এবং জর্ডান সীমান্তে তাদের ‘ছয় হাজার ট্রাক’ অপেক্ষা করছে। তারা জোর দিয়ে বলেছে, ফিলিস্তিনিদের কাছে খাদ্য সরবরাহের অনুমতি না দেয়া হলে খাদ্য শিগগিরই শেষ হয়ে যাবে।

সংস্থাটি সতর্ক করে দিয়েছে, ইসরায়েল গাজায় ‘বেসামরিক নাগরিকদের অনাহারে রাখছে’ যার মধ্যে দশ লাখ শিশুও রয়েছে, যারা ছিটমহলে গুরুত্বপূর্ণ ত্রাণ সরবরাহে অব্যাহত অবরোধের মধ্যে রয়েছে। ইসরায়েলকে অবরোধ তুলে নেয়া এবং সংস্থাটিকে গাজায় খাদ্য ও ওষুধ আনার অনুমতি দেয়ারও আহ্বান জানিয়েছে।

তবে, ইসরায়েলের অবরোধ ভাঙার লক্ষ্যে সাহায্য জাহাজ ‘হান্ডালা’ দক্ষিণ ইতালির গ্যালিপোলি বন্দর থেকে গাজার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেছে। ‘গাজার শিশুদের জন্য...মিশন’ নামক এর আয়োজক ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন। ১৯৬৮ সালে পুনর্নির্মিত নরওয়েজিয়ান ফিশিং ট্রলারটিতে ফিলিস্তিনি শিশুদের জন্য চিকিৎসা সরবরাহ, খাদ্য এবং সাহায্য সরঞ্জাম রয়েছে।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় এক হাজার ২০০ ইসরায়েলি নিহত হন এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়। এর জবাবে ইসরায়েল সামরিক অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে গাজার বিভিন্ন এলাকায়।

চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য মধ্যস্থতাকারী দেশের চাপে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিলেও, ১৮ মার্চ থেকে পুনরায় সামরিক অভিযান শুরু করে আইডিএফ। দ্বিতীয় দফার এই অভিযানে এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন আট হাজার ৬৮ জন ফিলিস্তিনি এবং আহত হয়েছেন ২৮ হাজার ৯৩৯ জন।

এদিকে, ধারণা করা হচ্ছে, হামাসের হাতে আটক থাকা ২৫১ জন জিম্মির মধ্যে এখনো অন্তত ৩৫ জন জীবিত আছেন। আইডিএফ জানিয়েছে, তাদের উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত থাকবে।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ