ইসরায়েলি হামলায় গাজায় আরও ৭৯ ফিলিস্তিনি নিহত

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকাজুড়ে ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৭৯ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন প্রায় ৪০০ জন। এর মধ্যে ৩৩ জনই মারা যান যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল সমর্থিত বিতর্কিত গাজা হিউম্যানেটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) এর ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রগুলোর আশেপাশে ত্রাণ ও খাবার নিতে গিয়ে।

বুধবার (২৫ জুন) ভোর থেকে দিনভর এসব হামলায় প্রাণহানি আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

অন্যদিকে অধিকৃত পশ্চিম তীরের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রামাল্লার কাফর মালেক এলাকায় ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের হামলায় অন্তত তিনজন ফিলিস্তিনি নিহত ও আহত হয়েছেন আরও কয়েকজন।

এ নিয়ে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইসরায়েলের হামলায় গাজায় নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৬ হাজার ১৫৬ নিহত হয়েছেন। গত ২০ মাসে আহত হয়েছেন আরও অন্তত এক লাখ ৩২ হাজার ৬৩৯ জন। হতাহতদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। ইসরায়েলি বাহিনী এই সময়ে গাজার ১৫ হাজারের বেশি শিশুকে হত্যা করেছে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, অনেকেই এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে এবং রাস্তায় আটকা পড়ে আছেন। উদ্ধারকর্মীরা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারছেন না।

মন্ত্রণালয় বলছে, এ পর্যন্ত নিহতদের মধ্যে ১৮ মার্চ যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের পর থেকেই ইসরায়েলি হামলায় মারা গেছেন পাঁচ হাজার ৮৩৮ জন নিহত ও ২০ হাজার ২০৭ জন আহত হয়েছেন। অথচ জানুয়ারিতে যুদ্ধবিরতি ও বন্দি বিনিময় চুক্তি কার্যকর হয়েছিল, যা ওই হামলায় ভেঙে যায়।

অন্যদিকে গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে স্থল অভিযান ও সীমান্তবর্তী অঞ্চলে সামগ্রিক সামরিক অভিযানে নিহত ইসরায়েলি সৈন্যের সংখ্যা ৪৪০ জনে দাঁড়িয়েছে। হামাসের হামলায় মারা গেছেন আরও কিছু বেসামরিক নাগরিকও।

স্বাস্থ্যকর্মীদের বরাতে ফিলিস্তিনের সরকারি বার্তা সংস্থা ওয়াফা জানিয়েছে, বুধবার ভোরে মধ্য গাজার নেটজারিম এলাকায় ত্রাণ সংগ্রহের চেষ্টা করার সময় ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে নিহত হন ৩৩ জন।

ফিলিস্তিনের বেসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থার মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল বলেন, মধ্য ও উত্তর গাজায়ও বিমান হামলা চালিয়ে কমপক্ষে ১৪ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরায়েল।

বাসাল বলেন, কেন্দ্রীয় নুসাইরাত শরণার্থী শিবিরের একটি বাড়িতে ভোরে ইসরায়েলি হামলায় এক শিশুসহ ছয়জন নিহত হয়েছেন। দেইর আল-বালাহ এবং গাজা শহরের পূর্বে দুটি পৃথক হামলায় আরো ১০ জন নিহত হয়েছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদোলু জানিয়েছে, পূর্ব গাজা শহরের শেজাইয়া এলাকায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় ১২ জন নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।

একটি মেডিকেল সূত্র জানিয়েছে, দক্ষিণ গাজার পূর্ব খান ইউনিসের আবাসান শহরে ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধারকারী দল এক তরুণ ফিলিস্তিনির মরদেহ উদ্ধার করেছে।

উত্তর গাজার জাবালিয়া আল-বালাদে ওমারি মসজিদের কাছে মানুষের সমাবেশ লক্ষ্য করে ইসরায়েলি বিমান হামলায় অন্য দুজন ফিলিস্তিনি নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।

মন্ত্রণালয় জানায়, ত্রাণ নিতে গিয়ে গত ২৭ মে থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলি নয়তো গোলাবর্ষণে অন্তত ৫৪৯ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন চার হাজার ১৯৯ জন। ইসরায়েলি আগ্রাসনে ২০ লাখের বেশি বাসিন্দা তাদের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। বর্বর এ বাহিনীর নির্বিচার হামলা গাজাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের নেতৃত্বে আরও বেশ কয়েকটি ফিলিস্তিনি জঙ্গি গোষ্ঠীর যোদ্ধারা গাজা উপত্যকা থেকে ইসরায়েলের দখলকৃত দক্ষিণ গাজা অঞ্চলে ঢুকে সমন্বিত সশস্ত্র হামলা চালিয়ে এক হাজার ১৯৫ জনকে ২৫১ জনকে জিম্মি করার পর এই যুদ্ধ শুরু হয়। নিহতদের মধ্যে ছিলেন ৩৬ জন শিশুসহ ৭৩৬ জন বেসামরিক ইসরায়েলি, ৩৭৯ জন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য এবং ৭৯ জন বিদেশি।

গাজার সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো এখনো ৫৩ জনকে জিম্মি করে রেখেছে বলে অভিযোগ ইসরায়েলের। তাদের মধ্যে আইডিএফের নিশ্চিত করা কমপক্ষে ৩৩ জনের মৃতদেহ ও ২০ জন জীবিত বলে ধারণা করা হচ্ছে। আরও তিনজনের সুস্থতা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ইসরায়েলি কর্মকর্তারা।

গত বছরের নভেম্বর মাসে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও তার সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্তের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিটি)। গাজায় নির্বিচারে হামলায় আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিসি) গণহত্যার অভিযোগেরও মুখোমুখি হয়েছে ইসরায়েল।