গাজা সিটির ৪০ শতাংশ দখল ইসরায়েলের, আরও ৬৭ জনকে হত্যা
ফিলিস্তিনি উপত্যকা গাজার প্রধান নগরকেন্দ্র গাজা সিটি দখলে উত্তরাঞ্চলে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি পরিবারগুলোর আবাসিক ভবনে আবারও বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি সেনারা। জোরপূর্বক উচ্ছেদের নতুন হুমকির পর শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) ভোর থেকে শুরু হওয়া এ হামলা দিনভর অব্যাহত থাকে। আশ্রিত পরিবারগুলো পালাতে হিমশিম খাচ্ছে।
কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরা জানায়, গাজা সিটি দখল এবং সেখানকার প্রায় দশ লাখ ফিলিস্তিনিকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করে পশ্চিম ও দক্ষিণে পাঠিয়ে দিতে গাজা শহরের ধ্বংসযজ্ঞ আরও তীব্র করেছে ইসরায়েল। সিটির ৪০ শতাংশ এ পর্যন্ত দখলের ঘোষণা দিয়েছে সেনারা। অভিযান অব্যাহত রাখাসহ একের পর এক আবাসিক টাওয়ার ধ্বংস করে চলেছে তারা। মুশতাহা টাওয়ারের পর ১৫ তলা আল-সুসি আবাসিক টাওয়ারও উড়িয়ে দেয়া হয়েছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাতে তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদোলু জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় গাজায় নিহত হয়েছেন আরও ৬৭ জন ফিলিস্তিনি, যাদের বেশিরভাগই ৪৫ জন মারা গেছেন গাজা সিটিতে। আহত হয়েছেন অন্তত ২৮১ জন। এছাড়া চাপিয়ে দেয়া দুর্ভিক্ষে মারা গেছেন আরও ছয়জন।
এ নিয়ে গত ২২ মাসে ইসরায়েলি হামলায় প্রাণহানি দাঁড়িয়েছে ৬৪ হাজার ৩৬৮ জনে, আহত হয়েছেন অন্তত এক লাখ ৬২ হাজার ৩৬৭ জন। অন্যদিকে জাতিসংঘ ঘোষিত পূর্ণমাত্রার দুর্ভিক্ষপীড়িত উপত্যকাটিতে ইসরায়েলসৃষ্ট অনাহারজনিত মৃত্যু ঘটেছে ৩৮২ জনের, যাদের ১৩৫ জনই শিশু।
‘হতাহত অনেকে এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে এবং রাস্তায় আটকা পড়ে আছেন। ফলে উদ্ধারকারীরা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারছেন না। তাই প্রকৃত হতাহত আরও বেশি’ হবে বলেও জানিয়েছে মন্ত্রণালয়।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় এক হাজার ২০০ ইসরায়েলি নিহত হন এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়। গাজায় এখনো প্রায় ৫০ জন বন্দি রয়েছে। তাদের মধ্যে কমপক্ষে ২০ জন জীবিত বলে মনে করা হচ্ছে। তাদের উদ্ধারের কথা বলেই ইসরায়েল সামরিক অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে গাজাজুড়ে।
চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য মধ্যস্থতাকারী দেশের চাপে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিলেও ১৮ মার্চ থেকে ফের সামরিক অভিযান চালাচ্ছে ইসরায়েল। দ্বিতীয় দফার এই অভিযানে এখন পর্যন্ত ১১ হাজার ৭৬৮ জন নিহত এবং ৪৯ হাজার ৯৬৪ জন আহত হয়েছেন।
গত বছরের নভেম্বর মাসে গাজায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিটি)। পাশাপাশি গাজা অভিযানের দায়েও আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিসি) গণহত্যার মামলার মুখোমুখি ইসরায়েল।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে