গাজা সিটি দখলে ইসরায়েলি হামলা জোরদার, নিহত এখন ৬১৮২৭ জন
গাজা উপত্যকার উত্তর ও দক্ষিণের ঘনবসতিপূর্ণ আবাসিক এলাকায় বিমান-ড্রোন ও বোমা হামলাসহ স্থল বাহিনীর সামরিক অভিযান আরও তীব্র করেছে ইসরায়েল। অবরুদ্ধ উপত্যকাটির সবচেয়ে বড় শহর গাজা সিটি পুরোপুরি দখলে নেয়ার চেষ্টাও চালাচ্ছে দেশটির প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)।
ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক স্থানান্তরে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ঘোষণার পর থেকে সপ্তাহজুড়ে আইডিএফের এই মরিয়া হামলা নগরীটিতে আশ্রিতসহ ১০ লাখ বাসিন্দার জীবন ঝুঁকিতে পড়েছে। বাড়িঘর ছেড়ে অসংখ্য গাজাবাসী পালিয়ে গেলেও অবস্থান করছেন অনেকে, যারা বিশ্বাস করেন, চলে গেলেও তাদের লক্ষ্যবস্তু করা হবে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাতে কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরা জানিয়েছে, শুক্রবার (১৫ আগস্ট) গাজায় ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ৪৪ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৩৬৯ জন আহত হন। এ নিয়ে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর শুরু যুদ্ধে প্রাণহানি দাঁড়িয়েছে ৬১ হাজার ৮২৭ জনে, আহত হয়েছেন অন্তত এক লাখ ৫৫ হাজার ২৭৫ জন। অন্যদিকে অন্তত আরও একজন শিশু অনাহারে মারা গেছে। ফলে দুর্ভিক্ষপীড়িত ছিটমহলটিতে মোট অনাহারজনিত মৃত্যু দাঁড়িয়েছে ২৪০ জনে, যাদের ১০৭ জনই শিশু।
পূর্বের জায়তুন ও সাবরাসহ গাজা সিটির চারটি মূল এলাকায় রাত-দিন বিমান থেকে বোমা ও কামানের গোলাবর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। তিন দিনে জায়তুনের ৩০০টিরও বেশি বাড়ি ধ্বংস করেছে ইসরাইলি সেনারা। স্থানীয়রা বলছেন, ঘরবাড়ি, স্কুল, সরকারি সুযোগ-সুবিধা, সরকারি ভবনসহ সবকিছু ধ্বংস করা হচ্ছে, বিস্ফোরণও থামছে না। জায়তুনকে মানচিত্র থেকে মুছে ফেলা হচ্ছে। এটি দখল পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই চালানো হচ্ছে বলেই মনে করছেন গাজা সিটিবাসী।
আল জাজিরাও জানায়, গাজা সিটি ছাড়াও রাফাহ, খান ইউনিস, জাবালিয়া, বেইত লাহিয়া, বেইত হানুন ও দেইর এল-বালাহেও হামলায় ‘ভারী আর্টিলারি ড্রোন ও ফাইটার জেট’ব্যবহার করছে ইসরায়েলি সেনারা। বেসামরিক জীবন ধ্বংসে ‘খুনি খেলায়’ মেতেছে ইসরায়েল। এ অভিযান গাজা সিটিতে নাগরিকদের কখনো ফিরিয়ে নেয়া যাবে না, তা নিশ্চিতে সম্পূর্ণ পরিকল্পিত।
আল-শিফা হাসপাতাল জানায়, খাবারের খোঁজে এসে গাজার মধ্যাঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) দুটি ত্রাণকেন্দ্রে আটজন, উত্তর-পশ্চিমের জিকিমে একটিতে ছয়জন এবং রাফার কাছের একটিতে দুজন ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে নিহত হন। এসব হামলায় আহত হন আরও শতাধিক ত্রাণপ্রার্থী।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, ২৭ মে থেকে খাদ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে মারা গেছেন এক হাজার ৮৯৭ জন এবং আহত হন অন্তত ১৩ হাজার ৯৬৩ জন ত্রাণপ্রার্থী। তাদের এক হাজার ৩৮৩ জন জিএইচএফ কেন্দ্রের কাছে এবং বাকি ৫১৪ জন নিহত হয়েছেন ত্রাণবহরের রুটে। যদিও জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিস গাজায় সাহায্য চাইতে গিয়ে কমপক্ষে এক হাজার ৭৬০ জনের মৃত্যুর পরিসংখ্যান দিয়েছে।
তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদোলু জানায়, ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান মধ্য গাজার বুরেইজ শরণার্থী শিবিরের একটি বাড়িতে বোমা হামলা চালালে চার শিশুসহ একই পরিবারের ছয়জন নিহত হন। দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসের কাছে আল-মাওয়াসির আশ্রয় তাঁবুতে বোমা হামলায় নিহত হন অন্য এক দম্পতি। ড্রোন হামলায় দেইর এল-বালাহের আল-আকসা হাসপাতালে দুজন ও খান ইউনিসের আল শিফা হাসপাতালে একজন নিহত হন।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে